কলকাতা: করোনা মহামারির পর দীর্ঘ আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশিদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে গেদে-দর্শনা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। দীর্ঘদিন ধরে এই আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে এবার থেকে বাংলাদেশিরাও ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন।
করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের ১৪ মার্চ থেকেই গেদে-দর্শনা স্থলবন্দরে সব ধরনের ভিসা বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারত সরকারের তরফে সীমান্তে একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়, সেখানেই এই সীমান্ত পুনরায় চালু করার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর পরই গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বাংলাদেশিদের জন্য খুলে দেওয়া হয় চেকপোস্ট।
এ ব্যাপারে সোমবার (৬ মার্চ) গেদে স্থলবন্দরের কর্মকর্তা অজয় নারায়ণ রায় জানান, ভারত সরকারের তরফে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে একটা নোটিশ এসেছে। এটা সরকারিভাবে আমরা পাইনি, কেবল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের ১৪ মার্চ এই সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছিল সেটিকে পুনরায় খুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার সীমান্ত চালু করলে আমার প্রস্তুত আছি। আমাদের তরফে সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
মাঝে সিনিয়র সিটিজেন, রোগী ও বিজনেস ভিসা চালু করা হলেও ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময় ভারতীয়রা যাতায়াত করতে পারলেও বাংলাদেশিরা ভারতে প্রবেশ করতে পারেনি। এ কারণে দুই দেশের নাগরিকদের পারাপারের জন্য চাপ পড়তো ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দরে।
গেদে-দর্শনা স্থলবন্দরে বিগত তিন বছর ধরে ভিসার অনুমতি বন্ধ থাকার কারণে সীমান্তবর্তী এলাকায় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সীমান্তবর্তী এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র অফিস, রেলের অধীনস্থ কুলি, হকার ও খাবারের হোটেল। এছাড়াও রয়েছেন ভ্যান-রিকশাচালকরা।
স্থলবন্দরটি খুলে দেওয়ার ফলে খুশি বাংলাদেশি পর্যটক, মানি এক্সচেঞ্জ ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই স্থলবন্দরের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা।
লাইসেন্সধারী রেলের কুলি সনজিৎ রায় বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে রেলের মালামাল ও যাত্রীদের মালামাল বহন করা। গত তিন বছর বন্ধ থাকার কারণে সেভাবে রোজগার নেই। এখন এই রুট চালু হওয়ায় আশা করছি ফের রোজগার হবে।
গেদে-দর্শনা দিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় মানুষদের ভারতে বিশেষ করে কলকাতা ভ্রমণ অত্যন্ত সহজ এবং খরচও কম। মহিন আব্রাহাম নামে এক বাংলাদেশি যাত্রী জানিয়েছেন, এই রুটে ভিসা বন্ধ থাকার কারণে আমাদের বিমান বা অন্য পথে যেতে হতো। সেক্ষেত্রে খরচটা অনেক বেশি হয়ে যেত। কিন্তু এই বর্ডার চালু হওয়ায় অনেক কম খরচে যেতে পারছি। তাছাড়া যাত্রাপথে কোনো বিরতি নেই।
তাপস তরফদার নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ থাকার ফলে আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে অতি কষ্টে জীবন যাপন করছি। কারণ এখানে আমাদের একমাত্র রুটি রুজির জায়গা বাংলাদেশের যাত্রী। তাদের যাতায়াতের ওপরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমরা কয়েকশ পরিবার নির্ভরশীল। বাংলাদেশিদের যাত্রা শুরু হওয়ার পরে এই অঞ্চলে ফের সুদিন ফিরে আসবে। পাশাপাশি এই অঞ্চলের বাংলাদেশি মানুষরা খুব কম সময়ের মধ্যে দ্রুত ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন।
মানি এক্সচেঞ্জে কর্মরত দীনবন্ধু মহলদার জানান, বাংলাদেশি যাত্রীদের এই স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ থাকার ফলে গত প্রায় ৩৫ মাস আমি ও আমাদের সহকর্মীরা বেকার অবস্থায় ছিলাম। সত্যি এটা খুশির খবর। আবার আমাদের সুদিন ফিরবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ