ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মমতার মুখে বারবার ফারাক্কা-বাংলাদেশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৩
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মমতার মুখে বারবার ফারাক্কা-বাংলাদেশ

কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত): সামনেই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন, তার আগে সংক্ষিপ্ত জেলা সফরে বেরিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই সফরে বারেবারে ফারাক্কার পানি চুক্তি এবং বাংলাদেশ নিয়ে জনসভায় বক্তব্য রাখছেন।

শুক্রবার (৫ মে) মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ গঙ্গা ভাঙনের সমস্যা নিয়ে বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেন, এই সমস্যা অনেকদিন ধরে ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে হয়ে আসছে। আমরা ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি। কিন্তু, তারা কোনোরকমই সহযোগিতা করছে না। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যখন ফারাক্কা পানি চুক্তি হয়, তখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ৭০০ কোটি রুপি পাওয়ার কথা ছিল এলাকাবাসীর উন্নয়নের জন্য। কিন্তু সেই টাকার এক পয়সাও আমাদের আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এই চুক্তি ২০ বছরের বেশি হয়ে গেছে। দেবগৌড়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখনই পানি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু গঙ্গার ভাঙন রোধে কেন্দ্রীয় সরকার এক টাকাও দেয়নি। অথচ রাজ্য সরকার এ বিষয়ে এক হাজার কোটি রুপি খরচ করেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৪ মে) মালদা জেলার ইংলিশ বাজারে এক দলীয় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে গঙ্গা নদীর ভাঙন রোধ ও ফারাক্কা চুক্তির বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, গঙ্গা নদীর ভাঙন ১০০ বছর ধরে চলছে। সবাই ক্ষমতায় এসেছে, চলেও গেছে। কিন্তু ভাঙন রোধে কেউ কিছুই করেনি। অথচ গঙ্গার ভাঙন বিষয়টি কেন্দ্রের সরকারের অধীনে, আমার (পশ্চিমবঙ্গ সরকার) অধীনে নয়। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পটিও কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে।

এরপরই কেন্দ্রের সরকারকে নিশানা করে মমতা বলেছিলেন, তুমি আমাদের পানি বাংলাদেশকে দিলে, আমার তাতে আপত্তি নেই। হাসিনাজিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ভালবাসি। কিন্তু তার পরিবর্তে আমাদের রাজ্য সরকারকে ৭০০ কোটি রুপি দেবে বলেছিলে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এক পয়সা দাওনি। বলতে বলতে আমার মুখ ব্যথা হয়ে গেছে। হয়তো কেউ ভাবতে পারে আমি কেন প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে কথা বলছি না? কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সাত-আটবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে গেছি। কিন্তু কাজ হয়নি।

বাংলাদেশের সাথে ফারাক্কা চুক্তির প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে মমতা বলেছিলেন, এটি কেন্দ্রের সরকারের অধীনস্থ একটি বিষয়। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পর বিষয়টিও কেন্দ্রের বিষয়ে। তারা ড্রেজিং পর্যন্ত করেনি। আমি বুঝতে পারছি মানুষের খুব অসুবিধা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার যখন বাংলাদেশের সাথে ফারাক্কা চুক্তি করেছিল, আমরা তাদেরকে পানি দিয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় সরকার তখন লিখিতভাবে চুক্তি করেছিল যে পরিবর্তে আমাদের রুপি দেওয়া হবে এবং সেটা আমাদের ফারাক্কাকে ভালো রাখবার জন্য। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা সেই ৭০০ কোটি রুপি পাইনি।

উল্লেখ্য ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার সাথে ৩০ বছর মেয়াদী এই চুক্তি হয়। তখন বাম আমলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু।

কিন্তু, সেই চুক্তি সময় কেন্দ্রে না ছিল বিজেপি সরকার না পশ্চিমবঙ্গে মমতার সরকার। তাহলে বারবার মমতার মুখে ফারাক্কার কথা উঠে আসছে কেন? বিশেষজ্ঞদের মত, সেই চুক্তি নবায়নের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে ততই ফারাক্কা নিয়ে বেশি সরব হতে দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে। এ বিষয় পশ্চিমবঙ্গের এক বামনেতা বলেছেন, উনি কি বলতে চান প্রতিবেশীকে পানি দেবেন না? ৭০০ কোটি টাকা ছিল তো গঙ্গা ভাঙনের প্রতিরোধের বিষয়। এর সাথেই পানি চুক্তি নিয়ে কি সমস্যা আছে? উনি কি বলতে চাইছেন চুক্তিও আর করব না টাকাও চাই না? উনার জামানায় হলে তিস্তার মত এটাও আটকে যেত।

এদিনই(৫ মে) মমতার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ১২ বছর পূর্ণ হল। তা তিনি রাজ্যবাসীকে মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমি একজন সাধারণ কর্মী সমাজসেবা চালিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমরা আমাদের সাধ্যমত করব। আমাদের সাধ্যে কোন ত্রুটি থাকবে না।

এরপরই ফের কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে বলেন বাংলা লড়াই করতে জানে। লড়াইটা আমাদের রক্তে। আমি মহাত্মা গান্ধীকে ভুলে যাব? আমি নেতাজি, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এনাদেরকে ভুলে যাব? এটা কখনো হয়? মনে রাখবেন ইতিহাস, ইতিহাসের পাতায় সঞ্চিত থাকে, সংরক্ষিত থাকে। তাকে পাল্টে দেওয়া যায় না।

সিরাজউদ্দৌলা নিজের মাথার মুকুট মীরজাফরকে দিয়ে বলেছিল, তুমি আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করো। কিন্তু মীরজাফর তা করেনি। তাই আমরা কথায় কথায় বলি ওটা একটা মীরজাফ।   কিন্তু, তা বলে সব মীরজাফর নামের মানুষ খারাপ হয় না। তবে কিছু কিছু তো আছে। বাংলাদেশের যাকে রাজাকার বলে, আমরা বলি গাদ্দার।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, ০৫ মে, ২০২৩
ভিএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।