ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

পশ্চিমবঙ্গে ২ ‘সাইক্লোন’ বৃহস্পতিবার

সুকুমার সরকার, সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৬
পশ্চিমবঙ্গে ২ ‘সাইক্লোন’ বৃহস্পতিবার

ঢাকা: বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দু’টি বড়সড় ঝড়ের জন্য অপেক্ষা করছে পশ্চিমবঙ্গবাসী। একটি প্রাকৃতিক, আরেকটি মানুষের।

একদিকে রাজ্যের নেতা ঠিক করতে জনতার রায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ‘সাইক্লোন’। দু’টির ফলাফলেই ঝড় বইবে পশ্চিমবঙ্গে।

কলকাতা আবহাওয়া অফিসের খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার কলকাতাসহ রাজ্যের উপর দিয়ে সাইক্লোন বয়ে যেতে পারে। এই অশনি বার্তা রয়েছে শুক্রবারেও। আর ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যে নির্বাচন ঘোষণার পর জানাই ছিলো ১৯ মে রাজনৈতিক পরিসরে বইবে বড়সড় ঝড়।  

শ্রীলঙ্কার কাছে ভারত মহাসাগরের উপর রয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার উড়িষ্যা হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক আকার নিয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে যেতে পারে এটি।

বুথফেরত সমীক্ষায় জানানো হয়েছে- পশ্চিমবঙ্গে লড়াইটা এবার হাড্ডাহাড্ডি। যে দলই জিতুক, ব্যবধান খুব বড় হবে না। বিধানসভা একপেশে হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

রাজ্যের আসন সংখ্যা ২৯৪। ম্যাজিক সংখ্যা ১৪৮ আসন। তবে যদি ঝুলন্ত হয় তবে তা আমাদের পড়শি রাজ্যবাসীর জন্য মঙ্গলজনকই হবে। রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা বলছেন- এমনটা হলে রাজ্য বিধানসভায়  শক্তিশালী একটি বিরোধী বেঞ্চ থাকবে।

বিধানসভা কেবল ‘প্রাণবন্ত’ হবে তাই নয়,  মানুষের ওপর জোর করে কিছু চাপানো যাবে না। দলীয় ক্যাডারদের পেশী শক্তি থেকে সাধারণ মানুষ রক্ষা পাবেন। কথায় কথায় ক্লাব চাঁদাবাজির শিকার হতে হবে না। যা গত সাড়ে তিন দশক ধরে রাজ্যের মানুষ বাম সরকারের শাসন দেখেছে।

সেই জের তেমন একটা কমেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল শাসনামলেও। কেননা ক্লাব ক্যাডাররা সবসময় তাদের কর্মকাণ্ড চালাতে সরকারি দলের সঙ্গে থাকতেই নিরাপদ মনে করেন। আর সরকারি দলের তো শাসনক্ষমতা অটুট রাখতে সব ধরনের লোকের দরকার পড়ে। শুধু নিরীহ লোক দিয়ে হয় না।

ভারতের অন্য রাজ্যের নির্বাচন মিটতেই সোমবার সন্ধ্যায় ভোট পরবর্তী সমীক্ষার ফল প্রকাশ্যে আসে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সব সংস্থাই শাসকদল তৃণমূলকে এগিয়ে রেখেছে।

একাধিক সংস্থা পশ্চিমবঙ্গের জন্য ম্যাজিক সংখ্যা ১৪৮-এর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে অনেকটা এগিয়ে রেখেছে। কেউ কেউ আবার কিছুটা কম। তবে ১৬০-এর নিচে কেউ নামেনি।

এবিপি আনন্দ-নিয়েলসনের সমীক্ষা অনুযায়ী, তৃণমূলের ১৬৩টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা। আবার ইন্ডিয়া টুডের সমীক্ষায় প্রায় ২৫০টি আসন পেতে চলেছে তৃণমূল।

টাইমস নাও বা ইন্ডিয়া টিভির সমীক্ষা অনুযায়ী ১৬৩টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা তৃণমূলের। অন্যদিকে, বাম-কংগ্রেস জোট ১২০-র কাছাকাছি আসন পেতে পারে বলে সমীক্ষায় বলা হয়েছে।

ইন্ডিয়া টুডের হিসাবে ৫০টি আসনও জোট পাচ্ছে না। শতাংশের হিসেবেও তৃণমূল জোটের থেকে কয়েক শতাংশ এগিয়ে বলে জানিয়েছে ওই সংস্থাগুলি।
১৯৬৭ সালের পর এই প্রথম কোনো শাসকদল জোটসঙ্গী ছাড়া একাই ভোটে লড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মসনদে দখল নিয়ে ভারতে তো বটেই- পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জুড়েও চলছে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা।

পশ্চিমবঙ্গের ভোট নিয়ে বাংলাদেশের এমন আগ্রহ থাকা খুবই স্বাভাবিক। ৪৭-এ ব্রিটিশরা বাংলাকে ভাগ করে দিয়েছিল। কিন্তু দু’দেশের বাঙালির আত্মাকে তারা ভাগ করতে পারেনি। দুই বাংলার মানুষ তাই সর্বদা পরস্পরের খোঁজ-খবর রাখেন।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার দফাভিত্তিক এ নির্বাচন শুরু হয় ৪ এপ্রিল। এরপর ১১ এপ্রিল, ১৭ এপ্রিল, ২১ এপ্রিল, ২৫ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল  এবং শেষ হয় ৫ মে।
২০১১ সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিয়ে মানুষের মন জয় করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়তি ছিল তার সাদা-সিধে বেশভূষার জীবনযাপন।

সারদা কেলেঙ্কারির ঘটনা মমতা ও তার দল তৃণমূলের ভাবমূর্তিতে বেশ খানিকটা ধস নামিয়ে দেয়। এরপর নারদকাণ্ড ভিডিও’তে তৃণমূলের ১১ মন্ত্রী, সংসদ সদস্যকে ঘুষ নিতে দেখা যায়।

২০১১ সালের নির্বাচনে মমতার দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হয়েছিল। ১৮৪টি আসন দখল করে মমতা মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন। অবশ্য আগে থেকেই নির্বাচনের প্রবল হাওয়া ছিলো তৃণমূলের অনুকূলে।

বামফ্রন্টের টানা ৩৪ বছরের শাসনামলে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের নেতাদের দুর্নীতি ও বাড়াবাড়িতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। গত নির্বাচনে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামদলগুলো পেরেছিল ৬০টি আসন। কংগ্রেস পায় ৪২টি আসন।   বিজেপি ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।  

এবার নির্বাচন ঘোষণার সময় অনেকেই বলছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ফের ক্ষমতায় আসবেন, তবে ২০১১ সালের মতো সংখাগরিষ্ঠতা নিয়ে নয় আসন সংখ্যা কমবে। প্রথম পর্বের ২/৩ স্থানে নির্বাচন হওয়ার পর তৃণমূল নেতাদের লাগামহীন মন্তব্যের জেরে মানুষ অনেকটা দলটি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন।

পশ্চিমবঙ্গে ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার ১০১।   মমতা বন্দোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের ৮ম মুখ্যমন্ত্রী ও প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী। দল আর তার মধ্যে খুব একটা ফারাক রাখেননি। দলের ওপরে নিজের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। মমতা মানেই তৃণমূল।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৬
এসএস/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।