ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

বাঙালির সঙ্গে জুড়ে আছে মল্লিক বাড়ির পূজা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৮
বাঙালির সঙ্গে জুড়ে আছে মল্লিক বাড়ির পূজা মল্লিক বাড়ির পূজাতে সিঁদুর খেলা-ছবি-বাংলানিউজ

কলকাতা: কলকাতার আকাশে-বাতাসে সকাল থেকেই বিষাদের সুর। শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) মা দুর্গা ফিরে যাবেন কৈলাসে। তিথি মতে দেবী দুর্গার বিসর্জন, বিজয়া দশমী। সব দুঃখ-গ্লানি ভুলে চারদিন আনন্দে মেতে থাকা। তার সমাপ্তি ঘোষণা হয় এদিনে। আবার একটা বছরের অপেক্ষা।

কলকাতার অন্যতম পূজা হয় মল্লিক বাড়িতে। দশমীর আচার-অনুষ্ঠান শেষে মল্লিক বাড়ির গ্ল্যামার গার্ল কোয়েল মল্লিক দুর্গা মাকে বরণ করলেন।

তারপর পরিবারের সঙ্গে মেতে উঠলেন সিঁদুর খেলায়। মা দুর্গার পায়ে সিঁদুর দিয়ে পরিবার ও স্বামীর জন্য করলেন মঙ্গল কামনা। এই পূজা উপলক্ষে দেশ-বিদেশ থেকে মিলিত হয় পরিবারের চারশ’ সদস্য। চারদিন চলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া। একসঙ্গেই থাকা হয় ওই বাড়িতে। এটাই মল্লিক বাড়ির ঐতিহ্য।
মল্লিক বাড়ির পূজাতে সিঁদুর খেলা-ছবি-বাংলানিউজ
পূজা শেষে আবার একটা বছর অপেক্ষা, মন খারাপ লাগছে না-এমন প্রশ্নে কোয়েল বলেন, খারাপ তো লাগছে। এই সময় পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা হয়, একসঙ্গে থাকি। ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে। তবে শেষ বলবো না। মা আমাদের সঙ্গেই আছেন। এটাই পূজার রীতি। তবে এই পূজাকে কেন্দ্র করে কটাদিন একসঙ্গে কাটাই। কাল থেকে যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
 
ছোটবেলার পূজার স্মৃতি হাতড়ে কোয়েল বলেন, আমাদের বাড়িতেই প্রতিমা তৈরি হতো। প্রতিমা যিনি গড়তেন তাকে ঠাকুর জ্যেঠু বলতাম। উনাকে রোজ স্কুল থেকে ফিরেই বলতাম প্রতিমাটি শেষ কবে হবে। তখন আমি ভাবতাম প্রতিমা শেষ হলেই পূজা শুরু হবে আবার সবার সঙ্গে দেখা হবে। আর আমার সিঁদুর খেলতে খুব ভালো লাগতো। কিন্তু আমাদের বাড়ির নিয়ম আছে বিবাহিত না হলে সিঁদুর খেলা যাবে না। তাই তখন ওপর থেকে দেখতাম। এখন আমার বিয়েও হয়ে গেছে এমনকি আমি দিদিমাও হয়ে গেছি। এখন ছোটবেলার কথা মনে পড়লে হাসি পায়।
 
মল্লিক বাড়ির পূজা দেখতে ভিড় জমান দর্শকরা। কোয়েল কোনো ভিআইপি নয়। পরিবারসহ আগত সবার কথা রাখলেন। আবদার মেনে সবার সঙ্গে কথা বলা, সেলফি তোলা কোনো কিছুতেই না নেই।

মল্লিক বাড়ির পূজা-ছবি-বাংলানিউজ
মল্লিক বাড়ির আরও একজন ভিআইপি আছেন। তাকে দেখতে বা ছুতে কম ফ্যান নেই। তিনি প্রবীন অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক। আপনি সবার অনুরোধ রাখছেন ক্লান্ত লাগছে না-এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, লাগে না তা নয়। এই তো চারটে দিন। আবার তো এদের থেকে কয়েক যোজন দূরে। আশা করে তারা আসেন পূজার ক’টা দিন, না কি করে করি বলুন।
 
মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাড়ির লাগোয়া ঘাট ভবানীপুরের আদি গঙ্গার ঘাট ‘বলরাম বোস ঘাট’। প্রতি বছর বাড়ি থেকে কাঁধে করে দুর্গা প্রতিমাকে নিয়ে এসে এই ঘাটেই বিসর্জন দেওয়া হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিসর্জন উপলক্ষে হাঁটলেন ৩০ মিনিটের মতো। শুধু হাঁটলেন না ঢাকের তালে পরিবারের সবার সঙ্গে নাচলেন রঞ্জিত মল্লিক। বয়স হয়েছে অনেকটাই। কিন্তু ঐ মুহূর্তে শৈশবের মতো আনন্দ বয়সের শেকলে আটকে থাকতে রাজি নন তিনি। এমনই বলছিলেন রঞ্জিত মল্লিক। বিসর্জনের পরে চলে সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং মিষ্টি মুখের পালা। দক্ষিণ কলকাতার সাবেকি বাড়ির পূজার মধ্যে অন্যতম প্রধান মল্লিক বাড়ির পূজা। যেখানে বয়সের কোনও বাধা নেই। সবাই মিলেমিশে এক। পূজার ক’টা দিন থাকে অবাধ প্রবেশ। বিজয়া দশমীতে বাঙালির সঙ্গে আজও জুড়ে আছে মল্লিক বাড়ির পূজা।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮
ভিএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।