ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

৩৭০ ধারা বাতিলে যেসব পরিবর্তন এলো কাশ্মীরে

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২০
৩৭০ ধারা বাতিলে যেসব পরিবর্তন এলো কাশ্মীরে সংগৃহীত ছবি

কলকাতা: কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের এক বছর পূর্ণ হলো। গত এক বছরে উপত্যকার মানুষের জীবনে কি আদৌ পরিবর্তন এসেছে? এই বিষয়ে আগ্রহ শুধু ভারতে নয়, সমগ্র বিশ্বের রাজনৈতিক মহলে।

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের লোকসভায় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণায় কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু তার ফলাফল কী হয়েছে? কী মনে করেন কলকাতার বিশিষ্টজনেরা?

প্রথমত মনে রাখতে হবে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার ফলে দুটি পৃথক  কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ তৈরি  হয়েছে। ওই সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণায় তেড়ে উঠেছিল বিরোধী দলগুলি। দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল সমালোচনা।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সন্দীপ মুখার্জি বলেন, কাশ্মীর হয়তো তার সমস্ত সমস্যার সমাধানগুলি এখনো সম্পূর্ণভাবে পায়নি। কিন্তু জম্মু ও লাদাখ আলাদা হওয়ায় কাশ্মীরের একচ্ছত্র আধিপত্য থেকে তারা মুক্তি পেয়েছে। ফলে অঞ্চলভিত্তিক সমস্যাগুলিও আলাদা করা গেছে। তবে আমার মনে হয় আরও সময় লাগবে সব সমস্যা মিটতে।
সংগৃহীত ছবি
সন্দীপ মুখার্জি আরও বলেন, ৩৭০ ধারা বাতিলে আখেরে লাভ হয়েছে কাশ্মীরের। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা অত্যাচারিত রিফিউজি বা ১৯৫৩ সালে ওপার থেকে কাশ্মীরে আসা শ্রমিক পরিবার। সে যেই ধর্মে হোক না কেন, ৩০৭ ধারার জন্য ভারতের নাগরিকত্ব না থাকায় তারা সব সুযোগ থেকেই বঞ্চিত ছিল। কিন্তু ধারা রদ হতে এখন তারা নাগরিকত্ব পাচ্ছেন। ফলে কাশ্মীরসহ ভারতে সব জায়গায় কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ কারণে তাদের সন্তানরা ভারতীয় শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। হাসপাতালগুলোয় তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন। এতদিন ধরে ভারতে থেকেও তারা সবকিছু থেকে বঞ্চিত ছিলেন। ফলে আমি মনে করি আদতে ৩৭০ বাতিল হয়ে ভালো হয়েছে। বিরোধীরাও তা বুঝতে পারছে। ফলে এখন তাদের মুখে এ নিয়ে কোনো কথা নেই।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক অধ্যাপক অরিন্দম চ্যাটার্জির মতে, নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। এই পদক্ষেপ কাশ্মীরের মহিলাদের নতুন অধিকার দিয়েছে। একইভাবে ওই অঞ্চলের পিছিয়ে থাকা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের উন্নতির জোয়ার এসেছে। ধারা বাতিলের পর বেকারত্ব সমাধান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এছাড়া যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টির সুযোগ সম্প্রসারণের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরে দুটি নতুন আইটি পার্ক প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। গবেষণা, উন্নয়ন এবং বিপণনের জন্য কোম্পানিগুলি কোটি কোটি রুপি বরাদ্দ করছে, যা তাদের উদ্ভাবনে সহায়তা করছে। ৩৭০ ধারা বাতিলের পরই এসব সম্ভব হয়েছে বলে মত দেন অধ্যাপক অরিন্দম চ্যাটার্জি।

সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষিকা মুনমুন রায়ের মতে, কাশ্মীরের রাজনীতিতে লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। বিগত দিনের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে। ফলে একঘেয়েমি রাজনীতি অনেকটাই লোপ পেয়েছে। এছাড়া ৩৭০ বিলোপের পরে কাশ্মীরী মহিলারা, কাশ্মীরের বাইরের পুরুষদের বিয়ে করার অধিকার পেয়েছেন। তাতে কাশ্মীরি মহিলাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিতও হতে হবে না, যা আগে হতো। এর আগে কাশ্মীরি মহিলা ভারতে ভিন রাজ্যের পুরুষকে বিয়ে করলে তাকে কাশ্মীরি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হতো। কিন্তু ৩৭০ বাতিলে আমূল পরিবর্তন এসেছে কাশ্মীরে। আগামীতে আরও পরিবর্তন আসবে। তাতে শুধু ভারতে নয় গোটা কাশ্মীরের পরিবর্তন ঘটছে এবং ঘটবে। যা কাশ্মীরি মহিলাদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে জীবনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, অগাস্ট ০৫, ২০২০
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।