ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

কলকাতা বইমেলায় প্রকাশ পেল ‘কলকাতায় শেখ মুজিব’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
কলকাতা বইমেলায় প্রকাশ পেল ‘কলকাতায় শেখ মুজিব’ কলকাতায় শেখ মুজিব’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: প্রত্যাশিত ভিড় জমতে শুরু করেছে কলকাতার বইমেলায়। জনসমাগমে ভরা ৪৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার থিম কান্ট্রি ‘বাংলাদেশ’।

 এ নিয়ে তিনবার কোন দেশ এই শিরোপা পেয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণের লাউড স্পিকার থেকে বারে বারে এই কথা প্রচার হওয়ায় কলকাতাবাসীর মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। আর সেই কারণে সোমবার (৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধুর বিশ্ব স্বীকৃতি ঐতিহাসিক ভাষণকে স্মরণ করে মেলা প্রাঙ্গণের শঙ্খ ঘোষ মঞ্চ থেকে ‘কলকাতায় শেখ মুজিব’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হলো।

রয়েল সাইজের ২২৪ পৃষ্ঠার বইয়ের লেখক কলকাতার গণমাধ্যমকর্মী সৌগত চট্টোপাধ্যায়। প্রচ্ছদের ছবি চিত্রশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ, ভূমিকা লিখেছেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও বইয়ের প্রকাশক ‘অন্যপ্রকাশ’, বইটি যেমন একুশের বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে একইভাবে বইটি মিলছে কলকাতা বইমেলায়। বইটিতে ১৯৩৪-১৯৭২ এই সময়কালীন বঙ্গবন্ধুর কলকাতার নানা অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন লেখক।

বঙ্গবন্ধু শেষ যখন কলকাতায় গিয়েছিলেন তখনও আকুল ছিলেন তার ভালোবাসার শহর কলকাতা ঘুরে দেখার জন্য। কিন্তু পারেননি নিরাপত্তার কারণে। তাকে মেরে ফেলার হুমকি ছিল। সেসময় ভারতের সীমান্ত অঞ্চল থেকে অনেক রাজাকার-আলবদর অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। কলকাতাবাসী অনির্বাণ নামে একটি বাচ্চা ছেলে সেসময় শেখ রাসেলের জন্য খেলনা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর হাতে। কে সেই অনির্বাণ, তাকে খুঁজে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার সেই মুহূর্তের ছবি পাঠকের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। সবমিলিয়ে বইটিতে আগাগোড়া একটা খোঁজ এবং গবেষণা রয়েছে। ‘খোঁজ’ বলার কারণ এই বইটি গতানুগতিক পুনরাবৃত্তি বদলে বেশ কিছু নতুন তথ্যের সন্ধান দিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু গোটা জীবনে যতবার কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন এবং যে কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন বা যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল এবং সেসব কাজ বঙ্গবন্ধুর নীতি-নৈতিকতার এবং মনকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিল তার দলিল হিসেবে ‘কলকাতার শেখ মুজিব’ শীর্ষক বইটিতে নানান তথ্য তুলে ধরেছেন সৌগত চট্টোপাধ্যায়। ১৯৩৪ থেকে ১৯৭২ এর ৮ ফেব্রুয়ারি, সময়কালে বিভিন্ন ভূমিকায় কলকাতায় শেখ মুজিব এবং তার সেই কলকাতা যাপন কালের খুঁটিনাটির সঙ্গে সমসাময়িক প্রাকৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। নতুন খোঁজ বা গবেষণার বিষয়ে লেখক সৌগত চট্টোপাধ্যায় বলেন, অবিভক্ত বাংলায় চিকিৎসার জন্য ১৯৩৪ সালে প্রথম কলকাতায় আসেন বঙ্গবন্ধু। শেষবার এসেছিলেন ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেষবারের কলকাতা সফর ছিল তাঁর। অর্থাৎ প্রথম বিদেশ সফর বা ঐতিহাসিক ভারত সফর। বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের আমন্ত্রণে। ঐতিহাসিক সফর বলার কারণ, ভারত সরকার যখন কোনও অতিথিকে আমন্ত্রণ জানান, প্রথামত তাকে হায়দ্রাবাদ হাউসে রাখা হতো। তবে, নিয়ম ভেঙে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজভবনে।

আমার পুরো কাজটার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর কলকাতার সময়কালটা তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, বঙ্গবন্ধু আত্মজীবনীতে লিখেছেন গেছেন ডাক্তার একে রায় চৌধুরী বিষয়ে। কিন্তু একে রায় চৌধুরীই যে অমল কুমার রায় চৌধুরী, তা আজ পর্যন্ত কোথাও উল্লেখ নেই। সেই অমল কুমার রায় চৌধুরী ছবি, তার বর্তমান বাড়ি, কোন ঘরে বঙ্গবন্ধু চিকিৎসা করতে এসেছিলেন, খুঁটিনাটি তথ্য বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যেমন, যার কাছে চোখের অপারেশন করিয়ে ছিলেন তাকে টি আহামেদ বলেই সবাই চেনেন। তার পুরো নাম তাজউদ্দিন আহামেদ। বইটি সাতটা অধ্যায় ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগের নাম ‘শুরুর শুরু’, ২য় অধ্যায়ের নাম ‘দৃষ্টি ফেরার দিন’ যেখানে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। ৩য় ভাগ 'মানুষ মানুষের জন্য' এই অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা এবং কলকাতায় আগমন। ৪ অধ্যায় 'সময়ের সৈনিক' এখানে তুলে ধরা হয়েছে ১৯৪০ এর সময়টায় প্রচুর প্রাকৃতিক এবং রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়। এর প্রতিটা সাক্ষী ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং নিজেকে একটু একটু করে শিক্ষিত করেছেন রাজনৈতিকভাবে, ব্যক্তিগতভাবে এবং নৈতিকভাবে। ৪২ এর, ছাত্রাবস্থায় বঙ্গবন্ধু কলকাতায় এসেছিলেন ৪৭ ফিরে যাওয়া মুজিবের মন মানসিকতা আমূল পরিবর্তন আসে। এর প্রভাব বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী কাজে পাওয়া যায়।

৫ম অধ্যায় 'ভাঙা-গড়ার দিনগুলি' ১৯৪৯ -১৯৫৫ সময়কালে বঙ্গবন্ধুর কলকাতায় আগমন। এখানে বঙ্গবন্ধুর কলকাতা আগমন এবং শিয়ালদহর টাওয়ার হোটেলের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ছয় অধ্যায় 'অন্য বাংলার নেতাজি' শেষবার উনি যখন কলকাতায় এসেছিলেন। নেতাজিকে কেন্দ্র করে বাংলায় যেমন উন্মাদনা আছে, কলকাতায় আগমনে বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে সেই সমগোত্রীয় উন্মদনা দেখা দিয়েছিল।

১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার মানুষ নড়াচড়া করতে পারেনি, গোটা কলকাতা শহর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ব্রিগেডে বঙ্গবন্ধুর সম্বর্ধনাকে কেন্দ্র করে। এর খুটিনাটি বিবরণ আছে বইটিতে। যেমন, চিত্রাঙ্গদা মঞ্চস্থ হয়েছিল সুচিত্রা মিত্রের তত্ত্বাবধানে এটা সবাই জানেন। কিন্তু এ সুচিত্রা মিত্রের তত্ত্বাবধানে চিত্রাঙ্গদায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গান গেয়েছিলেন এবং এর পুরো ভিডিও করেছিলেন ঋত্বিক ঘটক। এ ধরনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো। শেষ অধ্যায় হলো 'শেষ কথা', এটি এক ধরনের উপসংহার। সামগ্রিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে বইটির বিষয়ে। এ বিষয়গুলো নিয়েই ‘কলকাতায় শেখ মুজিব’।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২২
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।