ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে পাঠক-দর্শনার্থীদের ঢল

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২২
কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে পাঠক-দর্শনার্থীদের ঢল মেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে পাঠক ও দর্শনাথীদের ভিড়। ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: ‘মা এই ছবির মানুষটি কে? উনি একজন ফ্রিডম ফাইটার। বাংলাদেশের ফাদার অব নেশন।

উনার নাম কী? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওনার মেয়ে বাংলাদেশের প্রাইম মিনিস্টার। মা, প্রাইম মিনিস্টারের নামটা কী যেন? শেখ হাসিনা। ইয়েস আই রিমেম্বার। কোথায় থাকেন? ঢাকায়। মা, বাংলাদেশ কী ঢাকাতে? অব; ক্যাপিটাল অব বাংলাদেশ ইস ঢাকা। সব ভুলে যাও। এটা কার ছবি? উনার নাম শেখ রাসেল। প্রাইম মিনিস্টারের ছোট ভাই। ’

কলকাতার একটি বিখ্যাত ইংরেজি মাধ্যমের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী শ্রেষ্ঠাকে বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে তার মা। নবীন প্রজন্মকে বাংলাদেশ চেনাচ্ছে তার মত করে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতর্ষের মধ্যে এবারের ৪৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার থিমকান্ট্রি বাংলাদেশ। আর এবার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে উপজীব্য করে। প্যাভিলিয়নে ঢুকতেই বিশাল মাপের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। গোটা প্যাভিলিয়নের বাইরে সেই ঐতিহাসিক ভাষণ কাঠ খোদাই করে বসানো হয়েছে। সূর্য় ডুবতেই প্যাভিলিয়নের গায়ে আছড়ে পড়ছে রংবেরঙের আলো। আর তাতেই আরও জ্বলজ্বল করে উঠছে গোটা প্যাভিলিয়ান। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ানের পাশ দিয়ে গেলে চোখ যাবেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে। স্বভাবতই শ্রেষ্ঠার মত নতুন প্রজন্মের মনে প্রশ্ন আসবেই। অপরদিকে মেলার দিন যত ফুরিয়ে আসছে ততই ভিড় বাড়ছে। লোকে লোকারণ্য। কলকাতা বইমেলা এখন জনপদে পরিণত হয়েছে। আর সারা বছর তো সেভাবে বাংলাদেশের বই কলকাতায় মেলে না। ফলে বাড়তি ভিড় থাকে বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে। এবারে ১২টি সরকারি ও ২৯টি বেসরকারি প্রকাশনা মিলিয়ে মোট ৪৪টি স্টল রয়েছে প্যাভিলিয়নে। অপরদিকে বাংলাদেশ থিমকান্ট্রি হওয়ার পাশাপাশি মেলার তিনটি প্রবেশদ্বার সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর তিনটি বইকে উপজীব্য করে। সেগুলো-অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং আমার দেখা নয়া চীন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই তিনটি বইয়ের একটিও কপি অবিক্রিত নেই। বাংলা একাডেমির স্টলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের আফসোস, ‘বুঝতে পারিনি এত চাহিদা থাকবে। ’ জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি স্টলে বই শুধু ডিসপ্লের জন্য রাখা। আর তাতেই নানা অভিযোগ কলকাতাবাসীর। ` কিনতে যদি না পারি তাহলে রাখা কেনো? এমনিতে তো এসব বই মেলে না। অনেকটা চোখের সামনে খাবার আছে কিন্তু খেতে পারছি না। এটা মানা যায় না। ' এই স্টলে বঙ্গবন্ধুর বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি অনুবাদেও বই আছে। নতুন সংযোজন শেখ হাসিনার সম্পাদনায় জন্মশতর্ষ স্মারকগ্রন্থসহ আরও কয়েকটি বই।

স্টলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কথায়, প্রচুর চাহিদা এখানে। মানুষ প্রচুর জানতে চাইছেন শেখ মুজিবরের সম্পর্কে। কিছু নতুন বই এবারে এসেছে। সেগুলোরও প্রচুর ডিমান্ড। দূর-দূরান্ত থেকে বই নিতে আসছেন। কিন্তু বইগুলো দিতে পারছি না। লোক উত্তেজিত হচ্ছে। কথা কাটাকাটি হচ্ছে। সত্যিই লজ্জিত আমরা। এর বাইরে আমাদের আর কিছু বলার নেই। ' তবে, চাহিদা সব স্টলেই আছে। কলকাতাবাসীর যাদের শেকড় বাংলাদেশের, সে সেই জেলার বই সংগ্রহ করছেন। পাশাপাশি ইসলামিক গ্রন্থের বাংলায় অনুবাদের চাহিদা গগণচুম্বী চাহিদা। পাশাপাশি বৌদ্ধিক অনেক বইয়ে বাংলা অনুবাদের চাহিদা আছে। সব মিলিয়ে কলকাতার ক্রেতার চাহিদায় বিক্রেতার নাওয়া খাওয়া ভুলেছেন। প্যাভিলিয়ন থেকে বের হতেই কান গেল এক ফোনালাপে, আমি বাংলাদেশে! তোর জন্য কী নেবো? কথোপকথনের যা বোঝা গেল ফোনের ওপারে যিনি আছেন তার চাহিদা- অসমাপ্ত আত্মজীবনী, জাকির তালুকদার আর সাহাদাত হোসেন। এপারের উত্তর ওত টাকা নিয়ে আসেনি। আমারও কেনাকাটা আছে। পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলাম প্রেমিকা আপনার উত্তরে কী বললেন। আর বলবেন না, বলে টাকা আবার আসবে কিন্তু বইমেলা চলে গেলে এ বই আর পাবো না। একটু ম্যানেজ কর। '

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২২
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।