ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভারত

কলকাতাবাসীর ইফতার আয়োজন এখন বাজার নির্ভরশীল

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২২
কলকাতাবাসীর ইফতার আয়োজন এখন বাজার নির্ভরশীল

কলকাতা: রোজা এবং ইফতার একে অপরের পরিপূরক। রোজাদাররা পরিস্থিতি পরিবেশ অনুযায়ী, দিন শেষে নানা পন্থায় রোজা ভেঙে থাকেন।

তবে দিনশেষে যে পদ্ধতি দ্বারা রোজা ভাঙা হয় তাকেই ইফতার বলা হয়। ধর্মমতে খেজুর দিয়ে ইফতার করা হলো সর্বোত্তম পদ্ধতি। সে কারণে কলকাতার বাজারের খেজুরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

খেজুর: রমজান এলেই কলকাতার বাজারে হরেক রকমের খেজুর মেলে। সব মিলিয়ে রোজার মাসে শহরে প্রায় ১৪ ধরনের খেজুর পাওয়া যায়। এরমধ্যে জনপ্রিয় খেজুরের নাম 'মেদাজুল'। যা আসে সৌদি আরব, জর্ডান, ফিলিস্তিন প্রভৃতি দেশ থেকে। মান অনুযায়ী, প্রতি কেজির দাম  ৮শ থেকে ১৮শ রুপি। এছাড়া ওই জাতের কয়েক প্রকার খেজুরও মেলে কলকাতায়। দাম প্রতি কেজি ৬শ রুপি থেকে শুরু।

তবে সারা বছর যে খেজুর পাওয়া যায়, তার চলতি নাম 'চালু খেজুর'। যার দাম প্রতি কেজি দেড়শ থেকে ২শ রুপির মধ্যে। এছাড়া আরও এক প্রজাতির খেজুর জনপ্রিয় উঠছে। নাম 'অম্বর' বা 'নুর অম্বর' খেজুর। প্রতি খেজুরের ওজন কমবেশি ২৫ গ্রাম। প্রতি কেজির দাম ২ হাজার রুপি থেকে শুরু। একটি বাক্সে গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ পিস থাকে।

ফল: ইফতারে খেজুরের সঙ্গে অন্য ফলও থাকা চাই। এ সময় স্থানীয়, বিদেশি এবং ভারতের অন্য রাজ্যের ফলও আসে কলকাতায়। দামও থাকে চড়া। সাধ্যের বাইরে দাম উঠতে থাকায় গোটা ফলের থেকে কাঁটা ফলের চাহিদা বেশি। যারা কলকাতায় এসেছেন তারা দেখেছেন শহরের অলিগলি রাজপথে ফল কেটে বিক্রি হয়। বিভিন্ন তাজা ফল সালপাতার বাটি বা ওয়ান টাইম পাত্রে সাজিয়ে বিক্রি করা হয়। রোজার মাসে এর চাহিদা থাকে বেশি। টুকরো করা ফলের মধ্যে থাকে পাকা পেঁপে, তরমুজ, কলা, আপেল, সফেদা, আঙুর ইত্যাদি। প্লেট প্রতি দাম ২০-৩০ রুপি। তবে ড্রাইফ্রুটের দাম খুব একটা বাড়েনি। অনেকেই ইফতারে রাখেন কাজু, পেস্তা, কিসমিস ইত্যাদি।  

দুধ ও সরবত: সরকারি এবং বেসরকারি প্যাকেটজাত দুধ বিভিন্ন মাপে মেলে। ২৫০ মিলি থেকে বিক্রি হয়। হাফলিটার দুধের মান অনুযায়ী দাম ২০-২৫ রুপি। সরবতের মধ্যে চল বেশি রুহ আফজা, গ্রিন ম্যঙ্গো ফ্লেভার, রসনা ইত্যাদির। এছাড়া পানি, চিনি ও লেবু দিয়ে সরবতেরও চল আছে। বর্তমানে কলকাতায় প্রতি হালি লেবুর দাম ৪০-৫০ রুপি। এসব সরবত যেমনি বাসায় বানানো যায়, তেমনি বাজারে তৈরি করেও বিক্রি হয়।  

ভাজাভুজি এবং জিলাপি: কলকাতায় সারা বছরই পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের ভাজাভুজি, মোটা এবং চিকন জিলাপি। ভাজাভুজির মধ্যে কলকাতায় বেশি চল মটন বা বিফকিমা চপ, চিকেন চপ, বিভিন্ন মাছের চপ, মিক্স ভেজিটেবিল চপ, আলুর চপ, পেয়াজি, বেগুনি ইত্যাদি। তবে কলকাতায় মুড়ি-বুট মাখার বেশি চল নেই। বাঙালি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে এর কিছু চাহিদা আছে।

এছাড়া সামর্থ অনুযায়ী, যে যার মত নানান পদ যোগ করে থাকেন ইফতারে। একসময় ইফতার মানে খেজুর, ফল বাদ দিলে সবই বানানো হত প্রতিটা বাসায়। দাওয়াত থাকত সব ধর্মের, সব স্তরের মানুষের। বিজয়ার মিষ্টি, ঈদের সেমাই আর ইফতারের দাওয়াত এই ছিল শহরের উৎসব। কিন্তু বর্তমানে যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট হয়ে যাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই জীবিকার টানে পথে বের হতে হচ্ছে। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পা ফেলছেন শহরবাসী। ফলে অনেক পুরানো ঐতিহ্য আজ বিলীনের পথে। আর তাই কলকাতাবাসীর সব উৎসব এখন বাজার নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয় ইফতার আয়োজনও।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, ৬ এপ্রিল, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।