ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

বাংলায় রাখি উৎসবের প্রচলন করেন রবীন্দ্রনাথ

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২২
বাংলায় রাখি উৎসবের প্রচলন করেন রবীন্দ্রনাথ

কলকাতা: গোটা ভারতজুড়ে পালিত হচ্ছে রাখিবন্ধন উৎসব। ভাইবোনের সম্পর্ককে এক সুতোয় গাঁথা হয় এই রাখিবন্ধনের মধ্য দিয়ে।

বাংলায় যাকে ‘রাখিবন্ধন’ বলা হয়, অবাঙালিরা বলেন, ‘রখসা বন্ধন’। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় এই উৎসব, যাকে রাখি পূর্ণিমা বলা হয়।

হিন্দু পুরাণেও রাখিবন্ধনের কথা উল্লেখ আছে। দিনটিতে ভাইবোনের সম্পর্কের উদযাপনের কথা বলা হয়েছে। এই দিনে বোন রাখি বেঁধে দেয় ভাইয়ের হাতে আর ভাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় বোনকে রক্ষা করার। একই সঙ্গেই বোনের দীর্ঘ ও সুখী জীবনের জন্য কামনা করে ভাই। একে অপরকে উপহারও দেয়।

আবার মহাভারতে বর্ণিত, অনাত্মীয়া হলেও শ্রীকৃষ্ণ নিজের বোনের মর্যাদা দিতেন দ্রৌপদীকে। পাণ্ডবপত্নী দ্রৌপদী তার শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই থেকে শ্রীকৃষ্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন দ্রৌপদীকে রক্ষা করার। পরবর্তীতে কৌরব পক্ষ কর্তৃক দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণকালে শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষা করে ভাইবোনের সম্পর্ককে দৃষ্টান্তস্বরূপ গড়ে তোলেন।

রাখি উৎসবের দিনটি তিথি অনুযায়ী পড়ে। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গের ঘরে ঘরে রাখি উৎসব পালিত হচ্ছে। এক সময় বাংলার দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে পথচারীদের হাতে রাখি পরিয়ে দিতেন। তবে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এই উৎসব দলীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এ দিনও দলীয় কর্মসূচি হিসেবে তৃণমূলের নারী কর্মীরা পথচারীদের রাখি পরিয়ে দেন।

তবে এই উৎসব সবচেয়ে বড় করে পালন করে থাকেন অবাঙালিরা। বাঙালিরা মূলত ভাইফোঁটাকেই প্রধান্য দেয়। বলা হয়ে থাকে, এই তিথিতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলায় প্রথম রাখিবন্ধন উৎসব পালন করেন।

উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চরম পর্যায়ে পৌঁছালে ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাকে দুটি প্রদেশে বিভক্ত করবে। ব্রিটিশ সরকারের এই বিরূপ সিদ্ধান্তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রাখিবন্ধন উৎসবের ডাক দেন। তিনি কলকাতা, ঢাকা ও সিলেট থেকে হাজার হাজার হিন্দু ও মুসলিম ভাইবোনকে আহ্বান করেছিলেন একতার প্রতীক হিসেবে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করার জন্য। সেই থেকে বাংলায় প্রবেশ করে রাখিবন্ধন উৎসব।

একটা সময় ছিল যখন বোনেরা তাদের ভাইয়ের হাতে রেশমের সুতো বেঁধে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করতো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই উৎসবের অর্থও বদলে গেছে। এখন বাজারে অনেক ধরনের অভিনব রাখিও পাওয়া যায়, কয়েক রুপি থেকে যার দাম লাখ রুপি দাম। ব্যবহার করা হয় সুতো থেকে সোনা।

সব মিলিয়ে বাংলায় দিনটি সামাজিক রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তা স্মরণ করে পশ্চিমবাংলার বাড়ি বাড়ি ভাইবোনেরা উৎসবে সামিল হয়েছে। দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।