ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

স্বাধীনতার ৭৫ বছর

সব ভুলে পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
সব ভুলে পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজু জাতীয় পতাকা সেলাই করছেন রাজু।

কলকাতা: ১৫ আগস্ট ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সমগ্র ভারতে প্রস্তুতি তুঙ্গে। ‘হর ঘর তেরঙ্গা’ অর্থাৎ প্রতি ঘরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সেই উদ্যোগকে সফল করতে ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে জোরদার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।

আর তাই শেষ মুহূর্তে দেশজুড়ে জাতীয় পতাকার চাহিদা এখন তুঙ্গে।

পাহাড় প্রমাণ সেই চাহিদা মেটাতে এখন নাওয়া-খাওয়ার ফুরসত নেই পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার জেলার উনসানি এলাকার হালদার বাড়ির সদস্যদের। দিনরাত এক করে চলছে কর্মযজ্ঞ। দিনে ১৮ ঘণ্টা জেগে প্রতিদিন হাজার হাজার জাতীয় পতাকা তৈরির কাজ চলছে হালদার বাড়িতে।

এই বাড়ির পথচলা শুরু ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে। সেই সময় থেকেই জাতীয় পতাকা তৈরির কাজ শুরু করেন হাওড়া জেলার বাসিন্দা নূর জামান হালদার। সেদিনের সেই কর্মকাণ্ডকে বর্তমানে নূর জামানের ছেলে রাজু এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।  

ওই জেলার সাঁতরাগাছি ছাড়িয়ে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের দিকে কিছুটা এগিয়ে কাউকে জিজ্ঞাসা করলে যে কেউ নূরের বাড়ি দেখিয়ে দেবেন। ঠিকানা একটাই, পতাকা বানানো নূরের বাড়ি। এই নামেই চেনেন সবাই।

শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, আসাম, ত্রিপুরা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা, ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্যগুলো থেকেও হাজার হাজার জাতীয় পতাকা তৈরির অর্ডার পেয়েছিলেন রাজু।

এবছর ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি। কেন্দ্রীয় সরকার ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পালন করছে।  

ঘরে ঘরে জাতীয় পতাকা তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই কারণে এবছর জাতীয় পতাকার চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।  

রাজু প্রতিবার ত্রিপুরা থেকে ২০ হাজার জাতীয় পতাকা তৈরির বরাত পান। তবে এবছর সেই বরাত বেড়ে হয়েছে ৩৮ হাজার। আসাম থেকে অর্ডার থাকে ২৫ হাজার। এবার তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। প্রায় ওই সমান এসেছে বিহার, উড়িষ্যা থেকে।

বর্তমানে বাজার ছেয়ে গেছে রঙিন কাপড়ে। সেই কারণে আর আগের মতো সাদা কাপড় কিনে আলাদা করে রঙে চুবিয়ে রাঙিয়ে তুলতে হয় না রাজুদের।  

যদিও তার মতে, আগের চেয়ে এখন কাপড়ের দাম বেড়েছে অনেকটাই। তবে করোনাকালে দু’বছর জাতীয় পতাকার চাহিদা কম থাকলেও এই বছর মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে চাহিদা। ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৩টি মাপের জাতীয় পতাকা তৈরি করেন রাজু।

পরিবারের পেশা সম্পর্কে রাজু বলেন, দেশ ভাগের সময়ে এই জাতীয় পতাকা বানানো নিয়ে একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল বাবার মনে। কিন্তু এই এলাকার বাসিন্দারা বাবাকে হাওড়া ছেড়ে যেতে দেননি। সেই থেকে আজও বংশ পরম্পরায় পতাকা বানানোর কাজ করে চলেছি আমরা।  

১৫ আগস্ট উষালগ্নে আমার বাসার ছাদেও উড়বে ভারতের জাতীয় পতাকা। তবে সেটা বাবার হাতে তৈরি। আজও যত্ন করে রাখা আছে। স্বাধীনতার সাথে আমাদের পরিবারের আবেগটা অন্যদের থেকে একটু আলাদা। এ দেশটা তো আমারও।

কথার সাথে দ্রুততার সাথে ছুটছে সেলাই মেশিন। শেষ বেলার বরাত সামাল দিতেই ব্যস্ততা। বাইরে তখন পাইকারী ব্যবসায়ীদের ভিড়। আর তা সামলাচ্ছেন তার স্ত্রী আর মা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।