কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন কমিশনের ইঙ্গিত অনুযায়ী, বছর ঘুরলেই (সম্ভবত মার্চ-এপ্রিল) পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে বহু বিতর্কিত সিঙ্গুর ইস্যুকে উস্কে দিলেন স্বয়ং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) শিলিগুড়িতে এক বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেউ কেউ মিথ্যে কথা বলে বেড়াচ্ছে। বলছে, আমি টাটাকে তাড়িয়েছি। আমি টাটাকে তাড়াইনি। সিপিএম তাড়িয়েছে।
এরপরই মমতা বলেন, আপনারা (সিপিএম) লোকের জমি জোর করে দখল করতে গিয়েছিলেন। আমরা জমি ফেরত দিয়েছি। কারো জমি আমরা জোর করে নিই না।
মমতার এই বক্তব্য প্রকাশ পেতেই রাজ্যজুড়ে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে কেউ মজা করে মিম করছে, কেউ প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন। কেউ আবার নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। এরপরই সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি সব রাজনৈতিক দল মুখ্যমন্ত্রীকে একযোগে ‘মিথ্যাবাদী’ বলে ক্ষোভ প্রশমন করেছে।
সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ওনার মিথ্যায় ‘ডিলিট ডিগ্রি’ পাওয়া উচিত। ভাগ্যিস বলেননি, টাটাকে সিঙ্গুর থেকে তাড়ানোর জন্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অনশনে বসেছিলেন, হাইওয়ে এক্সপ্রেস বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বুদ্ধবাবু ও বামেরা মিলে রাজ্যজুড়ে ভাঙচুর চালিয়েছেন। নতুন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে কি আর বলব। বাংলার সর্বনাশ করে চলেছেন। বাংলার ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এত মিথ্যা মানায় না। ওনার পথ আটকে আন্দোলনের জন্যই টাটা বলেছিলেন, আমার মাথায় বন্দুক ঠেকালে আমি কী করতে পারি? এটা ওনার জানা নেই?
রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ইউনেস্কো ভারতের সেরা পূজা কলকাতার দুর্গাপূজাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এবার তালিকায় দেখবেন দেশের সেরা মিথ্যাবাদী বাংলার মুখ্যন্ত্রী। দিদির জন্যই টাটারা সিঙ্গুর ছেড়ে চলে গেছে। বাংলা থেকে একে একে সব শিল্পপতিদের উৎখাতের ডাক দিয়েছেন দিদি। আজ হাতে পায়ে ধরে বিনিয়োগের কথা বলছেন। মানুষ সব বোঝে।
বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, কালীপূজর আগে বড় মিথ্যাকথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল জমি আন্দোলনের জন্য শিল্প বিরোধী, শিল্পপতিদের অপমান করেছেন। এখন অন্য কথা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সাধারণবাসীর অনেকের মত, মানলাম বামেরা টাটাকে তাড়িয়েছে। কিন্তু দিদি তো তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী। কটা শিল্প রাজ্যে এনেছে। আসলে ওনারা বাংলার মানুষকে গাধা মনে করে। বুদ্ধিমান শুধু উনি আর ওনার ভাইপো।
প্রসঙ্গত, সেদিনের মমতার আন্দোলনে সিঙ্গুর থেকে টাটাদের প্রকল্প গুজরাটে সরে গিয়েছিল। সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনকে পুঁজি করেই ২০১১-তে পশ্চিমবঙ্গে পালাবদল হয়। ক্ষমতায় আসে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস। ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি ছিল সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক জমিদাতাদের জমি ফেরাতে আইন তৈরি করা। সেটাও করেছেন তিনি। জমিও ফেরৎ দেওয়া হয়েছে। বাদবাকি জমি সরষে চাষ করার পরিকল্পনাও দিয়েছিলেন। এরপর ২১ সালের নির্বাচনে বিপুল ক্ষমতায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসেন মমতা। বাংলার মানুষ প্রায় ভুলতে বসেছিল। আবার তিনি যেনো এদিন সিঙ্গুর উস্কে দিলেন।
তবে এদিন রাজ্যে বিনিয়োগ নিয়ে শিল্পপতিদের উদ্দেশ্য বলেন, আমি চাই রাজ্যে শিল্প বিনিয়োগ হোক। এখানে শিল্পপতিদের মধ্যে কোনও বৈষম্য করতে চাই না। সবাই সমান সুযোগ পায়। তৃণমূল জমানায় জায়গার তো অভাব নেই। আমি কেন জোর করে জমি নেব?
পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রীর মুখে কর্মসংস্থানের কথা শোনা গিয়েছে। তিনি বলেছেন, আমারা চাই ঢেলে কর্মসংস্থান। কেউ কেউ কুৎসা রটাচ্ছে। আমরা কারও চাকরি খেতে চাই না। আমরা সবাইকে চাকরি দিতে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২২
ভিএস