ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

কলকাতার প্রাণকেন্দ্র নন্দন ভাসছে বাংলাদেশের ‘হাওয়া’য়

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২
কলকাতার প্রাণকেন্দ্র নন্দন ভাসছে বাংলাদেশের ‘হাওয়া’য়

কলকাতা: বাংলাদেশের সঙ্গে ‘হাওয়া’র জনপ্রিয়তা আকাশ ছুঁয়েছে কলকাতায়। করোনা মহামারির কারণে টানা দুই বছর বন্ধ থাকার পর কলকাতার প্রাণকেন্দ্র নন্দনে শুরু হয়েছে ৪র্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব।

৫ দিনের এই উৎসবের শুভ সূচনা ছিল শনিবার (২৯ অক্টোবর)। উৎসবের প্রথমদিনে প্রদর্শিত হয়েছে ‘হাওয়া’, যা নিয়ে চরম উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। কলকাতাবাসীর মতে ‘হাওয়া’র মেকিং বাংলাকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ।

আর সে কারণে সিনেমাটি বাকি কদিন দেখানোর পরিকল্পনা করছেন উদ্যোক্তরা। হাওয়ার টানে কলকাতাবাসী এখন হাওয়ায় ভাসছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে দর্শক আসন না পেয়ে হলের মেঝেতে বসেই দেখছেন চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত হাওয়া। লাইন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। কেউ গানের টানে, কেউ চঞ্চলের টানে, কেউ আবার বাংলাদেশকে ভালোবেসে ভীড় জমিয়েছে নন্দনে।  

প্রবাসী মুম্বাইবাসী বাঙালি অভিনেতা সুব্রত দত্ত বলেন, চঞ্চল চৌধুরী একজন অতি উচ্চমানের অভিনেতা। আমি তো অক্ষয় কুমারের সাথে অভিনয় করেছি। অমিতাভ বচ্চনের সাথে অভিনয় করেছি। হলিউড করেছি। তেলেগু ছবি আলাদা করে করেছি। চঞ্চলের মধ্যে ক্যাপাবিলিটি আছে সব ধরনের অভিনয় করার। হাওয়ার পুরো টিম এবং বিশেষ করে সিনেমার পরিচালক একটা কমপ্লিট প্যাকেজ করেছে। আর সেই হাওয়ার হাওয়া লেগেছে কলকাতায়। একজন অভিনেতা হিসেবে এই রকম ভিড় নন্দনে বহুদিন বাদে দেখলাম। একটা ভালো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। করোনার পর আমি একটু মুষড়ে গিয়েছিলাম। আজকে আবার যেন একটা এনার্জি পেলাম।

কলকাতার গড়িয়া থেকে আগত দেবব্রত বাগচী বলেন, আমরা ভারতীয় কিন্তু হাওয়া সিনেমার সব গান আমাদের মুখস্থ। সেই হাওয়ার টানে লাইন দিয়েছি ৫ ঘণ্টা। তাছাড়া বাংলাদেশের সিনেমার টানে নন্দনে প্রতিবার আসা হয়।  যেহেতু এখানে সেভাবে বাংলাদেশের সিনেমা আসে না, আমরা ইউটিউবে দৌলতে বাংলাদেশের সিনেমা দেখি। বিশেষ করে আমি চঞ্চল চৌধুরীর ফ্যান, তার নাটক শর্টফিল্ম সবই আমার দেখা।

শুধু কলকাতা নয়, মেদিনীপুর জেলা চারঘণ্টা বাস জার্নি করে সঙ্গীকে নিয়ে ‘হাওয়া’র টানে কলকাতার নন্দনে লাইন দিয়েছেন দেবারতী। তিনি বলেন, বুক ভরে হাওয়া নিয়ে এসেছি, হাওয়া দেখেই আমরা যাব। বুকে বাংলাদেশ, হাওয়া দেখবো, একটার শো লাইন দিয়ে হলে ঢুকতে পারিনি, আমরা মিস করতে চাই না, হওয়া দেখেই বাড়ি যাওয়ার বাস ধরবো।

বেহালা থেকে আগত অরিন্দম বলেন, গোটা কলকাতাকে দেখিয়ে দিয়েছে ‘হাওয়া’। একটা ছবিকে ঘিরে এই উন্মাদনা বহু বছর বাদে কলকাতায় দেখা গেল। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখেছি, অপূর্ব সিনেমা ফটোগ্রাফি, অপূর্ব কালার কালেকশন, অপূর্ব এডিট আর চঞ্চল চৌধুরী তো আমার গুরুদেব।

চাকরির টানে কলকাতায় অবস্থান করছেন ঢাকার সাগর। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশি কিন্তু কাজের জন্য কয়েক মাস দেশে ফিরতে পারিনি। ছবিটা দেখতে পাচ্ছিলাম না আর নন্দনে বসে সিনেমাটি দেখার আনন্দটাই আলাদা। লাইন দিয়ে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম কলকাতায় যে চঞ্চল চৌধুরী এবং বাংলাদেশের অভিনেতা অভিনেত্রীদের এত ভালোবাসে, এই বিষয়টা এখানে না এল বুঝতে পারতাম না। আমার খুব ভালো লেগেছে। আমার ধারণাতেই ছিল না যে বাংলাদেশের কলাকুশলীরা এখানে এতটা জনপ্রিয়।

জনপ্রিয়তা দেখে আপ্লুত স্বয়ং অভিনেতাও। তবে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, এর থেকে আনন্দের কিছু হতে পারে না। আমি সব খবর পাচ্ছিলাম। তবে কলকাতার সিনেমা হল হলে যেদিন মুক্তি পাবে সেই দিনের অপেক্ষায় আমি আছি। কারণ একটা উৎসবে খুব অল্প সংখ্যক দর্শক এখানে উপস্থিত হতে পারবে। যারা বাংলাদেশের কাজ পছন্দ করেন যারা দেখতে চান তারা সবাই দেখতে পাবেন কলকাতদার হলগুলোয় মুক্তি পেলে।

কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, হাওয়া নিয়ে যে উদ্দীপনা যে রিয়েকশন দেখেছি জনগণের মধ্যে শেষ পর্যন্ত আমাকে নন্দনের যারা সিনিয়র কর্মকর্তা তারা আমার সাথে যোগাযোগ করেন। তারা বলেন, এত ভীড় আমরা কী করব? এমনিতে ‘হাওয়া’র জন্য আমরা চারটে শো রেখেছিলাম। কিন্তু এই উদ্দীপনা দেখে আরো একটা শো বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ পাঁচ দিনের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে পাঁচ দিনই থাকছে হাওয়া।

তবে শুধু ‘হাওয়া’ নয়, আগামী কটাদিন এভাবেই বাংলাদেশের সিনেমায় গা ভাসাবেন কলকাতাবাসী। মোট ৩৭টি বাংলাদেশি সিনেমা নিয়ে সাজানো হয়েছে কলকাতার চতুর্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। এসব ছবি দেখানো হচ্ছে কলকাতার নন্দনের ১, ২ ও ৩ নম্বর প্রক্ষাগৃহে। শনিবার চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়ে শেষ হবে আগামী ২ নভেম্বর। প্রতিদিন স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রেক্ষাগৃহগুলো।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২
ভিএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।