ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভারত

‘কারো চাকরি যাবে না বলা নেতামন্ত্রী কারা আমি জানি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
‘কারো চাকরি যাবে না বলা নেতামন্ত্রী কারা আমি জানি’

কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত): গত ১৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের পুনর্বহালের আবেদন করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। এবার সেই আবেদন প্রত্যাহারের অনুমতি চাইল তারা।

এই সংক্রান্ত তিনটি আবেদন প্রত্যাহারের অনুমতি চেয়ে বুধবার (২৩ নভেম্বর) কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল এসএসসি। কিন্তু সবদিক খতিয়ে না দেখে আবেদনপত্র প্রত্যাহারের অনুমতি দিতে চাননি আদালত।

এ প্রসঙ্গে এসএসসির তীব্র সমালোচনা করে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, কমিশনকে সামনে রেখে যারা অযোগ্যদের চাকরি বাঁচাতে চাইছেন, তারা যে রাজ্যের কিছু দালাল মুখপাত্র এবং মন্ত্রী, তা আমি জানি। আমি কিছু দালালের নাম বলতে পারি যারা মুখপাত্র বলে পরিচিত এবং কিছু মন্ত্রীর নাম বলতে পারি, যারা প্রকাশ্যে বলেছেন কারও চাকরি যাবে না।

তার দাবি, স্কুল সার্ভিস কমিশনকে সামনে রেখে কেউ কেউ খেলছেন।

এরপরই এসএসসির আইনজীবীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আবেদনে আপনারা লিখেছেন, পদচ্যুত শিক্ষকরা ২ থেকে ৪ বছর চাকরি করছেন এবং এদের কারো বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। আপনি কি জানেন এই অভিযোগ জানানোর কোনো সংস্থা আছে কিনা? যদি না থাকে, তাহলে কোথায় অভিযোগ জানানো যাবে?

পরে তিনি নির্দেশ দেন, আবেদনপত্র দাখিলের সময় অযোগ্যদের যে ফাইল তৈরি হয়েছিল, সেই ফাইল আদালতে পেশ করতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির মাধ্যমে অযোগ্যদের চাকরি পেতে দেব না।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৯ মে মাসে রাজ্য সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ৬ হাজার ৮২১টি শূন্যপদ তৈরি করা হচ্ছে। এই পদগুলিতে গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি, নবম-দশমের শারীর শিক্ষা ও কর্ম শিক্ষার যোগ্য বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আদালতের নির্দেশ ও সব রকম নিয়ম মেনে নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু মূলত এই চারটি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচারপতি পুনর্বিবেচনার জন্য হাইকোর্টে হলফমনামায় আবেদন জমা দিয়েছিল এসএসসি।

হলফনামায় এসএসসি জানিয়েছিল, যারা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছিলেন তাদের পরিবারের কথা ভেবে যেন বঞ্চিত না করা হয়। যারা বঞ্চিত, এসএসসি তাদের জন্য কিছু শূন্যপদ তৈরি করছে। এসএসসির এই আবেদনে গত ১৭ নভেম্বর চটেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুও। বিষয়টি নিয়ে আদালত গত শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) রাজ্য সরকারের কাছে জবাব চেয়েছিলেন।

১৭ নভেম্বর বিচারপতি বলেছিলেন, কী ধরনের কথা! রাজ্য সরকার জানাচ্ছে, যারা যোগ্য অথচ চাকরি পাননি, তারা নিয়োগ পাক! অথচ রাজ্য সরকারের অধীনস্ত এসএসসি, যারা চাকরির সুপারিশ দিয়ে থাকে তারাই বলছে, অযোগ্যদের চাকরিতে বহাল থাকুক! তাদের কথা ভেবে শূন্যপদ তৈরি করছে এসএসসি! সরকারের দুই পক্ষ দুই ধরনের কথা কেনো বলছেন?

সেদিন বিচারপতি বসু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, যারা অবৈধভাবে চাকরি পেয়ে শিক্ষকতা করছেন, তাদের কী শিক্ষক পথে বহাল রাখা যায়? যারা নিজেরা অবৈধভাবে চাকরিটা পেয়েছেন তারা ছোট ছোট শিশুদের কী শিক্ষা দেবেন? এই দুই অবস্থান কেন? এসএসসি কী সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই? যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে অবিলম্বে এসএসএসসি ভেঙে দেওয়া হোক। এটা অবক্ষয়, এভাবে চলতে পারে না।

এরপরই ১৮ নভেম্বর শূন্যপদে স্কুলের কর্মশিক্ষা এবং শরীর শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ দেন কলকাতা হাইকোর্ট। আপাতত ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনোরকম নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে পারবে না পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুল সার্ভিস কমিশন।

এরপরই অবস্থান বদল করে এসএসসি। বিচারপতির অসন্তোষ প্রকাশের পর তাদের আইনজীবী আদালতকে জানান, সংস্থার চেয়ারম্যান লিখিত বার্তা দিয়েছেন। তাই তারা বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের পুনর্বহালের জন্য আর কোনো আবেদন করবে না আদালতে।

বুধবার সেই মামলা ওঠে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। আবেদন প্রত্যাহার করার অনুমতি চায় এসএসসি। তাতেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আমি কিছু দালালদের নাম বলতে পারি যারা মুখপাত্র বলে পরিচিত এবং কিছু মন্ত্রীর নাম বলতে পারি, যারা প্রকাশ্যে বলেছেন কারও চাকরি যাবে না।

তবে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী চান না কারো চাকরি যাক। যারা চাকরি পেয়েছেন রেকর্ড ভালো, তাদের চাকরি থাক, আবরা যারা বঞ্চিত তাদেরও চাকরির ব্যবস্থা করা হোক। বিচারপতি কি সরাসরি শিক্ষামন্ত্রীর দিকে আঙুল তুললেন? এনিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৪ ঘণ্টা, ২৪ নভেম্বর ২০২২
ভিএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।