রাজশাহী থেকে: শিক্ষানগর হিসেবে খ্যাত রাজশাহীতে তৈরি হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক’। হাইটেক পার্ককে ঘিরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে প্রস্তুত হচ্ছে পদ্মাপাড়ের রাজশাহী মেট্রোপলিটন শহর।
রাজশাহী মহানগর এলাকার মধ্যেই পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক। প্রায় ২৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১ দশমিক ৬৩ একর এলাকাজুড়ে হাইটেক পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্পের প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যেই প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।
হাইটেক পার্কের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পার্ক এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এরজন্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করা হচ্ছে জেলার একমাত্র বিমানবন্দরটিকে। নগরে বিভিন্ন সড়ক প্রশস্ত করে চার লেনে উন্নীত করার কাজ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। একইসঙ্গে গড়ে তোলা হচ্ছে পাঁচ তারকা মানের হোটেলসহ বিনোদনের নানা কেন্দ্র।
একান্ত সাক্ষাৎকারে রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলানিউজকে এসব কথা জানান। মেয়র লিটন বলেন, শিল্পায়নের দিক থেকে বরাবরই পিছিয়ে আছে রাজশাহী। হাইটেক পার্কের মাধ্যমে আমরা নতুন দিনের সম্ভাবনায় মুখিয়ে আছি। আর এ হাইটেক পার্কের সঙ্গে যেন এ মহানগর ও জেলার সঙ্গে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয় তার জন্য আমরা কাজ করছি।
রাসিক মেয়র বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে আমরা আকাশ পথের যোগাযোগকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের এখানে যে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরটি আছে সেটিকে আমরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এরইমধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। বিমানবন্দরে আরেকটি রানওয়ে বাড়িয়ে এটি করা হবে। এর বাইরে হাইটেক পার্কের সঙ্গে যেন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয় তার জন্য হাইটেক পার্কগামী নগরের ভেতরের বিভিন্ন সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। যেহেতু এখানে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী আসবেন তাদের গুণগত মানসম্পন্ন থাকার ব্যবস্থার জন্য একটি পাঁচ তারকা মানের হোটেল তৈরি করা হচ্ছে। পদ্মারপাড়েই এটি করা হবে। একইসঙ্গে হাইটেক পার্ক প্রকল্পের আশপাশে পদ্মাপাড়ের পাঁচ থেকে ছয়টি পয়েন্টে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব স্থানে দর্শনার্থীদের বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। এর পাশাপাশি হাইটেক পার্ক প্রকল্প এলাকার মধ্যে একটি কনভেনশন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান রাজশাহীর এ নগর পিতা।
মেয়র লিটন বলেন, এখানে একটি কনভেনশন সেন্টার তৈরি করা হবে। এরইমধ্যে আমরা জায়গা বরাদ্দ পেয়েছি। এ কনভেনশন সেন্টারে বিভিন্ন ধরনের সভা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হবে। এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের হাইটেক পার্কের প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়াতে চেষ্টা করা হবে।
এর বাইরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের মাধ্যমে স্থানীয় স্টার্টাপগুলোকেও সহায়তা করা হবে। এর জন্য স্টার্টাপ প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে একাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির একটি সেতুবন্ধন তৈরিতেও কাজ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একান্ত সচিব ও ওয়ান স্টপ সার্ভিসেসের (ওএসএস) প্রধান সমন্বয়কারী কল্যাণ কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা ও স্টার্টাপগুলোকে নিয়ে কাজ করতে চায় বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এরজন্য তাদের ‘মেন্টরিং’ ও ‘গাইড’ করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ও রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এসব উদ্যোক্তা ও তরুণ আইসিটি পেশাজীবীরা যেন ব্যবসায়িকভাবেও ভালো করতে পারেন তার জন্য ব্যবসায়ীদের স্থানীয় চেম্বারের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ স্থাপনে আমরা কাজ করছি।
হাইটেক পার্কের পুরো প্রকল্প শেষ হলে আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ এ রাজশাহীতেই ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর আইসিটি খাতেই কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২০
এসএইচএস/আরবি