ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

‘সৃষ্টিকর্তার জন্যই কাজ করছি’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩
‘সৃষ্টিকর্তার জন্যই কাজ করছি’

সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জিন্দারিসের একটি খোলা মাঠে এদিক-সেদিক দৌড়াচ্ছেন শতশত লোক। তাদের কঠিন কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।

কিছু একটা তুলছেন, একে অন্যের সঙ্গে কথা বলছেন, কিছু একটা বহন করছেন।  

কাছে যেতেই দেখা গেল ভয়াবহ বাস্তবতা। এই মাঠ আসলে একটি কবরস্থান। ভয়াবহ ভূমিকম্পের আগে এটি খুব বেশি ব্যবহৃত হতো না। গেল ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে।  

ভূমিকম্পের পর এই জায়গাটিকে গণকবরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বড় বড় গর্ত খনন করা হচ্ছে, যেখানে শতশত লোককে  কবর দেওয়া হচ্ছে। এসব লোকজন ভূমিকম্পে নিহত হন।  

ওই মাঠে লোকজন সামনে পেছনে দৌড়াচ্ছে। মরদেহগুলো ট্রাক থেকে নামিয়ে বস্তা থেকে বের করে গর্তের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন কেউ কেউ। এসব গর্ত এতই বড় যাতে ১০০ থেকে ১৩০ জনকে একসঙ্গে কবর দেওয়া যায়।  

কোনো কোনো মরদেহ বহন করতে দুইজনেরও প্রয়োজন। অনেকের মরদেহ আবার ছোট। এগুলো মূলত শিশুদের মরদেহ।  

মাঠে কাজ করছেন ২১ বছর বয়সী জিহাদ আহমেদ আল-ইব্রাহিমি। তিনি সিমেন্টের ব্রিজব্লক সংগ্রহ করছেন, যা গর্তগুলোর সারিতে ব্যবহৃত হয়। মরদেহগুলো ব্রিজব্লকের ওপর রাখা হয়, পরে মার্বেল স্ল্যাব মরদেহের ওপর রাখা হয়। এরপর গর্ত ভরাট করে দেওয়া হয়।  

প্রতিদিনই এই মাঠে আসেন জিহাদ। সৎকারের কাজে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সাহায্য করতে আসেন তিনি।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, আমি আজাজ ক্যাম্পে থাকি। আমি ও আমার পরিবার ঘরছাড়া। আমরা এখন তাঁবুতে আছি। এই কারণে ভূমিকম্পে আমাদের খুব ক্ষতি হয়নি।

তিনি বলেন, তবে সত্যি বলতে আমরা ভয় পেয়েছিলাম। এরপর ভাবতে শুরু করি, যারা শহরে বাস করেন, তাদের জন্য অবস্থা কতটা ভয়াবহ। আমাদের লোকজন যারা শহরে বাস করেন তাদের কথা ভাবতে শুরু করে। জানতাম, অনেক ক্ষতি হবে।  

জিহাদ বলেন, আমরা শুনেছিলাম যে, জিন্দারিসে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাই আমিসহ ৩০-৪০ জন লোক প্রতিদিন সকালে এসে এই কবরস্থানে সৎকারে সাহায্য করি।  

তিনি বলেন, লোকজন নিজের গাড়িতে করে সকালে ৪০ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে জিন্দারিসে আসেন, পরে রাতে আজাজে ফিরে যান। এই অঞ্চলে ১২ বছর ধরে যুদ্ধ চলছে। এর মধ্যে এই কাজ সহজ কিছু নয়। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ভূমিকম্পের কারণে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।  

নিহত লোকেদের নাম যতটা সম্ভব লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। কবরের পাশে একটি খাড়া দণ্ডে তাদের নাম লেখা থাকে।

জিহাদ বলেন, আমরা লোকজনকে কবর দিই এবং জানাজা নামাজ পড়ি। কোনো কিছুর জন্য আমরা টাকা নিই না। সৃষ্টিকর্তার জন্য আমরা এই কাজ করছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।