ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ন্যাটো সম্মেলনে কী পেলেন জেলেনস্কি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
ন্যাটো সম্মেলনে কী পেলেন জেলেনস্কি?

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইংলিশ রক ব্যান্ড রোলিং স্টোনসের ভক্ত হতে পারেন, আবার না-ও হতে পারেন। তবে এই ন্যাটো সম্মেলনের পর তিনি সম্ভবত এই ব্যান্ডের একটি গানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন।

গানটির শিরোনাম, ইউ কান্ট অলওয়েজ গেট, হোয়াট ইউ ওয়ান্ট; অর্থাৎ আপনি যা চান, সবসময় আপনি তা পান না।  

অনেক আশা নিয়ে লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে আসেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি এই আশ্বাস খুঁজছিলেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তার দেশ ন্যাটোতে যোগ দেবে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক জোটের সদস্যপদ চেয়েছিলেন। সদস্যপদ পেলে হয়তো রাশিয়ার সৈন্যরা ইউক্রেনের ভূমি আর কেড়ে নিতে পারবে না।

এসবের পরিবর্তে জেলেনস্কিকে কেবল বলা হয়, ইউক্রেনকে সদস্য হওয়ার জন্য তখনই আমন্ত্রণ জানানো হবে, যখন মিত্ররা সম্মত হবে এবং শর্ত পূরণ হবে। এ পর্যন্তই, সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে কোনো অঙ্গীকার আসেনি।
 
আশ্চর্য হওয়ার কিছুই ছিল না, যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সম্মেলনে ঠিক আগ মুহূর্তে আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করেন। সদস্যপদ নিয়ে ন্যাটো নেতাদের দিনক্ষণ বিষয়ে কোনো আশ্বাস না দেওয়াকে জেলেনস্কি অযৌক্তিক হিসেবে আখ্যা দেন। এই পরিস্থিতিকে তিনি অনিশ্চিত বলেও অভিহিত করেন।  

জেলেনস্কি এই বিশ্বাসে ক্ষুব্ধ হন যে, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়টি হয়তো রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ-পরবর্তী আলোচনার ক্ষেত্রে দর কষাকষির একটি সুযোগ তৈরি করবে।    
 
কিন্তু প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ন্যাটো নেতাদের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাতের পর কূটনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে আসে। পরিস্থিতি বদলেছে, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেবে, এ নিয়ে তাকে আশ্বস্ত করতে বুধবার তারা উৎসাহ দেখান।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, ইউক্রেন জোটের অন্তর্ভুক্ত। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, বুধবার তারা সমকক্ষ হিসেবে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে তারা মিত্র হিসেবে সাক্ষাৎ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেলেনস্কিকে বলেন, ইউক্রেন সঠিক পথেই এগোচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, এই সম্মেলন দেখায়, এখন একটি সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে যে, ইউক্রেন ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, ইউক্রেন যোগ দেবে কি না, সেই প্রশ্ন করার মতো কোনো দেশ ছিল না, শুধুমাত্র প্রশ্ন ছিল, কবে যোগ দেবে।

আকাঙ্ক্ষার ঝুলিতে করে কিয়েভে নিয়ে যাওয়ার জন্য সম্মেলনে উষ্ণ অনেক শব্দই জেলেনস্কির জন্য ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও কিছু বাস্তব প্রাপ্তি। সম্মেলন থেকে একটি প্রতিশ্রুতি মেলে যে, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া কিছুটা সহজ করা হবে। আরেকটি হলো ন্যাটো-ইউক্রেন কাউন্সিল গঠন, যা কিয়েভ জোটের বৈঠক ডাকার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারে। সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যটি হলো বিশ্বের কয়েকটি শক্তিধর দেশের মাধ্যমে তৈরি নতুন, দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি।
 
জি-৭ নেতারা বলেছেন, ন্যাটোতে যোগদানের আগে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনের জন্য সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার প্যাকেজের ক্ষেত্রে তারা নতুন দ্বিপাক্ষিক প্রতিশ্রুতিতে সম্মত হবেন। এর মধ্যে যুক্ত হবে আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, দূরপাল্লার মিসাইল, যুদ্ধবিমান, আরও প্রশিক্ষণ, সাইবার প্রযুক্তি সহায়তা। জেলেনস্কি এটিকে- গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বিজয় হিসেবে অভিহিত করেছেন।

অবশ্য এর মধ্যেই ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসের সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় ইউক্রেনকে সতর্ক করে বলেন যে, ইতোমধ্যে দেওয়া সহায়তার জন্য দেশটির আরও কৃতজ্ঞতা দেখানো উচিত।

এটি কোনো অ-কূটনৈতিক বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ ছিল না, বরং এক সমর্থক মিত্রের কাছ থেকে আসা অকপট পরামর্শ ছিল। তিনি বলছিলেন যে, ইউক্রেনের আরও ভালোভাবে বোঝা উচিত, রাজনৈতিক চাপ তাদের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশগুলোর জন্য সীমাবদ্ধতা তৈরি করে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। অস্ত্র কেনার তালিকা নিয়ে ওয়াশিংটনে হাজির হওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে আমাজনের শাখা হিসেবে দেখার মতোই। তিনি বলেন, এটি অবধারিতভাবেই গুঞ্জন সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।  

স্পষ্টতই এটি ভিলনিয়াসে কিছুটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।  

ন্যাটোর ঐক্য প্রদর্শনের জন্য পরিকল্পিত একটি শীর্ষ সম্মেলনে বেন ওয়ালেসের সেই মন্তব্য অবশ্যই অ-কূটনৈতিক ছিল। ঋষি সুনাককে জোর দিয়ে বলতে হয়েছিল যে, ইউক্রেন সবসময় কৃতজ্ঞতা দেখিয়ে এসেছে। যখন সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কিকে সেই মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তখন তিনি হতবাক হয়ে যান। এ সময় স্টলে বসে থাকা তার নিজের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জেলেনস্কি বলেছিলেন যাতে বেন ওয়ালেসকে কল করে জানতে চান যে, তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন।

এসবই অবশ্য কিছু খবরের শিরোনামকে প্ররোচিত করবে, যাতে বলা হবে, ন্যাটো ও ব্রিটিশ সরকার অনুশোচনা করতে পারে। তবে সম্ভবত ওয়ালেস অসতর্কভাবেই এই যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ওপর আলোকপাত করেন।  

প্রায় দেড় বছর ধরে ইউক্রেনের দাবিগুলো পশ্চিমের বিভিন্ন রাজধানীতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা কার্যকর হয়েছে৷ তবে কিয়েভ সবসময়ই অসন্তুষ্ট ছিল, এটি সবসময় আরও বেশি চেয়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলো অবশ্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। কাঁধে মাউন্ট করা ক্ষেপণাস্ত্র থেকে সাঁজোয়া যান, প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্ক পর্যন্ত সরবরাহ করছে, এমনকি এখন ক্লাস্টার বা গুচ্ছ যুদ্ধাস্ত্রও দেওয়ার কথাও হয়েছে।  

তবে ভিলনিয়াসে- না মানে না শব্দটিই শুনেছে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো ইউক্রেনের দাবি মেনে নেয়নি এবং দ্রুত দেশটিকে জোটের সদস্য করার বিষয়ে কৌশলগত সতর্কতা বেছে নিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জন্য এটি সম্ভবত একটি কূটনৈতিক বাস্তবতার পরীক্ষা। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ পশ্চিমে ইতোমধ্যে দংশন শুরু করেছে এবং এটি বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির রূপ নির্ধারণ করবে। এর মধ্যেই তাকে এখন কাজ করতে হবে। শিক্ষার বিষয়টি হলো- আপনি যা চান, সবসময় আপনি তা পান না।  

সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।