ঢাকা: বাসার দরোজায় নিরাপত্তারক্ষীর রাখা বন্দুক দেখে লোভ সামলাতে পারেননি ২১ বছর বয়সী সেলফি-আসক্ত তরুণী। তড়িঘড়ি বন্দুকটি হাতে নিয়ে নিজের স্মার্টফোনে ক্লিক করলেন একটি সেলফি।
সেলফি তুলতে গিয়ে এ ধরনের অসংখ্য দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী। পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকে। এরকম অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির খবরেও ঝুঁকিপূর্ণ সেলফি তোলা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
তবে, এবার বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ সেলফি তোলা বন্ধ করতে প্রচারণায় নেমেছে পশ্চিমা প্রযুক্তি-সংস্কৃতি থেকে অনেকটা বিমুখ রুশ সরকার। মস্কোর নীতি-নির্ধারকদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ খবর দিচ্ছে।
‘লাখো লাইক আপনার স্বাস্থ্য এবং আপনার জীবনের চেয়ে কখনোই বেশি মূল্যবান নয়’ শীর্ষক এ প্রচারণা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছে রুশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে এ নিয়ে একটি সচিত্র নির্দেশনামাও প্রকাশ করেছে তারা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সেলফি-বিপদ সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখভাল করবে পুলিশ।
প্রচারণায় রুশ সরকার তার জনগণ- বিশেষত তারুণ্যকে সেলফি তোলার ক্ষেত্রে সতর্ক করে বলছে, যখন আপনি একটি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়েছেন, তখন কোনো সেলফি তোলা উচিত হবে না। এতে বন্দুক হাতে সেলফি তুলতে গিয়ে নিজের মাথায় গুলিবিদ্ধ করা ২১ বছর বয়সী তরুণীর মতো অকালে প্রাণ হারাতে হতে পারে, যা আপনার স্বজনদের দুঃখের সাগরে ভাসাতে পারে।
নির্দেশনামায় রেলের পাত, ট্রেনের ছাদ, বাসা বা ভবনের ছাদ, পাহাড়ের বিপজ্জনক স্থানে সেলফি তোলাকে অনুৎসাহিত করছে রুশ সরকার। অনুৎসাহিত করছে পশুর সঙ্গে সেলফি তোলাকেও। তারা জানাচ্ছে, সম্প্রতি সাপের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে কাটা পড়েছেন দুই ব্যক্তি। রেলের ছাদে সেলফি তুলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন দুই কিশোর। পাহাড়ের ওপরে সুন্দর একটি সেলফি তুলতে গিয়ে বড়ো দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন অনেকে।
রুশ সরকারের তথ্যানুসারে, চলতি বছর দেশটিতে ১০ জন মানুষ সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। অন্তত ১০০ মানুষ গুরুতর আহত কিংবা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
অবশ্য, রুশ সরকার তার জনগণের নিরাপত্তায় এ ধরনের প্রচারণায় নামলেও বিপদের খবর কম আসছে না মার্কিন মুলুক বা দূর প্রাচ্য থেকেও। ভালুকের সঙ্গে সেলফি তুলে এক ব্যক্তি বিপদে পড়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়। পাশাপাশি গত বছর বাঘের সঙ্গে সেলফি তুলতেও সেখানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এছাড়া, দেশটির এক ফুটবলার ৠাকুনের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হলে ক্ষিপ্ত হয়ে সেটিকে মেরে ফেলেন বলেও খবর রয়েছে।
কিছুদিন আগে জাপানে একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হলে ওই মুহূর্তের সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কিছু আসক্ত ব্যক্তি। তারা নিজেদের স্মার্টফোন ও ট্যাব নিয়ে সেলফি তোলায় এতোই মত্ত থাকলেন যে- একসময় কিছু লাভা এসে ক’জনকে ভস্মিভূতও করে ফেলে।
প্রাযুক্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেবল রুশ সরকারই নয়, জননিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পুরো বিশ্ববাসীরই উচিত, বিপজ্জনক সেলফি বন্ধে প্রচারণায় নামা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৫
এইচএ/