ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

প্যারিস হামলা

লাজুক বালক থেকে নরঘাতক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৫
লাজুক বালক থেকে নরঘাতক ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: গত আগস্টে তার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় আনা অ্যামিমোরের। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও সবকিছু স্বাভাবিক ছিল।

পরিবারের সদস্য ও পোষা বেড়ালটার প্রতি ভালোবাসা জানাতে বলেছিল স্যামি অ্যামিমোর (২৮)। এরপরই অনেক কাজ আছে জানিয়ে বোনের সঙ্গে কথা শেষ করে সে।

এরপর আনা অ্যামিমোর গত ১৩ নভেম্বরের পর ভাইয়ের খবর পান। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল, যে ভাইয়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন, যে ভাই ছিল নম্র-ভদ্র ও আমুদে স্বভাবের, সেই ভাই-ই কিনা নরঘাতকে পরিণত হয়েছে। সে আর তার দল প্যারিসে ১৩০ জন মানুষকে হত্যা করেছে। আহত করেছে সাড়ে তিন শতাধিককে।

নিজের ছবি ও প্রকৃত কণ্ঠ ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় এমনভাবেই নিজের ও পরিবারের অভিব্যক্তির কথা জানিয়েছেন আনা অ্যামিমোর। স্যামি প্যারিসে বাসচালক ছিলেন বলেও এসময় জানান তিনি।

গত ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে থিয়েটার হল বাতাক্লঁ ও স্তেতে দ্য ফ্রান্স স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকাসহ পৃথক ছয়টি স্থানে হামলা চালায় জঙ্গিরা। পরদিন, ১৪ নভেম্বর ইসলামিক স্টেট (আইএস) এসব হামলার দায় স্বীকার করে নেয়। বাতাক্লঁয়ে হামলা চালানো জঙ্গিদের একজন স্যামি অ্যামিমোর।

সাক্ষাৎকারে আনা বলেন, খবরটা প্রথম যখন আমার কানে আসে, আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। এর পরপরই হতাশা আর কষ্টে কান্নায় ভেঙে পড়ি। কিন্তু যখন বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলো এক করতে শুরু করলাম, আমার মনে হলো, যা শুনেছি ভুল শুনেছি। অবশ্যই কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতিদিনই আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি, কি ঘটলো, কেন ঘটলো? স্যামি আর আমি তো একই গর্ভে জন্মেছি। একসাথে বেড়ে উঠেছি। তাহলে আমাদের জীবন কেন এভাবে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হলো?

আনা অ্যামিমোর এখনও বিশ্বাস করতে পারেন না, তার ছোটভাই এমন এক হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারে। তিনি বলেন, সে দারুন মানুষ ছিল। খানিকটা লাজুক স্বভাবেরও। সে এমন একজন মানুষ ছিল, যার ওপর ভরসা করা যায়। হাসতে ভালোবাসতো ও।

প্যারিসের যোগাযোগ নেটওয়ার্কের (আরএটিপি) পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছিল স্যামি, গর্বের সঙ্গে জানান আনা।

কিন্তু আইএসের সঙ্গে যোগ দিতে স্যামি যখন সিরিয়ায় পাড়ি জমালো, আনার সেই লাজুক নম্র ছোট্ট ভাইটিই পরিণত হলো নরঘাতকে। ধারণা করা হচ্ছে, স্যামি সিরিয়ায় কয়েক বছর অবস্থান করেন।

আনা জানান, যখন সে বাড়ি ত্যাগ করে, সবাইকে জানায়, ফ্রান্সের দক্ষিণে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাচ্ছে। সে যে আর ফিরবে না, ধারণাই করতে পারেনি কেউ।

আনার ধারণা, তার ভাইয়ের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তনের সূচনা ঘটে ইন্টারনেটে। তাদের পরিবার কখনোই ধর্মীয় ব্যাপারগুলোয় কট্টর ছিল না। কিন্তু চার বছর আগে স্যামির আচার-আচরণে পরিবর্তন আসতে শুরু করে।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রথমে তার পোশাকে পরিবর্তনটা ধরা পড়ল। ধীরে ধীরে তার সঙ্গীত পছন্দ, বাইরে যাতায়াত, নিজেকে উপস্থাপনার মধ্যে পরিবর্তনগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সে নিজে তাকে পরিবর্তন করেনি। পার্শ্ববর্তী ড্রানসি এলাকায় নিয়োগদাতাদের খপ্পরে পড়েছিলো সে। তারাই মগজধোলাইয়ের কাজটা করে। স্যামির সঙ্গে প্রায়ই দেখা করতে আসতো তারা।

স্যামির পরিবর্তনের বিষয়টি ২০১২ সালে প্রথম ফরাসি নিরাপত্তা বিভাগের নজরে আসে। সে বছর তিনি ইয়েমেন সফরের চেষ্টা করে ধরা পড়েন এবং তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়। তখন থেকেই স্যামির পরিব‍ার তাকে সুপথে আনতে সচেষ্ট হয়।

আনা বলেন, আমরা তাকে সুপথে আনার চেষ্টা করেছি। চারপাশের মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করেছি, সহায়তা চেয়েছি। কিন্তু কেউ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়নি।

২০১২ সালে আটক হওয়ার পর বিচার বিভাগীয় নজরদারির আওতায় রাখা হয় স্যামিকে। সেই সঙ্গে নিয়মিত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়। কিন্তু তিনি কর্তৃপক্ষের শর্ত ভঙ্গ করেন। ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ধারণা করা হয়, এই সময়টাতেই স্যামি সিরিয়া যান।

ফরাসি সংবাদপত্র লে মন্ডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যামিমোরের বাবা জানিয়েছিলেন, ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে ২০১৪ সালের জুন মাসে তিনি সিরিয়া যান। কিন্তু আনা এ ব্যাপারে কিছু বলতে অপরাগত প্রকাশ করেছেন।

স্যামিকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন উল্লেখ করে লে মন্ডেকে তার বাবা বলেছিলেন, সাক্ষাতের সময় ছেলে বেশ শান্ত ছিল। তার ঠোঁটে ছিল হাসি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৫
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।