ঢাকা, রবিবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ধর্ষণই বেতন দক্ষিণ সুদানে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
ধর্ষণই বেতন দক্ষিণ সুদানে! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: প্রাচীন রোমে সেনাদের বেতন হিসেবে লবণ দেওয়া হতো। মাঝখানে কেটে গেছে বহু সময়।

এখন অবশ্য সেনাদের বেতন নগদ অর্থেই মেটায় সরকারগুলো। কিন্তু দক্ষিণ সুদানে এবার সেনাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে ধর্ষণের বিনিময়ে। এমন অস্বাভাবিক ও গা শিউরে ওঠা বিভৎসতায় স্তম্ভিত পুরো বিশ্ব।

‘চোখের সামনে স্বামীকে হত্যা করলো সেনারা। আর তারপরই ১৫ বছর বয়সী কিশোরীর ওপর হায়নার মতো ঝাপিয়ে পড়লো ১০ জন। ’- এই দু’টো লাইন একটা নির্দিষ্ট ঘটনাকে উপস্থাপন করলেও এই চিত্রনাট্য এখন নিত্যদিনের ঘটনা দক্ষিণ সুদানে।

খোদ জাতিসংঘ বলছে, দেশটির সরকার তার সেনা ও মিলিশিয়াদের জন্য বেতন হিসেবে ধর্ষণকে বৈধতা দিয়েছে।

শুক্রবার (১১ মার্চ) প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করেছে বিশ্বসংস্থাটি। এতে জানানো হয়, ২০১৫ সালে শুধুমাত্র দেশটির তেলসমৃদ্ধ ইউনিটি রাজ্যেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার তিনশ নারী।

দেশটির এমন পরিস্থিতিকে বিশ্ব মানবতার ‘সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চেহারা’ বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূত জেইদ রা’আদ আল আল হুসেইন।

এক নারী প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর স্বামীকে হত্যার পর তার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে গোটা দশেক সেনা। পাষণ্ডের মতো তাকে গণধর্ষণ করে তারা।

জাতিসংঘ বলছে, দক্ষিণ সুদানে সেনাদের জন্য অপহরণ, ধর্ষণ-গণধর্ষণ, হত্যা-গণহত্যার বৈধতা দিয়ে রেখেছে দেশটির সরকার।

প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, আমাদের মূল্যায়নকারী দল তথ্য পেয়েছে, দক্ষিণ সুদানিজ আর্মির (এসপিএলএ) সঙ্গে কাজ করা দেশটির সশস্ত্র মিলিশিয়াদের সঙ্গে সরকারের ‘যেকোনো কিছু করার ও যেকোনো কিছু ছিনিয়ে নেওয়ার’ চুক্তি রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, এ চুক্তির পর দেশটির সেনারা বিভিন্ন বাড়িতে হানা দিয়ে সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া, ধর্ষণ এবং নারী ও কিশোরীদের অপহরণ শুরু করে। এগুলোই তাদের বেতন বলে ধরা হয়।

এছাড়া, বিরোধীদের সমর্থনের অভিযোগে দেশটিতে শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক অনেককেই জীবন্ত পুড়িয়ে বা শিপিং কন্টেইনারে পুরে শ্বাসরোধ করে কিংবা গাছের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে হত্যা করেছে সেনারা। কাউকে কাউকে তো কেটে টুকরো টুকরোও করা হয়েছে।

অপর এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও দক্ষিণ সুদানের সেনাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাটির দাবি, এ অভিযোগের পক্ষে তাদের কাছে প্রমাণও রয়েছে।

প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর মাসে ৬০ জনেরও বেশি নিরস্ত্র মানুষকে শিপিং কন্টেইনারে পুরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে সেনারা। হত্যার পর তাদের দেহগুলো ইউনিটি রাজ্যের লীর শহরের একটি মাঠে পুঁতে ফেলা হয়েছে।

অ্যামনেস্টির লামা ফাইখ বলেছেন, দেশটির সরকারি বাহিনীর সদস্যরা শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। নির্যাতন করে ধীরে ধীরে তাদেরকে বিভিষিকাময় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, ঘটনা জানতে তারা ৪২ জনেরও বেশি প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এর মধ্যে ২৩ জন দাবি করেছেন, তারা সরাসরি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে দেখেছেন। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কিশোরও ছিল।

২০১১ সালে সুদানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর দক্ষিণ সুদান ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এরপর গত তিন বছরে সেখানে প্রাণ গেছে হাজারো মানুষের। ঘরছাড়া হয়েছেন লাখেরও বেশি।

তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির সরকার। প্রেসিডেন্ট সালভা কিইরের মুখপাত্র আতেনি ওয়েক আতেনি বলেছেন, আমাদের আইন রয়েছে এবং আমরা সে অনুসারেই কাজ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।