ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মুহাম্মদ আলীর সঙ্গে ৩০ বছরের পত্রমিতালি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৬
মুহাম্মদ আলীর সঙ্গে ৩০ বছরের পত্রমিতালি ছবি-সংগৃহীত

ঢাকা: এ যুগে অনেকের কাছে কলম বন্ধু বা পত্রমিতালির বিষটি অজানা-অচেনা ঠেকতে পারে। তবে এক সময় বিশ্বজুড়ে দূরের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা ভাব জমানোর উত্তম মাধ্যম ছিলো ডাক যোগে পাঠানো হাতে লেখা চিঠি।

দূরের মানুষের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমেই মূলত পরস্পরের মধ্যে গড়ে উঠতো পত্রমিতালি বা কলম বন্ধুত্ব। এ এক অন্য রকম সম্পর্ক। যা বর্তমান ফেসবুকীয় অস্থির সম্পর্কের মতো নয়।

তেমনই এক কলম বন্ধুর সন্ধান পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটেল শহরে। স্টেফানি মেইড নামে এক নারীর সঙ্গে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলীর ৩০ বছর ধরে কলম বন্ধুত্ব বা পত্রমিতালি ছিলো। স্টেফানি মেইডকে লেখা মুহাম্মদ আলীর হাতে লেখা চিঠি ও আঁকা ছবিসহ শুক্রবার (১০ জুন) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বিশেষ স্টোরি প্রকাশ করে।

মাত্র ১০ বছর বয়সে জগদ্বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধাকে চিঠি লেখন স্টেফানি মেইড। সবাই বলেছিলেন, মুহাম্মদ আলী ওই চিঠির জবাব কখনই দেবেন না। বিশ্বের এতো বড় তারকা খুদে একটি মেয়ের চিঠির জবাব কেনই বা দেবেন! সবাইকে অবাক করে তিন সপ্তাহ পরেই মুহাম্মদ আলীর লেখা চিঠির জবাব পাওয়া গেলো। বিস্মিত হলো সবাই। যে চিঠি স্টেফানি মেইডের জীবন বদলে দিয়েছিলো।

স্টেফানি মেইড বলেন, বিশ্বজুড়ে সে অবিশ্বাস্য অ্যাথলেট ও মানবিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আলী আমার কাছে স্রেফ বন্ধু। আমার জীবনের ওপর তার একটি বড় প্রভাব আছে।

স্টেফানির চিঠির জবাবে আলী লিখেছেন, ‘প্রিয় স্টেফানি, সুন্দর চিঠির জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমি আশা করি, একদিন তুমি দেখা করবে। আমি আমার সব ভক্তদের তাদের বাবা-মাকে আমার জন্য শুভকামনা করতে, তাদের প্রতি আমরাও আছে ভালোবাসা। আল্লাহ সব সময় তোমাকে পরম সুখে রাখুক এবং সুন্দর পথে রাখুক, এই প্রার্থনা করি। মুহাম্মদ আলীর ভালোবাসা নিও। ’

‘আমার আট-দশটা ছেলে মেয়ের মতো স্বাভাবিক শৈশব ছিলো না। আমার বয়স যখন চার, তখন আমার বাবা প্রতিবন্ধী হয়ে ঘরে পড়ে ছিল। অন্য ছেলেমেয়েরা যখন বাইরে খেলধুলা করতো। আমাকে তখন ঘরে বসেই কাটাতে হয়েছে। বসে-বসে আলীকে টিভিতে দেখেছি। আমরা আলীর মুষ্টিযোদ্ধে ভিডিও টেপে দেখতাম’- যোগ করেন স্টেফানি।

তিনি বলেন, ‘যখন আমি স্কুলে যেতাম, আমরা বন্ধুরা সুপারম্যান সম্পর্কে গল্প করতো। কিন্তু আমার কাছে ওসব গল্প তুচ্ছ মনো হতো। কারণ আমার ছিলো আলী। সে ছিলো আমার ব্যক্তিগত সুপার হিরো। ’

চিঠিতে আমি তাকে গভীরতম গোপন কথাও বলেছি। আলী আমার প্রত্যেকটি চিঠির উত্তর দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এভাবেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গভীর থেকে গভীরতম হয়। এরপর ১৯৯২ সালে সিয়াটেল শহরে আলী এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসার খবর পয়ে স্টেফানি সেখানে গেলে দু’জনের প্রথম দেখা হয়। তারপর থেকে দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও হৃদ্যতাপূর্ণ হয়। আলীর মৃত্যু অবধি যে সম্পর্ক অটুট ছিলো বলে জানান স্টেফানি।

২০১৪ সালে স্টেফানির গোটা পরিবারকে আলী তার বাসায় দাওয়াত করেছিলেন। যেটি তাদের জন্য বিশেষ মুহূর্ত ছিলো। যার মাধ্যমে স্টেফানির প্রতিবন্ধী বাবা তার স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান।

আলীর স্মৃতি রোমন্থনে স্টেফানি মেইড আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আলীকে আমি জিঞ্জেস করেছিলাম, আমি তাকে কতটা ভালোবাসি? সে কোনো কথা বলেনি। তার চোখ দু’টি ছলছল করছিলো এবং সে আমার হাত চেপে ধরে আমার সঙ্গে আলিঙ্গন করেছিলো, সেদিন আলী আমার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছিলো। তখন আমিও কোনো কথা বলিনি, শুধু অনুভব করেছি। ’

‘সে সর্বকালের সর্বসেরা মুষ্টিযোদ্ধা যেমন সত্য, সে একজন ভালো মানুষ সেটাও একইরকম সত্য’ বলে উল্লেখ করেন স্টেফানি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৬
টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।