ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে কোটিপতি বৃদ্ধকে বিয়ের অভিনয়, নারী আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৯ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৬
সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে কোটিপতি বৃদ্ধকে বিয়ের অভিনয়, নারী আটক ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বৃদ্ধ ধনকুবের। বয়স ৭২।

অসুস্থতা এতোটাই চেপে ধরেছে যে, বোঝাই যাচ্ছে ‘শিগগির’ হয়তো ইহলীলা সাঙ্গ হবে তার। কিন্তু তার যে কাড়িকাড়ি অর্থ-সম্পদ রয়ে যাচ্ছে, তা ভোগ-দখল করবে কে?

 

এই প্রশ্ন মাথায় ঘুরতেই চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো এক ‘পরিচিত’ নারীর। বৃদ্ধকে বুঝতে না দিয়ে ওই লোভাতুর নারী তার ‘সেবা-শুশ্রুষার’ জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু বৃদ্ধ তার ‘চির বিদায়ের স‍ুর’ বুঝতে পেরে সেই প্রস্তাব করে দিলেন নাকচ।

 

‘সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠছে না’ দেখে ওই নারী এবার ‘আঙ্গুল বাকা’ করলেন। তিনি ‘কৌশল খাটিয়ে’ বিয়ে করে ফেললেন বৃদ্ধকে। বিয়ের ১৮ দিন পর মারা গেলেন বৃদ্ধ। ওই নারী হাতিয়ে নিতে থাকলেন তার রেখে যাওয়া অগাধ অর্থ-সম্পত্তি।

কিন্তু প্রতারণার জোর টেকে তক্ষণ? টিকলো না তাইওয়ানের ৫৫ বছর বয়সী হুয়াং কুয়ান-চেং নামে ওই নারীর চালাকিও। পুয়া নামে সিঙ্গাপুরের ওই বৃদ্ধ কোটিপতির সঙ্গে ‘বিয়ে খেলা’ খেলে তার অর্থ-সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টার অভিযোগে আটক হয়েছেন আইনের জালে। আটক হয়েছেন লিও ওয়েন-পিন (৬৩) নামে তার এক সহযোগীও।

আলোচিত এ ঘটনাটি এখন তদন্ত করছে তাইওয়ানের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইবি)।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুয়ার সঙ্গে ৩০ বছর আগে একটি অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় সেসময়কার তরুণী হুয়াংয়ের। দীর্ঘ সময় পর ২০১৪ সালে আবারও দেখা হয় তাদের।

পুয়া সিঙ্গাপুরের নাগরিক হলেও তার ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য এক বন্ধুর পরামর্শে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তাইওয়ানে আসেন। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় তাইওয়ানিজ নাগরিক হুয়াংয়ের।

সিআইবি জানায়, চিকিৎসার জন্য ওই ডিসেম্বরে তাইওয়ানে এসে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই স্বদেশে ফেরত যাওয়ার কথা পুয়ার। কিন্তু প্রায় ৪২ দিন হাসপাতালে থাকতে হয় তাকে। আর এই ৪২ দিন তার সঙ্গে থেকে হাসপাতালের যাবতীয় ‘খরচাপাতি ও অন্যান্য কার্যক্রম’ দেখেন হুয়াং ও তার সহযোগী লিও।

চিকিৎসা চলাকালে পুয়া যোগাযোগ অক্ষম হয়ে পড়লে তার হয়ে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন হুয়াং। পরের বছর জানুয়ারিতে তাইওয়ানে আসেন পুয়ার বোনসহ কয়েকজন।

এখানে এলে তারা জানতে পারেন, বৃদ্ধ পুয়া বিয়ে করেছেন হুয়াংকে। কিন্তু বিয়ের ১৮ দিনের মাথায় মৃত্যু হয় পুয়ার। এরপর পুয়ার স্বজনদের জানানো হয়, তার চিকিৎসা বাবদ এরইমধ্যে ১০ লাখ তাইওয়ানি ডলার (২৪ লাখ টাকার বেশি) খরচ হয়ে গেছে।

পরে হাসপাতালের পক্ষ থেকে ছাড়পত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র দেওয়া হলে সেখানে স্বজনরা সন্দেহজনক অসংগতি দেখতে পান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দু’পক্ষই নিরীক্ষা করে কাগজপত্রে অসংলগ্নতা শনাক্ত করে।

পুয়ার বোন বলেন, বিয়ের ও হাসপাতালের কাগজপত্রের স্বাক্ষরে একেবারেই মিল নেই। বিয়ের যে কাগজ তৈরি হয়েছে সেখানকার লেখা আমার ভাইয়ের হাতের নয়। তাছাড়া, ভাই আমাদের কখনোই বলে যাননি, তিনি আবার বিয়ে করতে পারেন। এই বয়সে বিয়ে করার যৌক্তিকতাও আসতে পারে না।

এই সন্দেহের বিষয়টি তাইওয়ান কর্তৃপক্ষকে জানালে সিআইবি প্রাথমিক তদন্তে হুয়াংয়ের ‘চতুরতা’ ধরতে পারে। তৎক্ষণাৎ তাকে আটক করে। এরপর তার তথ্য মতো আটক করে সহযোগী লিওকে। দু’জনেই প্রতারণার প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

সিআইবির কর্মকর্তারা বলেন, হুয়াং প্রাথমিকভাবে বৃদ্ধ পুয়ার ১০ কোটি তাইওয়ানি ডলার (৪২ লাখ মার্কিন ডলার বা ২৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা) হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। সেজন্য তিনি ‍পুয়াকে বিয়ে করেছেন বলে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কাগজপত্র তা বলছে না।

প্রতারিত প্রয়াত পুয়ার স্বজনরা সংবাদমাধ্যমকে জানান, তারা এখন মামলার শেষ দেখতে অপেক্ষা করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।