ঢাকা: বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। বুক জুড়েই তার নদী-নালা-খাল-বিল।
যেসব অঞ্চলের মানুষের খাবারের প্রধান অনুষঙ্গই ছিল মাংস, সেসব অঞ্চলের মানুষরাও আমিষের চাহিদা মেটাতে ঝুঁকছে মাছের দিকে। কারণ হিসেবে অনেক কিছু দেখানো হলেও সেই মেছো-ভেতো বাঙ্গালির কাতারেই যে চলে আসতে হচ্ছে তাদের।
বিশ্বে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে এবং মানুষ দিন দিন মাছের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। চাহিদায় মাংস পিছিয়ে পড়েছে মাছের।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, বিশ্বে খাবারের মধ্যে মাছের বাণিজ্য হয় সবচেয়ে বেশি। ২০০৮ সালে শুধুমাত্র মাছের কেনাবেচাই হয়েছে ১০ হাজার ২০০ কোটি ডলার।
এদিকে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচারের ২০১০ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববাসীর মাছের প্রতি আসক্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এই আসক্তির ফলে বিশ্বে মাছের মজুদ ক্রমান্বয়ে শেষ হয়ে আসছে। মাছের মজুদ কমে আসা উদ্বিগ্নতার বিষয়। ’
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার জীববিজ্ঞানী ডা. দানিয়েল পৌলি বলেন, ‘এটা সত্যি যে, আমরা অনেক বেশি খাচ্ছি। আমরা বিশ্বে মাছের মজুদের ওপর চাপ ফেলছি। হয় আমরা বেশি খাচ্ছি নতুবা আমরা সংখ্যায় বেশি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘তিন-চার বছর আগেই বলা হয়েছিল বিশ্বের মৎস্যসম্পদ হুমকির মুখে। এখন সেই সতর্কবাণী আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের মতোই এটা এখন একটা ব্যাপক আলোচিত বিষয়। ’
এখন বড় বিতর্কের বিষয় হলো প্রতি বছর ধৃত মাছের পরিমাণ নিয়ে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাৎসরিক যে মাছ ধরা হয়েছিল তার পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ হাজার ৩০০ টন। এরপর মাছ ধরায় কিছুটা ভাটা পড়লেও ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাৎসরিক মাছ ধরার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৯৫ লাখ টন।
অনেক বিজ্ঞানীই বলছেন, ১৯৯৬-২০০৮ পর্যন্ত তুলনামূলক কম মাছ ধরার কারণ হলো মাছের মজুদ কমে যাওয়া এবং মাছের বিচরণ ক্ষেত্র পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। অনেকেই মনে করছেন, এই তথ্য এটাই প্রমাণ করে যে, ইতোমধ্যেই মৎসশূন্য হয়ে পড়েছে বিশ্ব।
পৌলি বিশ্বাস করেন, বিশ্বে মাছ ধরার নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবিত হচ্ছে এবং মানুষ অধিকহারে মাছ খাচ্ছে। এর ব্যাখ্যায় পৌলি বলেন, গত ৫০ বছরে নতুন করে মাছ ধরার অনেক ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ার মধ্যে জাপান বেশিরভাগ মাছই উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সংগ্রহ করছে।
ইউরোপে মাছের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপ আরও দক্ষিণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একই ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের ক্ষেত্রেও। তারা মৎসসম্পদ সংরক্ষণে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ার বদলে দিনকে দিন নতুন ক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই হারে মাছ ধরা অব্যাহত রাখলে শেষমেষ মানুষ দলে দলে অ্যান্টার্কটিকায় মাছ ধরতে যাবে।
তবে পৌলি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, মাছ ধরার দক্ষিণমুখী যে অভিযান চলছে তা শেষের দিকে। এরপর আর নতুন কোনো ক্ষেত্র নেই।
বিশ্বব্যাপী মাছের বিচরণ ক্ষেত্র নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে ভিন্ন মত থাকলেও এফএও এ ব্যাপারে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছে। তারা বলছে, যদি মৎস সম্পদ সংরক্ষণে কার্যকরী পদক্ষেপ এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হয় তাহলে নতুন করে মৎস আহরণ ক্ষেত্র বাড়িয়েও কোনো লাভ হবে না।
পৌলির মতে, মৎসক্ষেত্র পুনরুদ্ধার বা সংরক্ষণ কোনো রকেটগতির বিজ্ঞান নয়। আমরা যদি আমাদের মৎস ক্ষেত্র সংরক্ষণ না করি তাহলে কীভাবে আমরা মাছের প্রয়োজনীয় উৎপাদন আশা করতে পারি?
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১১