নয়াদিল্লি: দুর্নীতির বিরুদ্ধে গড়ে উঠা জনমতের আওয়াজ শুনতে বাধ্য হলো ভারতীয় সংসদ। একই সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী আইন প্রণয়নেরও সিদ্ধান্ত নিতে হলো ভারতীয় পার্লামেন্টকে।
৭৪ বছর বয়সী আন্না হাজারে টানা ১২ দিন অনশন করেন। ২৮ আগস্ট সকালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাছ থেকে এক চিঠি পাওয়ার পরই তিনি অনশন ভাঙ্গেন। চিঠিতে মনমোহন সিং আন্না হাজারেকে আশ্বস্ত করেন যে, পার্লামেন্ট দুর্নীতি বন্ধে আন্না হাজারের উত্থাপিত সকল প্রধান প্রধান বিষয়গুলো গ্রহণ করেছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভারতের জনগণ কতটা সোচ্চার তা বিগত দুই সপ্তাহ ধরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো প্রত্যক্ষ করেছে। আন্না হাজারের নেতৃত্বে এই আন্দোলনকে বলা হচ্ছে ‘আরেকটি স্বাধীনতা সংগ্রাম’। আন্না এবং তার টিম মূলত দিল্লি থেকে তাদের দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপ শুরু করে। এসময় সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজারের পক্ষে জনতা রাস্তায় বের হয়ে আসে। জনতা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আমলাদের বিরুদ্ধেও তদন্তের দাবি তোলেন।
উল্লেখ্য যে, গত ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের এক তালিকা প্রস্তুত করে। ওই তালিকায় ১৭৮ টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ৮৭তম। তালিকার শীর্ষে আছে ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের নাম। দ্য গ্লোবাল ওয়াচডগের আরেক রিপোর্টে বলা হয়, ভারত দিন দিন তালিকার পেছনে পড়ছে যা সত্যিকার অর্থেই চিন্তার এবং উদ্বেগের বিষয়। ২০০৯ এ ওই তালিকায় ভারতের অবস্থান ছিল ৮৪তম। একমাত্র ভূটান ছাড়া এশিয়ার সবগুলো দেশই ক্রমেই তালিকার নিচে চলে যাচ্ছে বলেও অভিমত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের।
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) জনগণের অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে পার্লামেন্টে দুর্নীতি বিরোধী বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে। যদিও কিছু কংগ্রেস নেতা বলেন যে, ‘আন্না হাজারে নিজেই একজন দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষ। তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার অধিকার নেই’। সরকারের নির্দেশে আন্না হাজারেকে তিহার কারাগারেও প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু জনগণের চাপের মুখে দ্রুতই সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
এরই মধ্যে দেশটির সুশীল সমাজ ‘ভারত দুর্নীতির বিরুদ্ধে’ এই ব্যানারের নিচে লোকপাল বিলের প্রশ্নে সায় দিয়েছে। এদের মধ্যে আছেন যোগগুরু রামদেব, সঙ্গীতগুরু পণ্ডিত রবিশংকর, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের নেতা মেধা পাটেকারের মতো ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও স্বামী অগ্নিবেশ, অরবিন্দ কেজরওয়াল, কিরণ বেদী, শান্তি ভূষণ, মনীষ শিশোদিয়া, অখিল গৌগি প্রতিনিয়ত রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনশনের পক্ষে সমর্থন যুগিয়েছেন।
এদিকে সরকার বলছে যে, তারাও চায় দেশ থেকে দুর্নীতিকে সমূলে উৎপাটন করতে। কিন্তু লোকপাল একটি পরিদর্শক হিসেবে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী অথবা স্পীকারের অনুমতি ছাড়া কোনো জনপ্রতিনিধিকে বিচার করার ক্ষমতা তার থাকবে না। এছাড়াও সরকার আরও চেয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী এবং বয়োজেষ্ঠ্য বিচারকগণ এই লোকপালের আওতার বাইরে থাকবেন।
যদিও আন্না হাজারে দাবি করেছিল যে, কোনো ভয়ভীতিহীন ভাবে যে কোনো অপরাধীকে সাজা দেওয়ার স্বাধীনতা লোকপালের থাকতে হবে। এছাড়াও অপরাধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানেরও দাবি করেন তিনি। যাতে করে সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনে এটা একটা শিক্ষা হয়।
এমনকি আন্না হাজারে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, পার্লামেন্ট যদি আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে জন লোকপাল বিল পাশ না করে তাহলে তার অনশন চলবে। যদি তাও না হয় তাহলে তার সমর্থকদের নিয়ে সারাদেশ ব্যাপী ‘জেল ভরো’ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার কথাও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের অবস্থান এবং জনগণের দাবির মুখে শেষমেষ আন্নার সঙ্গে আলোচনায় যেতে বাধ্য হয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। একই সঙ্গে আন্নার প্রধান দাবিগুলো মেনে নিয়ে দুর্নীতির বিপক্ষে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে পদক্ষেপ নেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১১