মস্কো: যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং কানাডার বিমান বিক্রির আন্তর্জাতিক বাজারে ভাগ বসাচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ইউনাইটেড এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন (ইউএসি) বিক্রি করতে যাচ্ছে ১০০টি সুখয় সুপারজেট এবং এমএস-২১ যাত্রীবাহী বিমান।
মস্কোর কাছেই জুকোভস্কি বিমান ঘাটিতে মঙ্গলবার বিমানের এক প্রদর্শনী করা হয়েছে বলে জানায় ইউএসি প্রধান মিখাইল পোসোগান। মার্কস-২০১১ নামের ছয়দিনের এই প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে রাশিয়ার নির্মিত সুপারজেট-১০০ ও এমএস-২১ বিমান। এগুলো রাশিয়ার নব্য অবিস্কৃত যাত্রীবাহী বিমান।
প্রদর্শনী থেকে মিখাইল পোগোসান বলেন, ‘সবমিলিয়ে মোট ১০০ টি বিমান বিভিন্ন ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হবে। ’
প্রদর্শনী থেকে ক্রেতাদের নাম প্রচার করা হয়।
সুপারজেট বিমানগুলো মূলত মাঝারি সাইজের যাত্রীবাহী বিমান। এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সুখয় সিভিল এয়ারক্র্যাফট কর্পোরেশন। বিমানটি ৭৫-৯৫ জন যাত্রী নিয়ে চার হাজার ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারবে।
অন্যদিকে এমএস-২১ হলো দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট বিমান। আর এই বিমানের নির্মাতা হলো ইরকুত এবং ইয়াকোভলেভ ব্যুারো। এই দুই প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার ইউনাইটেড এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের অংশ হিসেবে কাজ করে। বিমানটির বহন ক্ষমতা ১৫০-২১২ জন যাত্রী। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যে ফার্ণবার্গ আন্তর্জাতিক বিমান প্রদর্শনীতে প্রথমবারের মতো দেখানো হয়েছিল।
এমএস-২১ বিমান মূলত তিনটি পরিবর্তিত রূপে তৈরি হচ্ছে। এটাই হবে প্রথম বিমান যার বিভিন্ন অংশ তৈরি হচ্ছে কার্বণ ফাইবার দিয়ে। আর এই উন্নত নতুন প্রযুক্তি ২৫ শতাংশ ফুয়েল খরচ, ১৫ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খরচ এবং পরিবশে দূষণ কমাবে।
জুকোভস্কির এই বিমান প্রদর্শনীতে মোট ৬২৭ বিমান নির্মাতা কোম্পানি অংশ গ্রহণ নেয়। এদের মধ্যে ৪৭৩ টি রাশিয়ার কোম্পানি এবং ১৫৪ টি বাইরের।
এদিকে গত ২১ জুন সুখয় সিভিল এয়ারক্র্যাফট ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বিমান বিক্রি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী সুখয় ইন্দোনেশিয়ার কাছে ১২টি সুপারজেট-১০০ বিমান বিক্রি করবে। আর এই বিমান বিক্রির অর্থমান হলো তিন হাজার ৭৯২ লাখ ডলার। আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়াকে বিমান হস্তান্তর করবে সুখয়।
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত প্রথম সুপারজেট-১০০ বিমানটি গত ১৬ এপ্রিল আমেরিকান এয়ারলাইন আরমাভিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিমানটি এরই মধ্যে একশ’র বেশি ফ্লাইট উড্ডয়ন করেছে। একইসঙ্গে তিন হাজারেরও বেশি যাত্রী বহন করেছে বিমানটি এবং পাড়ি দিয়েছে প্রায় এক লাখ কিলোমিটার পথ।
দ্বিতীয় বিমানটি সরবরাহ করা হয় এ্যরোফ্লটকে জুন মাসের ৯ তারিখে। এর পরপরই এ্যরোফ্লট আরও ৩০টি সুপারজেট-১০০ বিমানের অর্ডার দিয়েছে সুখয়কে এবং আরও ১০টি বিমানের অর্ডার দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা।
বিমানগুলোর উন্নত প্রযুক্তিগত দিক এবং বাজারমূল্যের তুলনায় এর দাম কম হওয়ায় দিন দিন সুখয় সুপারজেট এবং এমএস-২১ বিমানের চাহিদা বাড়ছেই। এতোদিন ধরে বিমান বিক্রির আন্তর্জাতিক বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে আসছিলো যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও কানাডা। কিন্তু সুখয় সুপারজেট এবং এমএস-২১ সেই একচেটিয়া বাজারে ভাগ বসাতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১১