সতর্কতার কারণ হিসেবে গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা জানান, তাদের কাছে খবর এসেছে ৬ বালক তিনটি বিমানবন্দরে ছিনতাই করার আলাপ সেরেছে। এ খবর তাদের দিয়েছেন এক নারী।
গোয়েন্দা কর্তাদের এ তথ্যে ছোটাছুটি শুরু হয় নয়াদিল্লিতে। অভিজাত ও পর্যটকদের যাতায়াতের শীর্ষ রুট মুম্বাই, চেন্নাই ও হায়দ্রাবাদ এয়ারপোর্টে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবগুলো বাহিনীকে তৎপর হতে বলা হয়। এয়ারপোর্টে নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য বাড়ানোর পাশাপাশি চালানো হতে থাকে ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি। সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে বলা হয় ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডকেও।
এর পাশাপাশি নিরাপত্তা বিবেচনায় বিদেশগামী যাত্রীসহ অন্যান্যদের আগে-ভাগে এয়ারপোর্টেও আসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নিরাপত্তার এ কড়াকড়িতে পুরো মুম্বাই, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা খেয়াল করা যাচ্ছিল।
নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীকে ‘হুমকি’র বিষয়টি খতিয়ে দেখারও দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারাও নিজেদের কাছে আসা খবরের ‘গোপন’ সূত্রের সন্ধানে নেমে পড়ে।
চারদিন পর বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করে হায়দ্রাবাদ পুলিশ যা জানালো, তাতে সবাইকে কিংকতর্ব্যবিমূঢ় বা বাকরুদ্ধই হতে হবে। ঘটনাটা এক প্রতারক প্রেমিকের একেবারেই ‘অগ্রহণযোগ্য খেয়ালিপনা’। প্রেমিকাকে ফোঁসলাতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েও শেষে ধরা পড়ার মুহূর্তে নিজের ভাবমূর্তি বাঁচাতে তিনি এই ‘মহাকাণ্ড’ বাঁধান।
পুলিশ জানায়, হায়দ্রাবাদের ওই প্রেমিকের নাম বংশী কৃষ্ণ (২৮)। তিনি একটি ট্রাভেল এজেন্টে কাজ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক তরুণীর সঙ্গে পরিচিতি হয় তার। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক।
সম্প্রতি কৃষ্ণ তার সেই প্রেমিকাকে অনলাইনের মাধ্যমে প্লেনের ভুয়া ই-টিকিট পাঠান। বলে দেন, তারা মুম্বাই যাবেন। মুম্বাই থেকে যাবেন গোয়ায়। কৃষ্ণের চিন্তা ছিল হাতে অর্থ এলে সরাসরি টিকিট কেটেই ভ্রমণে যাবেন। কিন্তু সময় গড়িয়ে সামনে আসতে থাকায় বুঝতে পারেন তার হাত খালি, এর অর্থ তিনি ধরা পড়ে যাচ্ছেন।
কী করবেন, কী করবেন- ভাবতে ভাবতে কৃষ্ণ মহাফন্দি আঁটেন। এয়ারপোর্টের সেসময়কার সব যাত্রা যেন বাতিল হয়ে যায়, তাকে যেন আর প্রেমিকার কাছে ছোট হতে না হয়, সেজন্য তিনি গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে এয়ারপোর্টে ছিনতাইয়ের হুমকির একটি বার্তা পাঠান এক নারীর নামে। যেখানে সে নারীর ভাষ্যে ৬ বালকের এয়ারপোর্টে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনার আলাপের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি। এ কাজটি কৃষ্ণ নিজের ল্যাপটপের বদলে করেন সাইবার ক্যাফে থেকে, যেখানে আবার সিসি ক্যামেরাও নেই।
নিরাপত্তা বাহিনী প্রাথমিকভাবে তার হুমকির বার্তাটি আমলে নিলো, কড়াকড়ি আরোপ করলো এয়ারপোর্টে। দৌঁড়ঝাপের মধ্যে শুরু করলো তদন্তও।
তারপরের ঘটনাটা বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনেই জানালেন প্রশাসনের কর্তারা। হায়দ্রাবাদ পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে উৎস খুঁজতে গিয়ে বের হলো সাইবার ক্যাফের তথ্য। সেখানে ঘেঁটে খুঁজে বের করা হলো হুমকির তথ্যদাতাকে। তথ্যদাতাকে ধরতে গিয়ে বোঝা গেল, ইমেইলে বার্তাপ্রেরক নারী দেখানো হলেও তিনি ছিলেন আসলে কৃষ্ণ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে এলো সব তথ্য।
কর্মকর্তারা আরও জানান, প্রতারক কৃষ্ণের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হচ্ছে। দোষী প্রমাণ হলে তার সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও হতে পারে।
ক’দিনের জন্য ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ঘুম হারাম করে দেওয়া কৃষ্ণ ব্যক্তিজীবনে বিবাহিত। তার এক সন্তানও রয়েছে। ওই পরকীয়া প্রেমিকার জন্য তিনি বহু আগে থেকে অর্থ খরচ করে আসছেন। শেষ পর্যন্ত প্রেমিকার কাছে ‘হিরো’ সাজতে গিয়ে তাকে যেতে হচ্ছে শ্রীঘরে!
বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭/আপডেট ২৩৫০ ঘণ্টা
এইচএ/