ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তানে ন্যাটো সমর্থিত পুলিশেরাই সন্ত্রাসী?

জাহাঙ্গীর আলম, নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১১
আফগানিস্তানে ন্যাটো সমর্থিত পুলিশেরাই সন্ত্রাসী?

ঢাকা: ন্যাটো সমর্থিত সশস্ত্র গ্রুপ ও সরকারের লোকেরাই আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা হয়েছিল তারাই এখন ডাকাতি, ছিনতাই ও গণধর্ষণের মতো কাজ করছে।

তাদের এই আচরণ দেশটিতে জঙ্গিগ্রুপগুলোর প্রতিই জনগণের সমর্থন জোরদার করছে।

সোমবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আফগানিস্তানের পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে নিয়োজিত সশস্ত্র গ্রুপগুলোর ব্যাপারে এমন অভিযোগ ও মূল্যায়ন তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

১০২ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, খুন, নির্যাতন, বেআইনী কর, চুরি ও টিনেজ বালককে গণধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করে সরকার সমর্থিত সশস্ত্র গ্রুপগুলি এবং ন্যাটোর তত্ত্ববধানে গঠিত আফগান স্থানীয় পুলিশ।

আফগানিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতি ঠেকাতে ওই সশস্ত্র গ্রুপগুলি গঠন করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল এদের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যুদ্ধে পর ইরাকের সচেতনতা পরিষদের আদলে এই সংগঠনগুলি গড়ে তোলা হয়।

কিন্তু যথেষ্ট প্রশিক্ষণ, যাচাই, পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহিতার অভাবে এই গ্রুপগুলি এখন সাধারণ আফগানদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের পথে হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি এখনো নানা রকম সহিংসতায় পর্যুদস্ত। সন্ত্রাসী হামলায় প্রায়ই প্রাণ হারান সাধারণ মানুষ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘ভাবমুর্তি ক্ষুন্নকারী ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী এসব সশস্ত্র গ্রুপকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে কাবুল ও ওয়াশিংটনকে পরিষ্কার অবস্থান নিতে হবে। একটি টেকসই ও দীঘমেয়াদি নিরাপত্তা কৌশল নিশ্চিত করতে এটা প্রয়োজন। ’

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্বল প্রশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সরকার সমর্থিত সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের অপরাধের জন্য শাস্তির আওতার বাইরে রাখা- এসব দেশটিতে সন্ত্রাসকেই উস্কে দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা পরিদপ্তর উভয়ে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের সময়ই বেসামরিক লোকদের নিয়ে সশস্ত্র গ্রুপ গঠন করেছিল। তখন থেকেই তাদের অর্থ ও অস্ত্র দেওয়া হতো এবং তাদের কর্মকা-ের জন্য কখনোই জবাবদিহি করতে হতো না।

বেপরোয়া, অনিয়ন্ত্রিত এসব বাহিনীর মধ্যে আফগানিস্তানে বিদেশী সেনাদের কমান্ডার ডেভিড পেট্রাউসের আশাবাদী প্রকল্প ‘আফগান লোকাল পুলিশ’ও রয়েছে।

বিতর্কিত এই বাহিনীগুলোতে ৩০ হাজার সদস্য নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে আফগান সরকারের। অবশ্য গত আগস্ট পর্যন্ত মোট নিয়োগের পরিমাণ ৭ হাজার।

প্রবিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কিছু অঞ্চলে ইতিবাচক কাজ হলেও বেশিরভাগ জায়গায়ই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আফগান স্থানীয় পুলিশে অপরাধী ও জঙ্গিদের অন্তর্ভুক্তি দিন দিন বাড়ছে।

আফগান স্থানীয় পুলিশের ব্যাপারে যদি জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে এটি আরেকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে খুব শিগগিরই আবির্ভুত হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

মানবাধিকার সংগঠনটির এ প্রতিবেদনের জবাবে আফগানিস্তানে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স ফোর্সের (ইসাফ) একজন মুখপাত্র জেনারেল কারসটেন জ্যাকোবসন জানিয়েছেন, তারা এই প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।