ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সম্পৃক্ত থাকতে হলে গণমাধ্যমকে বদলাতে হবে

কল্লোল কর্মকার, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১১
সম্পৃক্ত থাকতে হলে গণমাধ্যমকে বদলাতে হবে

ঢাকা: গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীই সবসময় রাজা নয়। ভোক্তা (ব্যবহারকারী) প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল।

আর তাই এই ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমগুলোকে সম্পৃক্ত থাকতে হলে নিজেদেরও বদলাতে হবে।

আর এই পরিবর্তন শুধু সংবাদ মাধ্যমে নয়, সঙ্গীত ও চলচ্চিত্র সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ সাওল বারম্যান। বারম্যান বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আইবিএমের (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস) একজন উপদেষ্টা।

চলতি সময়ে গণমাধ্যমগুলো কিভাবে অর্থ উপার্জন করে, এমন সব বিষয়ে তিনি ঘণ্টাব্যাপী এক সাক্ষাতকারে বিস্তারিত বলেন। একজন সাংবাদিকের দৃষ্টিকোণ থেকে কিভাবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানো যায়, জনগণের আস্থা অর্জন এবং জনগণকে সংবাদ মাধ্যমমুখী করতে কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে ব্যাপারে তিনি বলেন।
 
ড. বারম্যানের মতে, মানুষ বন্ধু, নামকরা মাধ্যম, বিশ্বাসযোগ্য ব্লগার অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রথাগত সূত্রের ওপর নির্ভর করে তথ্যের জন্য।

প্রতিটি মানুষই নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে তার মতামত জানায় এবং তাদের সামাজিক কমিউনিটির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন। কিছ ুসময় ওই সূত্রগুলো তাদের নিজেদের বিশ্বাসের জায়গা থেকে যা বলে অথবা যা বলতে চায়, তাই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে যায়।
 
এটা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই ঘটছে। যেমন রাজনৈতিক কোনো সংবাদের জন্য তারা ফক্স নিউজকেই পছন্দ করছে। এটা এখন সারাবিশ্বেই ঘটছে। তথ্য অনুসন্ধানের জন্য মানুষ এখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওয়েবসাইটের শরণাপন্ন হচ্ছে। তারা ওই ওয়েবসাইটগুলো থেকে সেবা গ্রহণ করছে। এই ব্যবহারকারীরা বিশ্বকে খুব কাছাকাছি এনে ফেলছে এবং তথ্য আদান-প্রদানের গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
 
বারম্যানের মতে, গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা বহমুখী হওয়া উচিত। গণমাধ্যমগুলোতে থাকতে হবে বিভিন্ন পণ্যের (সংবাদ) সম্ভার। যাতে করে তরুণ প্রজন্ম এবং তাদের বাবা-মা গণমাধ্যমগুলোকে কথা বলার সূত্র হিসেবে কাজে লাগাতে পারে। অপরদিকে বাজারে টিকে থাকতে হলে গণমাধ্যমগুলোতে গুণগত উপাদান এবং ভোক্তাদের (জনগণ) বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভোক্তারা কোনো ব্যক্তি বা একজন লেখকের ওপর নির্ভর করে গণমাধ্যমকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে। যেমন ধরা যাক- মুভির নাম শুনে মুভি সম্পর্কে ধারনা নেওয়া কিন্তু এর পরিচালক সম্পর্কে জানতে না চাওয়া। বারম্যান এ বিষয়ে বলেন, ‘আপনি যদি একটা বড় কোম্পানি হন, তাহলে আপনার ব্র্যান্ডের অবশ্যই একটা দাম আছে। আপনি তখন আপনার ওই ব্র্যান্ড থেকে বিভিন্ন সুবিধা পেতে পারেন। কিন্তু আপনার যদি একটা ছোটো কোম্পানি হয়, তাহলেও আপনার একটা ব্র্যান্ড হলো কিন্তু তা থেকে বেশি সুবিধা অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে। ’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক নামকরা কোম্পানিই বারম্যানকে উপদেষ্টা নিয়োগ করেছে। বারম্যানের চেষ্টা এবং কর্মপন্থায় সিঙ্গাপুরভিত্তিক গণমাধ্যম ‘টুডে’র ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।

কিছু মানুষ তথ্যভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পছন্দ করেন। আবার কিছু মানুষ আছে যারা পছন্দ করেন মতামত পড়তে। তবে আরও একটা শ্রেণী ক্রমেই বাড়ছে যারা সংবাদ সংগ্রহ করছে। ড. বারম্যান বিশ্বাস করেন, সংবাদ মাধ্যমগুলোকে কিউরেটরের ভূমিকা নেওয়া উচিত এবং সম্পাদকদের সংবাদ বানানোর চেয়ে সংবাদ সম্পাদনায় মন দেওয়া উচিত।
 
আপনি যদি লিবিয়ার ঘটনার দিকে তাকান, তাহলে দেখতে পাবেন, অনেক মানুষ টুইটারে এবং বিভিন্ন ব্লগে সংবাদ পরিবেশন করছে। এ কারণে সংবাদমাধ্যমগুলো এক একটা প্লাটফর্মে পরিণত হচ্ছে এবং সংবাদমাধ্যমগুলোর শুধু নিজেদের সংগৃহিত সংবাদ প্রকাশের দরকার পড়ছে না।
 
ওইসব সংবাদের শুদ্ধতা কি? এই প্রশ্নে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমই এ ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করে।

কিন্তু এক্ষেত্রে বারম্যান বলেন, ‘গণমাধ্যমগুলো এখনও কি সংবাদের শুদ্ধতার নিশ্চয়তা দিতে পারে? আমি যদি একটি সংবাদ প্রতিষ্ঠান হই এবং আল জাজিরা থেকে নেওয়া একটি ভিডিওচিত্র প্রচার করি, তাহলে ওই ভিডিওচিত্রের নিশ্চয়তা আমি কিভাবে দেবো? অথবা আমি তাদের একটা সংবাদ ব্যবহার করলাম, কারণ ওই সংবাদ সংগ্রহ করার মতো যথেষ্ট জনবল আমার নেই। তাহলে আমি কিভাবে বুঝবো যে ওই সংবাদটি সঠিক?’
 
যদি একটি সংবাদমাধ্যম একটি বিশ্বাসযোগ্য সূত্র হয়ে উঠতে চায়, তাহলে সব বিষয়েই তাকে মোটামুটি সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। যাতে করে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ে ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতি।
 
দিনে দিনে ভোক্তার চাহিদা বাড়ছে। যেকোনো একটা বিষয়ের উপর তারা বিভিন্ন মতামত জানতে এবং শুনতে চায়। যেমন ধরা যাক, আমি যখন অনলাইনে কোনো গান কিনতে চাই তখন অনেক ওয়েবসাইটই আছে যাদের কাছ থেকে আমি তাদের গান কিনতে পারি। কেন আমি সবগুলো জিনিস একই স্থান থেকে কিনতে পারবো না। আর আমি যখন আনলাইনেই যাবো তাহলে কোনো আমি দশটা বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেটে সংবাদ পড়বো।
    
কিছু ভোক্তা আছে যারা তাদের কাঙ্খিত সংবাদের জন্য অর্থ প্রদান করতেও রাজি। আবার অনেকে আছে গুচ্ছ সংবাদের জন্য অর্থ দিচ্ছে। কেউ কেউ অনলাইনে সংবাদ পড়ার জন্যও অর্থ দিচ্ছে। এমনকি মোবাইলে সংবাদ পড়তেও অর্থ দিতে হচ্ছে।

বারম্যানের বক্তব্যের মূল কথা হলো, মানুষ বিভিন্ন উপায়ে সংবাদের জন্য অর্থ দিয়ে আসছে এবং সবার অর্থ প্রদানের প্রয়োজনও নেই। কিছু সংবাদ থাকবে যার অর্থমূল্য হয় না। সর্বোপরি অর্থ উপার্জনের জন্য বিজ্ঞাপন তো আছেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।