ঢাকা: নিউইয়র্কে বিভিন্ন পার্কে পাখি প্রেমীরা দিনভর অপেক্ষা করেন একটি হলুদ গায়ক পাখি অথবা লাল টুকটুকে কোন কানাগারের দেখা পাওয়ার আশায়। ডেবোরাহ অ্যা. লোরেল এমনই একজন স্বেচ্ছাসেবী কিন্তু তিনি খুঁজছিলেন অন্য কিছু।
এই স্থাপত্যবিদ নিউইয়র্ক শহরে পাখিদের জন্য সংগঠন অডোবনের একজন স্বেচ্ছাসেবী। ম্যানহাটনে অনেকের মধ্যে তিনিও একজন যে, রাস্তা ও প্লাজার পাশে পরে থাকা আহত অথবা নিহত পরিযায়ী পাখির রক্তাক্ত দেহ খুঁজে ফেরেন। এই সব পাখি শহরে মাথা তুলে দাঁড়ানো অসংখ্য কাচ নির্মিত ভবনের সৃষ্ট আলো-আঁধারির ফাঁদের শিকার। একদিন সকালে বিশ্ব অর্থনৈতিক কেন্দ্রের নিকট থেকে তিনি পাখির ছয়টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। পাখিগুলোর দেহ কাঁচের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ছিল।
লোরেন বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমরা কাচের যুগে বাস করছি। এটা নির্দিষ্ট আলোর জন্য একটা নিখুঁত আয়না হিসেবে কাজ করে। কাচ যতো বড় হবে তা ততো বিপজ্জনক। ’
আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে উড়ালপথে নিউইয়র্কে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি যাত্রাবিরতি দেয়। আর এ শহরের বেশিরভাগ ভবনের দেয়াল কাচ নির্মিত হওয়ায় নিউইয়র্কে প্রতিবছর প্রায় ৯০ হাজার পাখি মারা যায়। সুর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে চোখে লাগলে পথভ্রষ্ট হয়ে অনেক পাখি বড় দালানে, গাছে বা বিদ্যুতের থামে ধাক্কা খেয়ে প্রাণ হারায়। আবার স্বচ্ছ কাচের দেয়াল হলে বুঝতে না পেরে দেয়ালে ধাক্কা খেয়েও অনেক পাখি নিহত হয়।
পাখিদের জন্য সংগঠন অডোবন গ্রুপ জানায়, পার্শ্ববর্তী পার্কে খাবার খোঁজার উদ্দেশ্যে উড়ে যাওয়ার সময় অনেক ভবনের নিচের অংশে কাচের বিভ্রান্তিকর স্বচ্ছ দেয়াল থাকায় অনেক পাখিই ধাক্কা খায়। রাতের বেলা ভেতরে আলো জ্বালানো থাকলে এই বিভ্রান্তি বেশি ঘটে।
পাখি বিশারদ ও সরক্ষণবাদীরা জানান, আবাসস্থল হারানো পরই এটা হচ্ছে পরিযায়ী পাখির মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। জাতীয় হিসাবে এই মৃত্যুর সংখ্যা একশ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে তাদের দাবি।
গত শতকে যুক্তরাষ্ট্রে কাচ নির্মিত ভবনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আর এ কারণে এখন পাখিদের জন্য কম হুমকির ভবন নির্মাণের দাবি উঠছে। গত জুলাইয়ে সান ফ্রান্সিসকোর পরিকল্পনা কমিশন নুতন ভবন নির্মাণের সময় পাখির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিধান করার প্রস্তাব করেছে। চলতি মাসে নগর পর্যবেক্ষক বোর্ডের ভোটে পাস হলে এটি আইনে পরিণত হবে। সরকারি ভবনগুলোও পাখিবান্ধব করার একটি প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে।
এদিকে, পাখিদের জন্য সংগঠন অডোবনের সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণার ফলস্বরূপ নিউইয়র্ক শহরে এখন প্রায় ৯০টি ভবনে রাতের বেলা আলো নিভিয়ে রাখা হয়। এছাড়া বোস্টন, শিকাগো ও টরোন্টোতেও তাদের প্রচারণা সফল হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১১