ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ৫৯০০ পাউন্ড ইউরেনিয়াম-প্লুটোনিয়াম এখন কোথায়?

জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১১
যুক্তরাষ্ট্রের ৫৯০০ পাউন্ড ইউরেনিয়াম-প্লুটোনিয়াম এখন কোথায়?

ঢাকা: প্রেসিডেন্ট ওবামা বারবার বলে আসছেন, সন্ত্রাস মোকাবেলায় তার প্রধান লক্ষ্য হলো- পরমাণু অস্ত্র বা অন্য কোন মারণান্ত্র তৈরির মৌলিক উপাদান যেনো কোনভাবেই সন্ত্রাসীদের হস্তগত না হয়।

২০০৯ সালের এপ্রিলে ওবামা সারা বিশ্বে পরমাণু বোমা তৈরির অরক্ষিত উপাদানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন এক আন্তর্জাতিক উদ্যোগের ঘোষণা দেন।

এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞানীদের পাঠিয়েছেন ওই ধরনের উপাদান খুঁজে বের করতে।

কিন্তু গত শুক্রবার বিকেলের দিকে সরকারের জবাবদিহি কার্যালয় বা অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি অফিস (জিএও) এর একটি প্রতিবেদন বেশ নাড়া দিয়ে গেল। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন কয়েক হাজার পাউন্ড অত্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও নিষ্কাশিত প্লুটোনিয়াম রয়েছে যার নিরাপত্তা মার্কিন কর্মকর্তারা কখনও নিশ্চিত করতে পারবে না। কারণ এর অবস্থান সম্পর্কে কোন সঠিক ধারণা নেই তাদের।

জাহাজে করে এক সময় সমুদ্রপথে পাঠানো পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য ৫ হাজার ৯শ পাউন্ড নিউক্লীয় উপাদানের অবস্থান ও বর্তমান পরিমাণ নির্ধারণ যুক্তরাষ্ট্রের আওতার বাইরে।

বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, তা সত্ত্বেও এসব মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বস্তুর নিরাপত্তার ব্যাপারে অন্য দেশের সরকারগুলোর দেওয়া নিশ্চয়তার ওপর ভরসা করেই নিশ্চিন্তে থাকেন মার্কিন কর্মকর্তারা। উপরন্তু ওই বস্তুগুলো যেখানে রাখা হয়েছে বলে বলা হয় সেসব স্থান পরিদর্শনে মার্কিন কর্মকর্তারা গিয়ে দেখেছেন, প্রায় অর্ধেক স্থানে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নিরাপত্তা নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না।

মার্কিন কংগ্রেসের তদন্ত শাখা জিএও তাদের প্রতিবেদনেও এই তথ্য দিয়েছে।

দ্য মনটারি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের পরমাণু অস্ত্র বিশ্লেষক জেফরি লুইস এ ব্যাপারে বলেন, ‘এটা বিস্ময়কর, পরমাণু অস্ত্র তৈরির উপাদান সংরক্ষণের ওই সব স্থান চিহ্নিত করার ব্যাপারে জ্বালানি বিভাগ কতোটা বেখেয়াল রয়েছে। এ ব্যাপারে যেনো কারও কোন মাথা ব্যাথা নেই। ’

তবে এ ব্যাপারে জ্বালানি বিভাগের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। তারা বলছে, ‘যেসব দেশে বস্তুগুলো রয়েছে সেসব দেশের সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এই ব্যাপারে তারা নিরাপত্তা প্রতিবেদন দেবে। এই সব দেশ যাতে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সৎ থাকতে বাধ্য হয় সে জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক রয়েছে। তাছাড়া, জিএও তো বলেনি ওই ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম হারিয়ে গেছে। কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালা না মানার বিষয়টি শুধু উল্লেখ করেছেন তারা। ’

জ্বালানি বিভাগের জাতীয় পরমাণু নিরাপত্তা প্রশাসনের মুখপাত্র জোস ম্যাককোনাহা অবশ্য আইএইএ’র পর্যবেক্ষণ ও এ বিষয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন এই নিউক্লিয় বস্তুগুলোর নিরাপত্তায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন।

প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার সরকারের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র ১৭ হাজার ৫শ কেজি পরমাণু জ্বালানি বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে বেচে দিয়েছে। এর বেশির ভাগই বেসামরিক পরমাণু কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য। তবে সেই সঙ্গে তৎকালীন সরকার এ শর্তও জুড়ে দিয়েছিল: এসব জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করা যাবে না এবং যে কোন দিন যুক্তরাষ্ট্র এসব তেজস্ক্রিয় বস্তু ফিরিয়ে নিতে পারবে।

কিন্তু ১৭ হাজার ৫শ কেজি জ্বালানির মধ্যে ১২ হাজার ৪শ কেজির বিষয়ে ফেরত নেওয়ার শর্ত ছিল না। এর বেশিরভাগই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র জার্মানি, ফ্রান্স এবং জাপানের সংরক্ষণাগারে ও রিঅ্যাক্টরে।

জ্বালানি বিভাগ মনে করছে, পরমাণবিক বস্তুগুলো যেহেতু বন্ধুরাষ্ট্রের হাতেই রয়েছে সেহেতু এগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদেই আছে। অনেকেই বলছেন, ‘যদি এগুলোর কিছু অংশ সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রভুক্ত কোন রাষ্ট্রে থাকত তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার একটা কারণ ছিল। ’

নিউক্লিয় উপাদানের জন্য জ্বালানি বিভাগের নিরাপত্তা প্রকল্পের আওতার হিসাবের মধ্যে রয়েছে এক হাজার ১৬০ কেজি এবং সুনিশ্চিতভাবে নিরাপদে রয়েছে ২৪০ কেজি জ্বালানি।

কিন্তু পরমাণু নিরাপত্তা বিষয়ক একাধিক বেসরকারি সংস্থার তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ঘনিষ্ঠতম বন্ধুরাষ্ট্র রয়েছে যাদের পরমাণু নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সামর্থ একেবারেই নেই। এখানে আরেকটি সমস্যা রয়েছে, জ্বালানি বিভাগের হিসাবভুক্ত ও নিরাপদ জ্বালানির আওতার বাইরে রয়েছে এখনও ২ হাজার ৭০০ কেজি। এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম-প্লুটোনিয়াম দিয়ে কয়েক ডজন পরমাণু অস্ত্র তৈরি সম্ভব।

এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম ও প্লুটোনেয়িাম কোথায় রয়েছে বা কোথায় থাকার কথা এ ব্যাপারে জিএও’র প্রতিবেদনে কিছুই বলা হয়নি। বরং এই তথ্যকে খুবই সংবেদনশীল ও গোপনীয় তাই জনসমক্ষে প্রকাশ করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে তারপরও যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চীন, ইউক্রেন, কলম্বিয়াসহ ২৭টি দেশের সঙ্গে তথাকথিত ‘পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি’ করেছে। এর আগে ইসরায়েল, পাকিস্তান, ভেনিজুয়েলা এবং ইরানসহ আরও ১১টি দেশের সঙ্গে একই চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

বেচে দেওয়া এইসব নিউক্লিয় উপাদান সংরক্ষণের স্থান জানতে সম্পূর্ণ রূপে নির্ভর করতে হয় জ্বালানি বিভাগের ওপর। অবশ্য মাঝে তারা সেসব স্থান পরিদর্শনে যান। কিন্তু তাদের স্থান চিহ্নিতকরণ প্রতিবেদন খুব একটা উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে হয় না।

১৯৯৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৫৫টি স্থানে পরিদর্শনে তারা দেখেছে, এর মধ্যে ২৭টি স্থানে ওই সব তেজস্ক্রিয় উপাদানের নিরাপত্তা বিধানে আইএইএ’র নীতিমালা অনুসরণ করা হয়, ২১টিতে হয় না এবং ৭টি স্থান সম্পর্কে জানা যায়নি। ৭টি স্থান চিহ্নিত করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যায় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা দল হয়ত স্থানটি চিনতে পারেনি অথবা এর নথিপত্র হারিয়ে গেছে।

তবে যাই হোক জিএও’র ওই প্রতিবেদন এটাই দাবি করে, পরমাণু জ্বালানির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি আরও নজর দেওয়া এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে- ইদানীং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোও পরমাণু অস্ত্রের উচ্চাভিলাষ দেখাচ্ছে। গত দুই দশকে এরকম ২০ জন নিউক্লিয় উপাদান চোরাকারবারিকে আটক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।