ঢাকা: শিশুদের প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানের পুরষ্কার সাধারণত কী হওয়া উচিত? একটি স্কুল ব্যাগ, লাঞ্চবক্স অথবা কিছু খেলনা।
আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু ধারণাটা অন্য রকম।
সোমালিয়ার শক্তিশালী ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী শাবাব সম্প্রতি এক সপ্তাব্যাপী কোরআন তেলোয়াত প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানটি বেতারে সরাসরি সম্প্রচারও করা হয়। কিন্তু প্রতিযোগীতার পুরষ্কার ছিল অন্যসব প্রতিযোগীতার চেয়ে আলাদা এবং সেই সঙ্গে ভয়াবহও।
প্রথম পুরষ্কার হলো হালকা মেশিন গান এক-৪৭। অন্যান্য পুরষ্কারের মধ্যে ছিল- সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় রাইফেল এবং তাজা হ্যান্ড গ্রেনেড!
রেডিওতে এই প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছিল গত রমজান মাসে। অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধ কি তা শিশুদের বুঝিয়ে দেওয়া এবং শাবাবের বিখ্যাত যোদ্ধা শেখ তিমাজিলিকের আত্মত্যাগের কাহিনী শুনানো।
একটি স্থিতিশীল কেন্দ্রীয় সরকার কার্যকর না থাকায় সোমালিয়াতে স্কুলগামী শিশুর হার বিশ্বে সবচেয়ে কম। এখানে শিশুরা পেন্সিলের চেয়ে রাইফেলের সঙ্গেই বেশি পরিচিত।
নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে শাবাব বিভিন্ন এলাকার শিশুদের নিয়ে কুইজ প্রতিযোগীতারও আয়োজন করে।
ওই সব প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়েছে গত রোববার। রাজধানী মোগাদিসুর নিকটে ছোট্ট শহর এলাশা বিয়াহাতে আন্দালুস বেতার কেন্দ্রে এই পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে দেওয়া হয়েছে একটি করে একে-৪৭ রাইফেল, কিছু নগদ অর্থ ও ইসলামি বই। তৃতীয় স্থান বিজয়ীকে দেওয়া হয়েছে দুইটি হ্যান্ড গ্রেনেড। প্রতিযোগীদের বয়স ১০ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।
তবে এটা পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি, আয়োজকরা কীভাবে বিজয়ীদের বাছাই করা হয়েছে আর কীসের ভিত্তিতে পুরষ্কারগুলোই বা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আয়োজকদের মধ্যে একজন নেতা শেখ মুক্তার আবু মনছুর বেশ গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘ইসলামকে রক্ষার জন্য শিশুদের এক হাত শিক্ষাদীক্ষা এবং অপর হাত বন্দুক চালানোর কাজে ব্যবহার করা উচিত। ’
স্থানীয় সোমালীরা এই অনুষ্ঠানের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বিশুদ্ধ ইসলামের প্রচারক হিসেবে সোমালিয়াতে শাবাব ও অন্যান্য চরমপন্থী ইসলামি গ্রুপগুলো বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে পরিচিতি পেয়েছে।
গত বছর সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের স্কুলগুলোতে ঘণ্টা বাজানো নিষিদ্ধ করেছে শাবাব। তাদের অভিমত, ঘণ্টার আওয়াজ অত্যন্ত জোরালো এবং গির্জার ঘণ্টার মতো কানে বাজে।
পশ্চিমা স্বার্থ রক্ষার্থে কাজ করার অভিযোগ দক্ষিণে সব আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা গ্রুপ নিষিদ্ধ করেছে শাবাব। যদিও দেশটি ভয়াবহ খরার কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে ধুঁকছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ শুধু না খেয়ে প্রাণ হারিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১১