ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নেতানিয়াহুই মধ্যপ্রাচ্য শান্তির ঘাতক: ক্লিনটন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১১
নেতানিয়াহুই মধ্যপ্রাচ্য শান্তির ঘাতক: ক্লিনটন

ঢাকা: মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কে দায়ী? খোদ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছেন, ‘এর জন্য দায়ী ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ’

ক্লিনটন অভিযোগ করেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর নেতানিয়াহুর সরকার গোলপোস্টে গিয়ে দাঁড়ালো।

তার উত্থানই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা ভেস্তে দিল।

নিউইয়র্কে ব্লগারদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই অভিযোগ করেন ক্লিনটন। বৃহস্পতিবারের ওই গোলটেবিল বৈঠকে তিনি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে ব্যর্থতার পর্যায়ে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ ও দিক নিয়ে বিস্তারিত স্মৃতিচারণ করেছেন।

২০০০ সালে ক্যাম্প ডেভিডে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন ক্লিনটন। দুই পক্ষকেই একটি চূড়ান্ত বন্দোবস্তে আসার জন্য তিনি চাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু এর পর সেই উদ্যোগ আর সেভাবে এগোইনি।

ক্লিনটন বলেন, ‘এখন একটি গ্রহণযোগ্য শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে না পারার দুটি কারণে রয়েছে: ক্যাম্প ডেভিডে করা সমঝোতা চুক্তি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে নেতানিয়াহু প্রশাসনের অনীহা এবং ইসরায়েলের জনসংখ্যার ব্যাপক পরিবর্তন দেশটির জনগণকে শান্তি আলোচনার বিরোধী বানিয়ে দিয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে দুটি ভয়াবহ ট্রাজেডি ঘটে গেছে, একটি হলো আইজ্যাক রবিন হত্যা অপরটি এরিয়েল শ্যারনের স্ট্রোক। এজন্য এখন আপনি ভাবতে পারেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি নির্ভর করছে ঈশ্বরের ইচ্ছার ওপর। ’

শ্যারন তার শেষ জীবনে জাতীয় ঐক্যের জোট গঠনের লক্ষ্যে কাদিমা পার্টি গঠন করেছিলেন। জিপি লিভনি ও এহুদ ওলমার্তের মতো নেতার সমর্থনও পেয়েছিলেন তিনি। অসুস্থ হয়ে পড়ার আগে শান্তি আলোচনার ব্যাপারে তিনি একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে কাজ করছিলেন। কিন্তু লিকুদ পার্টি ক্ষমতায় এসে সে উদ্যোগ ভেস্তে গেল।

২০০০ সালে করা ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির কথা উল্লেখ করে ক্লিনটন বলেন, ‘ফিলিস্তিনি নেতারা প্রকাশ্যেই একাধিকবার বলেছে, আমার (ক্লিনটন) হাতে করা সমঝোতা চুক্তি যদি নেতনিয়াহু গ্রহণ করেন, তাহলে তারাও তা মেনে নেবে। ’

অবশ্য ওই চুক্তি তৎকালীন পিএলও প্রধান ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

ক্লিনটন বলেন, ‘পরবর্তীকালে এহুদ বারাকের সরকার ২০০০ সালের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির কাছিকাছি শর্তযুক্ত চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার সেখান থেকেও সরে গেছে। এখন নেতানিয়াহুর সরকারের সঙ্গে যে কোন আলোচনা হলে হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন শর্তের ভিত্তিতে যা ফিলিস্তিনিরা গ্রহণ না করার সম্ভাবনাই বেশি। ’

নেতানিয়াহুর সরকার বিগত সরকারগুলোর সব প্রতিশ্রুতি ও প্রত্যয় গ্রহণ করেছে কিন্তু শান্তি আনবে এমন শর্ত তারা এখন গ্রহণ করতে নারাজ বলে মনে করেন ক্লিনটন।

বর্তমান ইসরায়েল আগের অবস্থায় নেই উল্লেখ করে ক্লিনটন বলেন, ‘মধ্যবর্তী সময়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে যেসব ইহুদি অভিবাসী এসেছেন, তাদের সঙ্গে ইসরায়েলের ইতিহাস ততোটা জড়িত নয়। এ কারণে ফিলিস্তিনিদের ঐতিহ্যবাহী দাবি-দাওয়া তাদের কাছে তেমন গুরুত্ববহ নয়। ’

গত বছর এরকম একটি কনফারেন্সে ক্লিনটন খুব জোরের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলি সমাজ ভূতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে পড়তে পারে। শান্তি আলোচনার ব্যাপারে এদের আগ্রহের মাত্রা বিভিন্ন। ’

তিনি বলেন, ‘আরবীয় ইসরায়েলিরা সবচেয়ে বেশি শান্তির পক্ষে, তার পরেই আছে ইসরায়েলে জন্ম নেওয়া সাবরাস ইহুদিরা, আগ্রহের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে অভিবাসী কিন্তু বহুদিন থেকে বসবাস করে আসা আশকেনাজি ইহুদি, এরা ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ইউরোপ থেকে এসেছে। ’

আর শান্তির বিপক্ষে সবচেয়ে শক্ত অবস্থান যাদের তারা হলো- অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ লোকেরা, ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এরা দাবি করে, জুদা এবং সামারিয়ার ভূমি একমাত্র তাদেরই প্রাপ্য, তার পরেই আছে জবরদস্তিমূলক বসতি স্থাপনকারীরা যাদেরকে সীমান্তবাদীও বলা যায়। এই দলের মধ্যে আছে মূলত তারা, যারা ইসরায়েলে এসেছেন অনেক পরে আর এদের সঙ্গে ইসরায়েলের ইতিহাসের কোন সম্পর্ক নেই।

তবে এই উপলব্ধির পরেও ক্লিনটন মনে করেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের তাতে ভেটো দেওয়াই উচিত। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের আগে ইসরায়েলিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ’

কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার শান্তির জন্য ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার পথ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। একটি চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছানো এখন আরও কঠিন হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন ক্লিনটন।

ক্লিনটন বলেন, ‘শান্তি আলোচনার জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নেতানিয়াহুর বারবার আহ্বান জানানোর উদ্দেশ্য হলো- তিনি আসলে পশ্চিম তীর ছাড়তে চাচ্ছেন না। ’

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার কথা সাফ জানিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাব উত্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।