ঢাকা: চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন লিবিয়ায় ক্ষমতার পরিবর্তন এবং জাতীয় ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে কথা বলেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তন আনতে ‘আরব বসন্তকে’ বড় সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তবে গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘে যা ঘটল তাতে যা মনে হয়, ব্রিটেনে বর্তমানে ব্লেয়ার ধাঁচের নেতাই দেশ চালাচ্ছেন। ক্যামেরন ঘরে ফিরছিলেন আর ওদিকে ব্রিটিশ কূটনীতি জাতিসংঘের নতুন বছরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছিল। ব্রিটেনের এই অবস্থানকে ঠিক সেভাবে বর্ণনা করা যায়, যেমনটি লিবিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র পেছন থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তার সেই বহু প্রতীক্ষিত বক্তৃতা দিলেন। তিনি জানালেন, জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ পেতে তিনি এই মাত্র আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছেন।
তার পরেই বক্তব্য দিতে মঞ্চে ওঠেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের স্বীকৃতি দানের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করতে তিনি একটু সময়ও ব্যয় করলেন না।
এই বিষয়টি ঠেকাতে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যরা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবি নিয়ে জাতিসংঘে যাওয়া থেকে আব্বাসকে বিরত রাখতে অনেক সময় ব্যয় ও চেষ্টাচরিত্র করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এতো দৌড়ঝাঁপের পরও এই ব্যর্থতা আসলেই খুব আশ্চর্যজনক। যেখানে মানুষের মধ্যে এমন একটা তর্ক-বিতর্ক চলছিল যে, ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির জন্য কোন প্রস্তাব জাতিসংঘে যেতে পারবে না এবং স্বীকৃতির জন্য একটি প্রতিরোধমূলক প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনাকে ভেস্তে দেবে।
উপরন্তু নেতানিয়াহুর দূর্বল জোট সরকারও আলোচনার মানসিকতায় নেই।
মুয়াম্মার গাদ্দাফির গ্রেপ্তার করতে না পারার ব্যর্থতা বাদ দিলে লিবিয়াতে আন্তর্জাতিক জোটের হস্তক্ষেপকে হয়ত সফলতা বলে ধরে নেওয়া য়ায়। তবে শুক্রবার জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের আবেদন জমা দেওয়া ঠেকাতে না পারাটা পশ্চিমা কূটনীতির চরম ব্যর্থতায়ই বলতে হবে।
এটা হলো একটি প্রক্রিয়াগত বর্থ্যতা, কারণ ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি ঠেকাতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে তার ভেটো ক্ষমতার আশ্রয় নিতে হবে, তবে কূটনৈতিক কারণেই তারা এটা এড়িয়ে যেতে চাইবে। দ্বিতীয় কারণটি হলো, ব্রিটেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মাঝামাঝি একটা অবস্থান নিতে যা হয়ত হবে ভোট দানে বিরত থাকা।
ব্রিটেন এর আগে ফ্রান্সের সমঝোতা পরিকল্পনাও প্রত্যাখ্যান করেছে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী ফিলিস্তিনকে ভ্যাটিকানের মতো একটি পদ দেওয়া যেতো।
তবে ব্রিটেনের জন্য এটা নীতিগত ব্যর্থ্যতাও বটে। গত ২৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি ব্রিটেন। ব্রিটেনের প্রতিশ্রুতি ছিল এই দেশটিতে একটি নিজস্ব সরকার ব্যবস্থা গঠন করা। তারা এর কিছুই করেনি।
ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রায় অর্ধ শতকেরও বেশি সময় পরে এসেও ফিলিস্তিনের জন্য একটু সমর্থন দিতেও ব্যর্থ হলো ব্রিটেন। ফিলিস্তিনিদের একটি রাষ্ট্র পাবার আকাক্সক্ষার সহযোগী হতেও পারল না দেশটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১১