ঢাকা: লিবিয়া যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের সত্যিকারের ব্যয় হয়েছে ২০৪৭৫ কোটি টাকা (১৭৫ কোটি পাউন্ড)। যুদ্ধের শুরুতে সরকারের আনুমানিক ব্যয়ের চেয়ে এই অংক সাতগুন।
যুক্তরাজ্য সরকার লিবিয়া যুদ্ধে সেনাবহিনীর ব্যয়ের বিষয়টি ধোঁয়াশায় ঢেকে রেখেছে বলে ওই গবেষণায় দাবি করা হয়। লিবিয়াতে যুক্তরাজ্যের অভিযানের সাতমাস অতিবাহিত হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহগুলোতে ন্যাটো বাহিনী এবং পশ্চিমা বাহিনীর হামলায় গাদ্দাফি প্রশাসনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারা ক্রমেই কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। ব্রিটেনের রয়্যাল এয়ার ফোর্স (আরএএফ) বিদ্রোহীদের পক্ষে ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে লিবিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে। আর এই হামলায় ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যয়বহুল ক্ষেপণাস্ত্র। যদিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখন এই ব্যয়বহুল ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার কমাতে চাচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে ট্রেজারি কোনো তহবিল দিচ্ছে না।
ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরেই যুদ্ধের ব্যয় নিয়ে আলোচনা উঠেছে। এমনকি খোদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েও এ নিয়ে কথা উঠেছে। কারণ দেশীয় অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থায় এই ব্যয় খুবই উদ্বেগের বিষয় খোদ সরকারের কাছেই।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে করা সর্বশেষ বিশ্লেষণের ওপর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রোববার লেবার পার্টি সেনাবাহিনীর ব্যয় সম্পর্কে গভীরভাবে জানার জন্য মন্ত্রীদের ডেকে পাঠিয়েছিল। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেটের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও প্রতিশ্রতি দেওয়া হয় পার্টি থেকে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মারফি বলেন, ‘এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আর এই বিষয়ে স্বচ্ছতাই সর্বাধিক কাম্য। ’
ইরাক যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য সরঞ্জামের পেছনে যে ব্যয় হয়েছিল, তা এখনও ট্রেজারি পরিশোধ করেনি। এরপরও কোনো কারণ না দেখিয়েই লিবিয়ায় এই দীর্ঘমেয়াদী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
চলতি মাসে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘যুক্তরাজ্যের যুদ্ধবিমান এক হাজার ছয় শরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে লিবিয়ায়। ন্যাটোর মোট হামলার পাঁচ ভাগের একভাগই করেছে যুক্তরাজ্য এবং ধ্বংস করেছে প্রায় ৯০০টি লক্ষ্যবস্তু। এছাড়া যুক্তরাজ্য আরও ৩২টি বিমান, অ্যাপাচি হেলিকপ্টার, যুদ্ধজাহাজ, একটি হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার, একটি সাবমেরিন এবং বেশ কয়েকটি অ্যান্টিমাইন ভেসেল মোতায়েন করেছে লিবিয়ায়। ’
যদিও এই তথ্য আরএএফের দেওয়া। সংসদে প্রশ্নের উত্তরে আরএএফ এই তথ্য প্রদান করে। কিন্তু প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সম্পাদক ফ্রান্সিস তুসা লিবিয়াতে প্রথম ছয় মাসের অভিযানের ব্যয় নির্ধারণে দুই সেট বিশদ বিবরণ তুলে ধরেন।
তার মতে, একেবারে সাধারণ হিসেবে আগস্টের শেষ পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান হারে যে ব্যয় হয়েছে, তার পরিমান ১৬১৪৬ কোটি টাকা (১৩৮ কোটি পাউন্ড) থেকে ১৮৪৮৬ কোটি টাকার (১৫৮ কোটি পাউন্ড) মধ্যে। যদিও বাস্তবিক ব্যয় উল্লিখিত ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি। ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৯৪৫ কোটি টাকা (৮৫ কোটি পাউন্ড) থেকে ২০৪৭৫ কোটির (১৭৫ কোটি পাউন্ড) মধ্যে।
জুন মাসে ব্রিটিশ সরকার বলে, লিবিয়া যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের ব্যয় হয়েছে সর্বসাকুল্যে ৩০৪২ কোটি টাকা (২৬ কোটি পাউন্ড)। আর এই হিসেবটি করেছিল চ্যান্সেলর জর্জ অসবোর্ন।
তুসা লিবিয়াতে যুক্তরাজ্যের অভিযানের অতিসাম্প্রতিক ব্যয় সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি। সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু টর্নেডো বিমান যুক্তরাজ্য থেকে লিবিয়াতে অভিযানের জন্য গিয়েছে। অভিযান শুরুর আগের সপ্তাহগুলোতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইতালির ‘জিয়োইয়া দেল কোল’ সেনা বেস থেকে ট্রাক এবং ট্রেইলার ভাড়া নিয়েছিল।
এ বিষয়ে মারফি বলেন, ‘সরকারের উচিত ব্যয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরা এবং মন্ত্রীদের চ্যালেঞ্জ করা উচিত যারা এরকম অর্থ ব্যয় করেছে। ’
মারফি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি লিবিয়ার যুদ্ধকে সমর্থন করে। ব্যয় হয়ে যাওয়া ১১৭০০ কোটি টাকা (১০০ কোটি পাউন্ড) প্রারম্ভিক বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি এবং এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে ব্যয় সম্পর্কিত আমরা আরও বিশদ বর্ণনা দেখতে চাই। আমরা এও জানতে চাই, কেন ড্যানি আলেক্সান্দার (টেজ্রারি মন্ত্রী) যুদ্ধের ব্যয় সম্পর্কে ভুল বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই যুদ্ধে খরচ হবে মাত্র কয়েকশ মিলিয়ন পাউন্ড। ’
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল চেরিস প্যারি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ বাজেট করার আগে মন্ত্রণালয়ের উচিত তার গুপ্ত ব্যয় সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া। প্রতিটি অভিযানেই কিছু গুপ্ত ব্যয় হয়, যা কখনোই উদ্ধার করা যায় না।
সরকার বলেছিল, লিবিয়া যুদ্ধে ব্যয় হবে ৩০৪২ কোটি টাকা (২৬ কোটি পাউন্ড)। তখন ব্যয়ের খাত জানতে চাওয়া হলে বলা হয়েছিল, ১৪০৪ কোটি টাকা (১২ কোটি পাউন্ড) ব্যয় হবে যুদ্ধ চলাকালীন প্রতি দিনের অভিযান পরিচালনা করতে। এই ব্যয়ের মধ্যে প্রশিক্ষণ ব্যয়ও অন্তর্ভূক্ত ছিল। বাকি ১৬৩৮ কোটি টাকা (১৪ কোটি পাউন্ড) ব্যয় করার কথা ছিল যুদ্ধের সরঞ্জামের পেছনে। কিন্তু তখন ট্রেজারি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কেউই ব্যয়ের আর কোনো খাত দেখায়নি।
ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান বার্নার্ড গ্রে’কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ট্রেজারি থেকে ইরাক যুদ্ধের জন্য কোনো অর্থ দেওয়া হয়েছিল কিনা। প্রতিউত্তরে তিনি বলেছিলেন, না, কোনো অর্থ এখনও দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১১