সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ইরাক, তুরস্ক ও ইরানের সংযোগস্থলে অবস্থিত কুর্দিস্তানজুড়ে এই গণভোট শুরু হয়। ১০ ঘণ্টা ধরে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে এই গণভোট।
কুর্দি রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই গণভোটকে বহুল প্রত্যাশিত বলে উল্লেখ করলেও প্রবল বিরোধিতা করছে বাগদাদ, ওয়াশিংটন, আঙ্কারা, তেহরানসহ পশ্চিমারা।
ভোটকে কেন্দ্র করে রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি বলেছেন, আমাদের নাগরিকদের সামাজিক কাঠামোর বিরুদ্ধে এটা অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত। ইরাকের ভাঙনের কোনো ভোট কখনোই গ্রহণ করা হবে না। আমরা এই গণভোট বা তার কোনো ফল মানি না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ইরাকের ঐক্য সুরক্ষায় এবং একতাবদ্ধ হয়ে বসবাসে আগ্রহী নাগরিকদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি চটে গিয়ে কুর্দিস্তান সরকারের সঙ্গে তেল-সীমান্তসহ বাণিজ্যিক লেনদেন স্থগিত করে এর বদলে বাগদাদ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে। অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই অঞ্চলের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে এই গণভোট আয়োজনে বেজায় নাখোশ যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরানসহ পশ্চিমারাও। কুর্দিস্তানের স্বাধীনতাকেন্দ্রিক তৎপরতায় বাগদাদ সরকারের ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি দমন কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে পশ্চিমারা আশঙ্কা জানালেও তুরস্ক ও ইরানের ভয়, তাদের কুর্দি জনপদেও এ ধরনের স্বাধীনতার চেতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
তবে বাগদাদ এবং পশ্চিমাদের এই তীব্র বিরোধিতাকে পাত্তা দিচ্ছে না কুর্দিস্তানের সরকার। আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি রোববারই এ বিষয়ে বলেন, ‘কেমন ভবিষ্যৎ চায়, সেটা প্রকাশ করতে গণতান্ত্রিক উপায়ে কুর্দিস্তানের জনগণকে আহ্বান করা কি কোনো অপরাধ?’
তবে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কুর্দিস্তান স্বাধীন হয়ে যাবে না জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এই গণভোট হচ্ছে স্বাধীনতার জন্য বাগদাদ সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পথ সহজ করতে। ফলাফলে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে বাগদাদ সরকারের সঙ্গেই আলোচনায় বসবো আমরা। ’
রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে কথার যুদ্ধ চললেও কুর্দিস্তানে দায়িত্বরত সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, সেখানকার জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছে। ভোটাররা মনে করছে, তারা তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত দিচ্ছে।
আইএস জঙ্গিদের তাণ্ডবের মুখে প্রায় দু’বছর অনেকটা অকার্যকর থাকা কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের পার্লামেন্টে গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো অধিবেশন বসে। সেদিন পার্লামেন্টে রোববারের গণভোটের প্রস্তাব আনা হলে তা পাস হয়ে যায়। ১১১ এমপির মধ্যে ৬৫ জন এমপিই ভোট দেন গণভোটের পক্ষে।
গণভোট প্রস্তাব পাসের পর কুর্দি এমপিদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায়। ক্ষমতাসীন কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির (কেডিআর) নেতা ওমেদ খোশনাও সেসময় বলেন, আমরা এই সময়ের জন্য একশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছি।
মধ্যপ্রাচ্যের চতুর্থ বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী হলেও কুর্দিদের স্বাধীন কোনো রাষ্ট্র নেই। ইরাকের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০ শতাংশ এই কুর্দিরা দশকের পর দশক ধরে নৃশংস নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। ১৯৯১ সালে সাদ্দাম হুসাইনের ইরাকের সঙ্গে কুয়েত ও পশ্চিমা জোটের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর স্বায়ত্তশাসন লাভ করে কুর্দিস্তান।
কিন্তু স্বায়ত্তশাসন পেলেও কুর্দিরা অভিযোগ করে আসছে, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যের শিকার। তুরস্ক ও ইরানের কুর্দিরাও অধিকার-বঞ্চনার অভিযোগে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করে আসছে। এরমধ্যে আইএসের কথিত খেলাফতের যুদ্ধ শুরু হলে কুর্দিরাও বাগদাদ সরকারের সঙ্গে এক হয়ে জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে নামে। ক’মাস আগে ইরাক থেকে আইএস বিতাড়িত হতে থাকায় স্বাধীনতার দাবিতে সরব হয় কুর্দিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এইচএ/
** গণভোটে যাচ্ছে কুর্দিস্তান, নাখোশ যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক