রোববার (২২ অক্টোবর) দিনভর ভোটগ্রহণের পর বুথফেরত জরিপ (এক্সিট পোল) দিচ্ছে আবের পক্ষে এই আভাস। একাধিক সংস্থার চালানো বুথফেরত জরিপ অনুযায়ী, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জনপ্রতিনিধি পরিষদের ৪৬৫ আসনের মধ্যে ২৫০ থেকে ৩০০টি পেতে চলেছে আবের এলডিপি।
স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টা) জাপানজুড়ে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই রাত ৮টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা) চলে এ ভোটগ্রহণ। কিছু কিছু এলাকায় ভোটগ্রহণের সময়ে কিছুটা অদলবদলও হয়।
ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এনইচকে’র চালানো বুথফেরত জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, আবের দল পাচ্ছে ২৫৩ থেকে ৩০০টি আসন। তাদের জোটে থাকা কোমেইতো পার্টিও পাচ্ছে ২৭ থেকে ৩৬টি আসন।
আরও কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি সংস্থার বুথফেরত জরিপও এলডিপি জোট ৩০০ আসনেরও বেশি পেতে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছে।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) সকালেই পাওয়া যাবে আনুষ্ঠানিক ফলাফল। এলডিপি জোটের নেতৃত্ব আশা করছে, বুথফেরত জরিপেরই প্রতিফলন দেখা যাবে আনুষ্ঠানিক ফলাফলে।
২০১২ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের পর এ নিয়ে দুই দফায় আগাম নির্বাচন ডাকলেন আবে। এর আগে ২০১৪ সালেও আগাম নির্বাচন ডাকেন তিনি। সেবার অর্থনৈতিক সংস্কারে তার পদক্ষেপ জনগণ সমর্থন করছে কি-না, তা যাচাই করতে নির্বাচন ডাকেন। ফলও পেয়ে যান আবে। এবারও সংসদের মেয়াদ পূরণের এক বছর আগে একই উদ্দেশে আগাম নির্বাচন ডাকলেন এলডিপি প্রধান।
জাপানের সংবাদমাধ্যম বলছে, এলডিপি জোট ফের ক্ষমতায় এলে আবে হবেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালন করা সরকারপ্রধান।
নির্বাচনে আবের জোটের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে টোকিও সিটির প্রথম নারী গভর্নর ইউরিকো কোইক’র নেতৃত্বাধীন আলোচিত নতুন দল কিবো নো তো’র (পার্টি অব হোপ) সঙ্গে। কোইক একসময় এলডিপিতেই ছিলেন। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে মতবিরোধে তিনি আবের দল ত্যাগ করেন। কাগজে-কলমে প্রধান বিরোধী দল বিরোধীদল ডেমোক্রেটিক পার্টির (ডিপি) নেতৃত্বাধীন জোটও লড়াইয়ে আছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রীর ‘আবেনোমিকস’ (আবে+ইকোনমিকস) বা ‘আবেতত্ত্ব’ দেশকে এগিয়ে দেবে বলে এলডিপির পক্ষ থেকে বিগত নির্বাচনে প্রচারণা চালানো হলেও ভ্যাট ও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় এ বছর জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী হয়ে পড়ে আবের। এরমধ্যে উত্তর কোরিয়ার ছোড়া দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে সাগরে পড়ায় এ উত্তেজনা নিরসনে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেন আবে। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই তিনি নিজের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে আগাম নির্বাচন ডাকেন।
অবশ্য কিছু বিশ্লেষকের ধারণা, চলতি বছরের শুরুর দিকে আবের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়লেও উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে শক্ত অবস্থান নেওয়ায় তার জনসমর্থন আবারও বেড়ে যায়। একটি জরিপ মতে, জুলাইয়ে আবের জনসমর্থন যেখানে ছিল ৩০ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ শতাংশের বেশি। আবার প্রধান বিরোধীদল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (ডিপি) সম্প্রতি ভাঙন দেখা দেয়। নিজের বেড়ে যাওয়া জনসমর্থন ও বিরোধী দলের দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সংসদে নিজের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতেই এ নির্বাচন ডেকেছেন আবে।
এলডিপির নেতারা বলছেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হলে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক পরিবর্তন আনবে তাদের দল। যেমন জাপানের বর্তমান আত্মরক্ষা বা সেলফ ডিফেন্স বাহিনীকে জাতীয় সামরিক বাহিনীতে রূপান্তরকরণে সংবিধান সংশোধন করা হতে পারে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার সময় আবেও বলেছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তা সঙ্কট মোকাবেলায় তিনি জনগণের সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট চান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
এইচএ/