বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যুসহ সংকট, সম্ভাবনার নানা দিক নিয়ে আলোচনা হবে এ অধিবেশনে যা পরবর্তীতে বিশ্ব কূটনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। তারা বলছেন, রোহিঙ্গা সংকট থেকে শুরু করে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের মতো বিষয়গুলো আলোচনা হতে পারে।
বর্তমানে আলোচিত বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহগুলো তুলে ধরা হলো-
রোহিঙ্গা সংকট: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ক্ষুদ্র গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সংকট বেশ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। গত বছর মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। অভিযোগ উঠছে দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যরা নির্যাতন চালিয়েছেন এ ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এমনকি অনেক তদন্তেও এ তথ্য উঠে এসছে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থা জাতিসংঘের অনুসন্ধানেও রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রমাণ মিলেছে। এ অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ‘বিশ্বের ভয়াবহ মানবিক সংকট ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করেছেন।
জাতিসংঘের মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালিও এ ইস্যুতে শিগগির পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জোর দিয়েছেন।
এদিকে নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও (আইসিসি) বলছে, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিচারিক ক্ষমতা রয়েছে সংস্থাটির। তবে মিয়ানমার সরকার বলছে, এ নিয়ে তদন্তের অধিকার নেই আইসিসির।
চলতি বছরের জুনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ দেখায় জাতিসংঘ। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা এখনও নিশ্চিত হয়নি।
বাংলাদেশ বিপুল সংখ্যক এ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে। এ নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সিরিয়া: সিরিয়া সংকট আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বেশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় দেশটি যেন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। ঘরহারা হয়েছে অসংখ্য মানুষ।
দেশটিতে অভ্যন্তরীণ ‘নজিরবিহীন’ভাবে বাস্তুচ্যুতের এ ঘটনাকে উদ্ধৃত করে জাতিসংঘ সতর্কও করেছে। এখনও থামেনি মানবিক বিপর্যয়।
বিদ্রোহীদের সবশেষ নিয়ন্ত্রিত ঘাঁটি দেশটির উত্তরাঞ্চলের প্রদেশ ইদলিবের নিয়ন্ত্রণ নিতে হামলা চালাচ্ছে বাসার আল আসাদের সরকার।
জাতিসংঘ সিরিয়ার এ অবস্থাকে এ শতাব্দীর ‘সর্বোচ্চ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ বলেও আখ্যা দিয়েছে। বেসামরিকদের যাতে ক্ষয়ক্ষতি না হয় এজন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক সংস্থা: জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এর ভবিষ্যত অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গতমাসে এ সংস্থাকে দেওয়া সব তহবিল বন্ধের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এতে তৈরি হয় শঙ্কা। এ সংস্থার তহবিল দিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়।
ফিলিস্তিনিদের নাকবা ঘটনার পর ১৯৪৯ সালে চালু করা হয় ইউএনআরডব্লিউএ। এখন থেকে এ সংস্থাটির তহবিল গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনি, পশ্চিম তীর, ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল জর্ডান ও সিরিয়ায় অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংস্থাটির তহবিলের অন্যতম প্রধান যোগানদাতা দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউএনআরডব্লিউএ তে তহবিল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।
ইরান: গত বছরের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ইরানের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দেশটির নেতৃত্বকে ‘দুর্নীতি পরায়ণ একনায়ক’ হিসেবেও ঘোষণা দেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ ও হিজবুল্লাহকে সহায়তার অভিযোগ তুলে ইরানের ওপর একহাত নেন তিনি।
চলতি বছরে মে মাসে ট্রাম্পের নতুন কাণ্ডে আরও সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয় ইরানের। ২০১৫ সালে ইরানের পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের করা চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন ট্রাম্প। আরোপ করেন আরও নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।
উত্তর কোরিয়া: গত বছরের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে উত্তর কোরিয়াকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। এমনকি উত্তর কোরিয়াকে ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের’ হুমকি দেন তিনি।
তবে এ বছরে সুর পাল্টেছে ট্রাম্পের। জুনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার প্রধান নেতা কিম জং উনের ‘ঐতিহাসিক’ বৈঠকের পর কোরিয়ার উপদ্বীপে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের অনেক ইঙ্গিতপূর্ণ কথাও শোনা গেছে। এ বৈঠকেই পুরোপুরি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দেয় উত্তর কোরিয়া।
ট্রাম্পও এখন কিম প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আবার দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গেও সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনা হয়েছে উত্তর কোরিয়ার। সবশেষ চলতি মাসেই তৃতীয়বারের মতো বৈঠক করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন ও কিম। সেখানেও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে দেশ দু’টির।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮
এএইচ/আরআর