সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলাকারী বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করছিলেন। এতে মুসল্লিরা গুলিবিদ্ধ হয়ে মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়ছিলেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হামলাকারীর গুলিতে নিহত প্রথম ব্যক্তি তাকে ‘হ্যালো ব্রাদার’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। এর জবাবে তাকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি ছোড়ে হামলাকারী। এতে ওই ব্যক্তি সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কিন্তু উগ্রবাদী এ বন্দুকধারী এরপরও এলোপাতাড়ি কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েন।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে আরো জানা গেছে, উগ্রবাদী এ সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত প্রথম ব্যক্তির নাম হাজি দাউদ নবী। ১৯৮০ সালে তিনি নিউজিল্যান্ডে আসেন। গত বছর বয়স সত্তর পেরিয়েছে প্রকৌশলী এই বৃদ্ধের। ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা গেছে, গণহত্যা শুরুর আগে হামলাকারীকে এই বৃদ্ধ বলছিলেন, ‘হ্যালো ব্রাদার’। কিন্তু হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট বৃদ্ধের অভিবাদনের জবাব দেয় বুলেটবৃষ্টির মাধ্যমে। এতে ভয়ঙ্কর গণহত্যার প্রথম শিকারে পরিণত হন এই আফগান অভিবাসী।
নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, শুক্রবার (১৫ মার্চ) ক্রাইস্টচার্চে জুমার নামাজ শুরুর ঠিক ১০ মিনিট পর অন্তত দুই বন্দুকধারী দু’টি মসজিদে গিয়ে সেজদারত মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। উভয় মসজিদেই তখন অন্তত ৩শ’ মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারী দু’জন সামরিক পোশাক পরে মসজিদ দু’টিতে ঢোকে। এরপর স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তাক করে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। একজন হামলাকারী তার মাথায় ক্যামেরা স্থাপন করে তা লাইভস্ট্রিম করে। হামলার ভয়াবহতা ভিডিও গেমসের চেয়েও বর্বরোচিত দেখা গেছে। হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট (২৮) অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের মৌলবাদী মানসিকতার লোক ছিল বলেও জানা গেছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) স্থানীয় সময় সকালে ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে কারাগারের সাদা শার্ট এবং হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে হাজির করা হলে কাঠগড়ায় ব্রেন্টন হাতের আঙুল দিয়ে একটি চিহ্ন দেখিয়েছেন, যা ‘White supremacist or power- শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ব’ বর্ণবাদের প্রতীক বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
শনিবার (১৬ মার্চ) তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দিয়ে স্থানীয় সময় সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। তখন আদালত আত্মপক্ষ সমর্থনে আনার জন্য কোনো আবেদন ছাড়াই পুলিশের হেফাজতে ব্রেন্টনকে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। একইসঙ্গে মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয় আগামী ০৫ এপ্রিল। এ দিন দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের উচ্চ আদালতে তাকে হাজির করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬, মার্চ ১৭, ২০১৯
এমএমইউ