চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তরফ থেকে তাদের ‘অধিকার রক্ষা’র কথা বলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান সিঙ্গাপুরে এক অনুষ্ঠানে এই হুঁশিয়ারিবার্তা দেন। যদিও ২ জুন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গে ফের একই কথা বলেন তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত বার্ষিক সংলাপে চীন-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অংশ নেন। সেখানেই ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় বেইজিংকে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন কথা বলেন শানাহান।
বক্তৃতায় প্রথমে চীনের নাম উল্লেখ না করে শানাহান বলেন, সম্ভবত এই অঞ্চলের দেশগুলোর বৃহৎ স্বার্থের বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘমেয়াদী হুমকি আসছে, এই হুমকির পেছনে তারা, যারা আন্তর্জাতিক আইন-কানুনকে না মেনে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে চায়।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর সামরিক বাহিনীর দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী শানাহান বলেন, এ ধরনের আচরণ যদি চলতে থাকে, তবে গ্লোবাল কমন্সে (মালিকানাহীন বৈশ্বিক পরিসর) কৃত্রিম বিষয়াদির জন্য তাদের মাশুল গুনতে হতে পারে।
‘কৃত্রিম বিষয়াদি’ বলতে শানাহান দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় বেইজিংয়ের গড়ে তোলা কৃত্রিম দ্বীপকে ইঙ্গিত করেছেন।
পরে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা চীনের আচরণ এড়িয়ে যাবো না। আমার মনে হয়, হয়তো অতীতে লোকজন এসব বিষয়ে চুপ থেকেছে (কিন্তু সামনে আর নয়)।
গত কয়েক মাস ধরে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। চীনা অনেক পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কারোপের পর বেইজিংও পাল্টা মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত শুল্কারোপ করে। এই লড়াই সম্প্রতি ঠেকেছে চীনের স্মার্টফোন হুয়াওয়েতে।
মেধাস্বত্ব সম্পদ চুরির অভিযোগ তুলে ওয়াশিংটন প্রশাসন হুয়াওয়েকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করলে প্রতিষ্ঠানটির পাশ থেকে সরে যায় গুগলসহ অনেক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান। এতে ধস নামে হুয়াওয়ের ব্যবসায়। জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি শোনা যায় চীনের কর্তাপর্যায় থেকেও।
এর মধ্যেই তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিংয়েরে মধ্যে চাপা বাকযুদ্ধ শুরু হলো।
দক্ষিণ চীন সাগরের উপকূলে চীন, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনামসহ ৮টি দেশ থাকলেও প্রায় পুরো জলসীমাই নিজেদের মনে করে বেইজিং। এই আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় গভীর সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেছে চীন।
অপরদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গৃহযুদ্ধের জেরে চীন থেকে তাইওয়ান আলাদা হয়ে গেলেও বেইজিং মনে করে দ্বীপটি তাদেরই অংশ। তাছাড়া, তাইওয়ানও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। এজন্য বেইজিং ‘এক চীন নীতি’ তত্ত্ব প্রচার করে আসছে যুগের পর যুগ।
দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ওই হুঁশিয়ারির পর ২ জুন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গে বলেন, তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের অধিকার রক্ষায় চীন অবশ্যই দৃঢ়তর পদক্ষেপ নেবে।
যদিও পরে তাইওয়ানের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাইওয়ান কখনোই চীনের অংশ ছিল না এবং তাইপেই এ ধরনের হুমকিকে আমলে নেয় না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৯
এইচএ/