শনিবার (১৫ জুন) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন সৌদির সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তাকে মৃত্যুদণ্ডিত করা হবে না।
২০১১ সালে ‘আরব বসন্ত’র উত্তাল সময়ে সৌদি রাজতন্ত্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র দাবিতে গণবিক্ষোভকালে কুরেইরিস মাত্র ১০ বছর বয়সে তার বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সাইকেল রাইডে নেমেছিল। ওই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে তিন বছর পর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মুর্তাজাকে ১৩ বছর বয়সে গ্রেফতার করে রাজতন্ত্রের বাহিনী। সৌদি আরবের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী ‘রাজনৈতিক বন্দী’ হিসেবে মুর্তাজাকে নিক্ষেপ করা হয় কারাগারে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানানো হয়, সৌদি আরবে ‘অপরাধের দায়’ দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমার বিষয়টি অস্পষ্ট হলেও সেখানকার রাজতন্ত্র বলে আসছিল এ বয়সসীমা ১২ বছর মানা হয়। এমনকি ‘দায়’ দেওয়ার বয়সের আগে কেউ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সাজা দেওয়া হয় না। অথচ মুর্তাজার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগপত্র অনুসারে ‘অপরাধ সংঘঠিত করার সময়’ তার বয়স ছিল ১০ বছর। এমনকি মৃত্যুদণ্ড চেয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় মুর্তাজার ১৮ বছর বয়সে পদার্পণের কয়েক মাস আগে।
এ নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়ে সৌদির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় তোলে। অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায় মুর্তাজাকে। এমনকি রিয়াদ কর্তৃপক্ষ মুর্তাজার মৃত্যুদণ্ড বাতিল না করলে অস্ট্রিয়ায় সৌদি অর্থায়নে পরিচালিত একটি ধর্মীয় আলোচনা কেন্দ্রও বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় ভিয়েনা। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সৌদি সরকারের ওই কর্মকর্তা বিশেষ সাক্ষাৎকারে মুর্তাজার বিষয়ে সেখানকার সরকারের বর্তমান অবস্থানের কথা জানান।
রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে জানায়, মুর্তাজাকে প্রাথমিকভাবে যে ১২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তা তার গ্রেফতারের সময় থেকেই হিসাবে ধরা হচ্ছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক বিধায় তার ৪ বছরের কারাদণ্ড কমে যায়। সে হিসাবে তার কারাদণ্ড বাকি থাকে ৮ বছর। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার হওয়ায় এই ৮ বছর পূর্ণ হবে ২০২২ সালে। তখনই তার মুক্তি মিলতে পারে।
গত এপ্রিলে সৌদি আরব প্রায় ৩৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, মৃত্যুদণ্ড যাদের কার্যকর হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিয়া সম্প্রদায়ের।
সৌদি আরবে ভিন্নমতালম্বীদের ওপর দমন-পীড়ন বেড়ে গেছে ২০১৫ সাল থেকে। বাদশাহ সালমান সিংহাসনে আরোহণের পর ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করে আরও কিছু প্রভাবশালী পদে অধিষ্ঠিত করলে এই দমন-পীড়নের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এমনকি মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘আধিপত্যবাদী’ মানসিকতাই সৌদিকে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে নির্বিচারে বেসামরিক নাগরিক হত্যার অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৯
এইচএ/
আগের প্রতিবেদন
১৩ বছর বয়সে আটক, এখন এ কিশোরের মৃত্যুদণ্ড চায় সৌদি!