ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

লাইভে বাগদাদী হত্যা, যেনবা সিনেমা দেখছিলাম: ট্রাম্প 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৯
লাইভে বাগদাদী হত্যা, যেনবা সিনেমা দেখছিলাম: ট্রাম্প 

আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মূল হোতা আবু বকর আল বাগদাদী শনিবার রাতে (২৬ অক্টোবর) সিরিয়ায় মার্কিন সেনাবাহিনীর এক অভিযানে নিহত হন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি সম্প্রচারে বাগদাদীবধের ওই অভিযান দেখেন। সে অভিজ্ঞতাকে অ্যাকশন সিনেমা দেখার সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। 

রোববার (২৭ অক্টোবর) হোয়াইট হাউজে জাতীয় এক ভাষণে ওই অভিযানের অস্বাভাবিক সব বর্ণনা দেন ট্রাম্প। তার অনেক কিছুই রীতিমত উদ্ভট।

 

ট্রাম্প জানান, মাসখানেক ধরেই বাগদাদীর হদিসের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে কুর্দিরাও কিছু তথ্য দিয়ে সহায়তা করে বলে জানান তিনি। দুই সপ্তাহ আগে মার্কিন গোয়েন্দারা আইএস নেতার প্রকৃত অবস্থান জানতে পারে। পরবর্তীতে অভিযানের ৩ দিন আগে এ পরিকল্পনার সঙ্গে  প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হন ট্রাম্প।  

পরিকল্পনা অনুসারে, সিরিয়ার ইদলিব অঞ্চলে মার্কিন সেনা অভিযান চালাতে হলে রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরাকের কাছ থেকে তাদের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি নিতে হবে।  

ট্রাম্প বলেন, কী ধরনের অভিযান চালানো হবে রাশিয়াকে সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানায়নি হোয়াইট হাউজ। শুধু বলা হয়, অভিযান যেমনই হোক, সেটা তাদের ‘ভালো’ লাগবে।  

অভিযানের দিন ভার্জিনিয়ায় গলফ খেলা শেষে স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হোয়াইট হাউজে পৌঁছান ট্রাম্প। সিরিয়ায় সে সময় রাত সাড়ে ১০টা। বিকেল ৫টা নাগাদ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রিয়েন ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে হোইয়াট হাউজের ‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ’ কক্ষে প্রবশ করেন ট্রাম্প।  

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এরপরপরই সবাই সরাসরি ওই অভিযান দেখতে থাকি, যেনবা কোনো সিনেমা দেখছি। গোপন এক সামরিক ঘাঁটি থেকে ৮টি হেলিকপ্টারে উড়াল দিলো মার্কিন সেনা ও ডগ স্কোয়াড বাহিনী। ’ 

গোপন ঘাঁটিটি ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলের বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা। অন্যদিকে অভিযানে অংশ নেওয়া সৈন্যরা স্পেশাল বাহিনী ‘ডেলটা ফোর্সের’ সদস্য। সন্ত্রাস বিরোধী বিভিন্ন অভিযানে ভয়ানক সব অপরাধীদের পাকড়াও করতে প্রায়ই এ বাহিনী কাজ করে থাকে।  

স্থলপথে চালানো এ অভিযানে সামরিক বিমান ও জাহাজও সহযোগিতা করে বলে জানান ট্রাম্প।  শুধু তাই মার্কিন সেনারা এ অভিযানে একটি রোবটকেও সঙ্গে নেয় বলে জানান তিনি। কিন্তু শেষমেশ সেটিকে  ব্যবহার করতে হয়নি।  

‘বাগদাদীর গোপন আস্তানায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই গুলির মুখে পড়ে মার্কিন হেলিকপ্টারগুলো। কিন্তু সৈন্যরা তৎক্ষণাৎ হামলাকারীদের নিরস্ত করে নিরাপদে অবতরণ করে। আস্তানায় প্রবেশের মূল দরজায় ফাঁদ পেতে রাখা হতে পারে সন্দেহে মুহূর্তে আমাদের সেনারা দেয়ালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ’

‘ঢোকার পরপরই সৈন্যরা দ্রুত আস্তানা নিয়ন্ত্রণে নেয়। অনেকেই আত্মসমর্পণ করে। আর যারা তা করে না, তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়। সেখান থেকে নিরাপদে ১১ শিশুকেও উদ্ধার করে সেনারা। পরে তাদের তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ’ এই তৃতীয় পক্ষের পরিচয় গোপন রাখেন ট্রাম্প। পরে আস্তানা থেকে বেশ কিছু আইএস যোদ্ধাকে বন্দী করা হয় বলেও জানান তিনি।  

ট্রাম্প বলেন, ‘ওদিকে এ অবস্থায় ৩ সন্তান নিয়ে ভূ-গর্ভস্থ এক সুড়ঙ্গে পালিয়ে যান বাগদাদী’।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী এসপার সিএনএনকে জানান, সে সময় বাগদাদীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায় মার্কিন সেনারা। কিন্তু মোস্ট ওয়ান্টেড এ অপরাধী তা প্রত্যাখ্যান করেন।  

ট্রাম্পের বক্তব্য অনুসারে, এরপর ডগ স্কোয়াডের প্রশিক্ষিত কুকুরের তাড়া খেয়ে মরণফাঁদে আটকা পড়েন বাগদাদী। তার পালাবার পথ থাকে না। এক পর্যায়ে আর্তচিৎকার, কান্না ও ঘ্যানঘ্যান করতে করতে সন্তানদের নিয়ে আত্মঘাতী হন আইএসের পালের গোদা। এতে করে সুড়ঙ্গটি ধসে পড়ে।  

এ ঘটনায় কোনো মার্কিন সেনা আহত না হলেও, একটি কুকুর মারাত্মক আহত হয়েছে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এদিকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই বোমায় ক্ষতবিক্ষত মরদেহের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে বাগদাদীর পরিচয় নিশ্চিত করে সেনারা।  

পরে তারা বাগদাদীর আস্তানা তল্লাশি করে অতি সংবেদনশীল জিনিসপত্র ও আগামীতে আইএসের পরিকল্পনার ব্যাপারে বেশকিছু নথিপত্র উদ্ধার করে। নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মার্কিন সেনারা ২ ঘণ্টা ওই আস্তানায় অবস্থান করে বলে জানান ট্রাম্প।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রিয়েন বলেন, আল কায়েদার সাবেক নেতা ওসামা বিন লাদেনের মতোই বাগদাদীর মরদেহও যথাযথভাবে সৎকারের ব্যবস্থা করা হবে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে ইসলামি আইন ও রীতি অনুসারে ২০১১ সালে নিহত লাদেনের মরদেহ সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৯
এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।