একজন দিনমজুর হিসেবে আয়ের আর কোনো উৎস নেই তার। ফলে খাবারের জন্য সরকারি সহায়তার ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে তাকে।
অভিবাসী শ্রমিক নীরাজ কুমার পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। লকডাউন ঘোষণার পরই তিনি তার পরিবার নিয়ে আরও লাখো শ্রমিকের মতোই শহর ছেড়ে যান। গণপরিবহন বন্ধ, হেঁটে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না।
কুমার, তার স্ত্রী ও তাদের ১০ বছর বয়সী মেয়ে ততক্ষণে ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন বাড়ি যাওয়ার জন্য। কুমার বলেন, ‘এখানে কোনো কাজ নেই, তাই আমরা পালিয়ে যাচ্ছি। কোনো বাস নেই। গ্রামে পৌঁছাতে হলে আমাকে আরও ২৬০ কিলোমিটার হাঁটতে হবে। ’
আলম আর কুমারের মতো মানুষ, যারা ভারতের অসংগঠিত, অনানুষ্ঠানিক শিল্পে কর্মরত রয়েছেন অর্থাৎ দেশটির মোট জনসংখ্যার ৯৪ শতাংশ এবং মোট উৎপাদনের ৪৫ শতাংশই যাদের অবদান, তাদের সহায়তার জন্য ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
শুক্রবার (০৩ এপ্রিল) বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, লকডাউনের কারণে রাতারাতি বেকার হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। সরাসরি অর্থ সাহায্য ও খাদ্য সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী নির্মলা শিথারামান বলেন, ‘কাউকে ক্ষুধার্ত থাকতে হবে না। ’
অভূতপূর্ব এ লকডাউনে ভারতের অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, বেকারত্ব বেড়েছে এবং কমেছে উৎপাদন।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগেই ভারতীয় অর্থনীতির চাকা ছিল ধীর। একসময় বিশ্বের দ্রুততম প্রবৃদ্ধি ছিল এ দেশে। গত বছর প্রবৃদ্ধি কমে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ হয়, যা ছয় বছরে সর্বনিম্ন।
গত বছর বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। ৮টি প্রধান শিল্পখাতে উৎপাদন কমেছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা গত ১৪ বছরে সর্বনিম্ন। ২০১৬ সালে মুদ্রা বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত কাটিয়ে কেবল দাঁড়াতে শুরু করা ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করেছে।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে পঙ্গু হয়ে যাবে ভারতের অর্থনীতি।
সরকার যা পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা আশাজনক হলেও অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাসের খারাপ প্রভাব কিছুটা কমাতে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। অভিবাসী কর্মী ও দিনমজুররা ঝুঁকিতে রয়েছেন সন্দেহ নেই। সেই সঙ্গে ঝুঁকিতে রয়েছেন কৃষকরা। ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের ২৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আসে কৃষিখাত থেকে।
এপ্রিল মাসে কৃষকদের দুই হাজার রুপি করে অগ্রিম মজুরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থনীতিবিদ অরুণ কুমার বলছেন, ‘এ অর্থ অপর্যাপ্ত কারণ রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। অবৈধ লাভের চেষ্টায় শহরে পণ্যের দাম বাড়বে এবং গ্রামে দাম কমবে কারণ কৃষকরা তাদের শস্য বিক্রি করতে পারবেন না। ’
নতুন শস্য ইতোমধ্যে বিক্রির জন্য প্রস্তুত, এমন সময়ে শুরু হয়েছে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। সবচেয়ে বড় সমস্যা লকডাউনের মধ্যে গ্রাম থেকে শহরে খাবার পরিবহন নিশ্চিত করা।
এখানেই শেষ নয়। ভারতের সব খাত ঝুঁকিতে। ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোকসান গুনছে বিমানচালনা খাত। পর্যটনখাতেও ধস নেমেছে। সরকার ঘোষিত অর্থ সহায়তাও অপর্যাপ্ত। ভারতের অর্থনীতিকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও বড় ধরনের সহায়তা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২০
এফএম