ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

রানি এলিজাবেথকে সরাতে চায় অনেক দেশই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২২
রানি এলিজাবেথকে সরাতে চায় অনেক দেশই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্তিতে নানা দেশে যখন উৎসব চলছে, তখন কয়েকটি কমনওয়েলথ দেশ জানিয়েছে, তাদের দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তারা রানিকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে। যদিও সবাই চায় না রানিকে তাদের রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক।

কমনওয়েলথে যুক্তরাজ্য ছাড়াও আরও ৫৩টি দেশ রয়েছে। বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ এই দেশগুলোয় বসবাস করে, যা একসময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে লন্ডন থেকেই শাসন করা হতো।

যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর বেশিরভাগ দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এরপরও ১৪টি কমনওয়েলথ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে এখনো রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথই রয়েছেন। গত বছরের নভেম্বর মাস রানিকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে পুরোপুরি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় বার্বাডোস। আরও অনেক দেশেই এরকম দাবি উঠেছে। কিন্তু ক্যারিবিয়ানের আরেকটি দেশ বেলিজের অনেক নাগরিক এখনো রাজতন্ত্রের সঙ্গে তাদের একাত্মতা বোধ করেন।

জর্ডানা রিভেরোল বলেন, রানিকে ছাড়া আমি একজন বেলিজ হিসেবে নিজেকে চিন্তা করতে পারি না। আমার কাছে মনে হয়, তিনি আমাদের দেশেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যখন থেকে আমার জন্ম হয়, তখন থেকেই তাকে গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ হিসেবে দেখে এসেছি, তিনি এখনো রানি। তাকে বেলিজদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা কঠিন।

ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর মধ্যে এখন আটটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার মধ্যে অন্তত ছয়টি দেশ জানিয়েছে, তারা প্রজাতন্ত্রে পরিণত হতে চায় এবং রানিকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিতে চায়। রানির সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যখন রাজপরিবারের সদস্যরা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সফর করেন, তখন এ ধরনের দাবি আরও জোরালো হয়ে ওঠে।

যদিও এসব সফরের প্রতি অনেকের সমর্থন রয়েছে, কিন্তু দাসত্ব থেকে রাজপরিবার কীভাবে সুবিধা পেয়েছে সেটা স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভকারীরা কমনওয়েলথ দেশগুলো জুড়েই জোরালো দাবি তুলেছেন। বেলিজে জনসেবা, সংবিধান এবং রাজনৈতিক সংস্কার বিষয়ক মন্ত্রী হেনরি চার্লস আশার ঘোষণা করেছেন, কীভাবে দেশ শাসন করা হবে, সেই বিষয়ে একটি পরিষ্কার ও পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা তৈরির জন্য তহবিল বরাদ্দ করা হবে।

তিনি পার্লামেন্টে বলেন, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে উপনিবেশ মুক্তকরণ প্রক্রিয়া জোরালো হয়ে উঠছে। আমাদের স্বাধীনতা পুরোপুরিভাবে পাওয়ার জন্য হয়তো এখনি ঠিক সময়। একইভাবে জ্যামাইকা, বাহামা, গ্রানাডা, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারমুডা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসও রানিকে রাষ্ট্রপ্রধান পদ থেকে সরানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

বেলিজে বিক্ষোভের কারণে রাজপরিবারের প্রথম আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিটি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন ডিউক এবং ডাচেস অব কেমব্রিজ। তাদের একটি খামারে যাওয়ার কথা ছিল। কেনসিংটন প্যালেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ওই সফরটি বাতিল করা হয়েছে কারণ, সেখানকার কমিউনিটি ঘিরে স্পর্শকাতর বিষয় জড়িত ছিল।

বেলিজ প্রধানমন্ত্রী জন ব্রিসিনো বলেছেন, দেশের শাসন ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্র নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনার সময় এসেছে। আমরা, সময়, অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমাদের তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যাতে দেশের মানুষ উপলব্ধি করে যে তারাই এই দেশের প্রকৃত মালিক। '

১৯৮১ সালে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে বেলিজের বাসিন্দারা তাদের মতামত জানানোর সুযোগ পায়নি যে, তারা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে তাদের দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে চায় কিনা। রানিকে সরিয়ে দিতে গণভোটের কোনো প্রয়োজনীয়তাও রাখেনি দেশের সংবিধান। বরং হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভে দুই তৃতীয়াংশ ভোট হলেই এই সিদ্ধান্তের জন্য যথেষ্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২২
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।