ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের প্রস্তুতি

মো. আবুবকর সিদ্দীক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৪
সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের প্রস্তুতি সংগৃহীত ছবি।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হলো হজ। হজ ফরজ ইবাদত।

যেসব মুসলিম নর-নারীর শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি আর্থিক সঙ্গতি আছে, তাদের জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সনের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজব্রত পালনের সুযোগ পাবেন। ইতোমধ্যে হজযাত্রী নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং তা ৩০ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত চলবে।

হজ একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় ও সময়াবদ্ধ কার্যক্রম। সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ অনুসরণ করে বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় হজের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদিত হয়ে থাকে। এ রোডম্যাপ অনুসরণে বিচ্যুতি ঘটলে সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন ঘটে।

সৌদি যেতে প্রয়োজন একটি বৈধ পাসপোর্ট এবং হজের জন্য প্রয়োজন হজ ভিসা। ২০২৫ সালে হজ পালনের জন্য ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে। হজ ভিসা ছাড়া হজ পালন সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ থেকে দুটি মাধ্যমে হজ পালন করা যায়, যথা-সরকারি মাধ্যমে ও বেসরকারি হজ এজেন্সির মাধ্যমে। এবছর হজে যেতে প্রথমে প্রাক-নিবন্ধন ও তত্পরবর্তীতে প্রাথমিক নিবন্ধন এবং সবশেষে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হবে। এ বছরের অক্টোবরের ১ তারিখ থেকেই শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের হজ নিবন্ধন, চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।

হজ অফিস, ঢাকা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধন করা যাবে। এছাড়াও হজের কলসেন্টার ১৬১৩৬ নম্বরে ফোন করে,  e-Hajj BD মোবাইল অ্যাপ কিংবা  www.hajj.gov.bd এই ওয়েব পোর্টালে লগইন করে নিবন্ধন করা যাবে। তবে দুরারোগ্য ব্যধি যেমন—ক্যানসার, অ্যাডভান্সড কার্ডিয়াক, লিভার সিরোসিস, কিডনি রোগ, সংক্রামক যক্ষ্মা ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া হজ গমনেচ্ছু বাংলাদেশের যেকোনো মুসলিম নাগরিক যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে হজে যেতে পারবেন।

নিবন্ধনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট, সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি ছবি ও হজযাত্রীর ব্যাংক হিসাবের তথ্য প্রয়োজন হবে। প্রাক-নিবন্ধনের জন্য ৩০ হাজার ও প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য ৩ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দিতে হবে।  
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের মধ্যে প্যাকেজ মূল্য পরিশোধ করে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। প্রাক-নিবন্ধনকালে জমাকৃত ৩০ হাজার টাকার মধ্যে প্রাক-নিবন্ধন প্রসেস ফি বাবদ এক হাজার টাকা কর্তনের পর অবশিষ্ট ২৯ হাজার টাকা এবং প্রাথমিক নিবন্ধনের তিন লাখ টাকা চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময় প্যাকেজ মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।

গত ৩০ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা হজ প্যাকেজ ২০২৫ ঘোষণা করেছেন। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ ও সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ নামে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এর মূল্য ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং অন্যটির মূল্য ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। সরকারের দৃঢ় মনোভাব ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই এবছর বিমান ভাড়া ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমেছে।

রাজস্ব বোর্ডও হাজিদের জন্য বিমান টিকিটের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। সৌদি রিয়ালের দাম গতবারের তুলনায় ২ দশমিক ৭৬ টাকা বাড়ায় সঙ্গতকারণে হজের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কিন্তু সরকার এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা যাতে সুলভে হজ পালন করতে পারে সেলক্ষ্যে সরকার হাজিদের আবাসন ও সেবায় কিছুটা পরিবর্তন এনে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
 
এবছর বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। এছাড়া সাধারণ হজ প্যাকেজ গ্রহণপূর্বক এজেন্সিকে একটি অতিরিক্ত বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো দুটি অংশ আলাদা আলাদাভাবে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

হজযাত্রীকে বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করে হজ অফিস, ঢাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বায়োমেট্রিক সনদ ও পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।  

শিশুদের নিবন্ধন অভিভাবকের সঙ্গে একত্রে করতে হবে। হজ শেষে শিশু বা নবজাতকের বিমান ভাড়ার ফেরতযোগ্য অংশ প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার কারণে হজে যেতে সক্ষম না হলে জমা করা অর্থের অব্যয়িত অংশ হজযাত্রীকে ফেরত দেওয়া হয়ে থাকে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক বিধি অনুসরণপূর্বক প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা হজের সময় সঙ্গে নেওয়া যাবে। হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে বা বেসরকারি স্বনামধন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সম্পন্ন করে রিপোর্টসহ টিকা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিয়ে টিকা সংবলিত স্বাস্থ্য সনদপত্র নিতে হবে। বিমানে ভ্রমণকালে একজন হজযাত্রী সর্বোচ্চ ৪৬ কেজি (২৩+২৩) ওজনের ২টি ট্রলিব্যাগ ও সর্বোচ্চ ৭ কেজি ওজনের একটি হ্যান্ড ব্যাগ সঙ্গে নিতে পারবেন। ট্রলিব্যাগে হজযাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, whatsapp যুক্ত মোবাইল নম্বর, গাইড, মোনাজ্জেম মোবাইল নম্বর ইত্যাদি ইংরেজিতে লিখতে হবে।  

সৌদি সরকারের আইনানুযায়ী, হজযাত্রীর লাগেজে নেশা জাতীয় ওষুধ, তামাক পাতা, জর্দ্দা, গুল, শুঁটকি, গুড়, রান্না করা খাবার, পচনশীল দ্রব্যাদি (ফলমূল, পান, সুপারি) ইত্যাদি পরিবহন করা নিষিদ্ধ।

ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো অসুস্থতার জন্য প্রেসক্রিপশনসহ নিয়মিত সেবন করতে হয় এরূপ ওষুধ, স্ট্রিপ ইত্যাদি অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে।
 
ঢাকার হজযাত্রীরা হজ ফ্লাইট সময়ের কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা আগে এবং ঢাকার বাইরের হজযাত্রীদের কমপক্ষে এক দিন আগে ঢাকার আশকোনা হজক্যাম্পে উপস্থিত থাকতে হবে। হজক্যাম্প ডরমেটরিতে বিনামূল্যে থাকা এবং নিজ খরচে ক্যান্টিনে খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়।

সৌদি আরবে হজযাত্রীকে নুসুক কার্ড, পরিচয়পত্র, মোয়াল্লেম কার্ড ও হোটেলের কার্ড সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখতে হবে।  

সৌদি আরবে অবস্থানকালে রাজনীতি, বিক্ষোভ প্রদর্শন, মানববন্ধন, ভিক্ষাবৃত্তি, চুরিসহ সব ধরনের অনৈতিক এবং অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় সেদেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
হজ সফরে মৃত্যুবরণকারী হজযাত্রীকে সৌদি আরবে দাফন করা হয়ে থাকে। হজ শেষে মৃত্যু সনদ হজ অফিস, ঢাকার মাধ্যমে মৃতের ওয়ারিশ বা বৈধ প্রতিনিধির নিকট হস্তান্তর করা হয়। লাগেজ হারিয়ে গেলে বাংলাদেশ হজ অফিস, জেদ্দা,মক্কা বা মদিনায় সরাসরি বা এজেন্সির মোনাজ্জেম বা গাইডের মাধ্যমে অবহিত করতে হবে। দেশে ফেরার পথে লাগেজ হারানো গেলে এ সংক্রান্ত তথ্যাদি এয়ারপোর্টের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ সেকশনে জানাতে হবে। জেদ্দা, মক্কা ও মদিনায় স্থাপিত মেডিকেল সেন্টার হতে হজযাত্রীরা বিনামূল্যে চিকিত্সা সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। তবে খাবার পানি, হ্যান্ডওয়াশ/সাবান ও টয়লেট পেপার নিজ ব্যবস্থাপনায় ক্রয় করে ব্যবহার করতে হবে।

২৫ জিলকদ ১৪৪৬ হিজরির পর কোনো হজযাত্রী মক্কা কিংবা জেদ্দা থেকে সড়ক পথে মদিনায় গমন করতে পারবেন না। ৫ জিলহজের পরে কোনো হজযাত্রী মদিনা-আল-মুনাওয়ারায় অবস্থান করতে পারবেন না। হজের পরে ১৪ জিলহজের আগে কোনো হজযাত্রী মক্কা-আল-মোকাররমা থেকে মদিনা-আল-মুনাওয়ারায় গমন করতে পারবেন না।

হজব্রত পালনের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। পরিকল্পিত পদক্ষেপের মাধ্যমে অগ্রসর হলে হজের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি সহজ ও সাবলীলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। মহান আল্লাহ সবার হজ সহজ করে দিন, আমিন।

লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।