ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মায়ের সেবায় পাপ ঝরে যায়

মাওলানা শেখ তারেক হাসান মাহদী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
মায়ের সেবায় পাপ ঝরে যায়

পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক মা। মায়ের মতো আপন কেউ হয় না।

ফুল-পাখি-নদী-ঝর্না কোনো কিছুই মায়ের মতো মায়াবি না। দুনিয়ার অনেক রং আছে, অনেক আলো আছে, অনেক জৌলুস আছে; তবে মায়ের মতো এত রং, এত আলো, এত জৌলুস আর কিছু নেই। জীবন যখন নিরানন্দ হয়ে ওঠে, হৃদয়ের জমিন যখন শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়, মা তখন আনন্দের বর্ষণ হয়ে সন্তান মন আকাশ ভিজিয়ে দেয়। যার মা নেই, তার সব থেকেও কিছু নেই। মায়ের সেবা অন্যতম ইবাদত।  

একজন সাহাবি এসে নূর নবীজিকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওগো দয়াল নবী! আমার ভালো ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? নবীজি বলেন, তোমার মায়ের। সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কার? নবীজি বলেন, তোমার মায়ের। সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কার? এবারও নবীজি বললেন, তোমার মায়ের। চতুর্থবার সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, তারপার কার? নবীজি বলেন, তোমার বাবার। তারপর তোমার কাছের মানুষজন। ’ (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নম্বর ৩)

মা এমন এক সম্পদ দুনিয়া আখেরাতে যার বিকল্প নেই। বন্ধু হারালে বন্ধু পাওয়া যায়। অর্থ খোয়া গেলে অর্থ গড়ে নেওয়া যায়। সম্পদ নষ্ট হলে আবার তৈরি করা যায়। কিন্তু মা একবার চলে গেলে আর পাওয়া যায় না। যতদিন মা বেঁচে থাকে ততদিন মাথার ওপর মায়ের দোয়া থাকে। একবার ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বড় অপরাধের ভঙ্গিতে বলল, ‘ওগো আল্লাহর নবীর পেয়ারা সাহাবি! আমি রাগের মাথায় খুন করেছি। এক রূপবতীকে আমি বিয়ের প্রস্তাব দিই। সে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়নি। কিছুদিন পর অন্য একজন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। বিষয়টি জেনে আমার প্রচণ্ড রাগ হয়। নিজেকে খুব ছোট মনে হতে থাকে। অপমানের আগুন আমার ভেতরকে পুড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে রাগের মাথায় আমি ওই নারীকে খুন করে ফেলি। এখন আপনি বলুন আমার জন্য তওবার দরজা খোলা আছে কি?’ ইবনে আব্বাস (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে যুবক তোমার মমতাময়ী মা বেঁচে আছেন?’ জবাবে যুবক বলল, ‘আমি হতভাগার মাও বেঁচে নেই। ’ ইবনে আব্বাস কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলেন, ‘তুমি খালেস দিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করো এবং নেক আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করো। ’

যুবকটি চলে গেলে বর্ণনাকারী আতা ইবনে ইয়াসার (রা.) ইবনে আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি তার মায়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছেন কেন?’ জবাবে ইবনে আব্বাস বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মায়ের সেবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো আমলের কথা আমার জানা নেই। তার মা বেঁচে থাকলে সে যদি মায়ের সেবা করত খুব সহজেই আল্লাহ তার তাওবা কবুল করে নিতেন। ’ (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নম্বর ৪)

মায়ের সেবার পুরষ্কার সম্পর্কে আরো একটি চমত্কার হাদিস আছে। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিক (রা.)। নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমি যখন মেরাজে যাই তখন সুললিত কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এমন মধুর তেলাওয়াত কার কণ্ঠ থেকে ভেসে আসছে?’ বলা হল, ‘এটা হারিসা ইবনে নুমানের কণ্ঠ। সে ছিল পরম মা ভক্ত ছেলে। ’ এতটুকু বলার পর নবীজি (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমরা হারিসার মতো মা ভক্ত হও। হারিসার মতো মা ভক্ত হও। অবশ্যই হারিসা অন্য সবার চেয়ে মায়ের প্রতি বেশি যত্নশীল। ’ 

মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদি এ হাদিস উদ্ধৃত করার পর আদাবুল মুফরাদের টিকায় লিখেন, ‘মায়ের সেবা এমন এক এবাদত, যা বান্দার গোনাহ ঝরিয়ে জান্নাত নিশ্চিত করে দেয়। ’ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে অনূদিত আদাবুল মুফরাদের টিকা, ২৮ পৃষ্ঠা)

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।