ভিক্ষা একটি সামাজিক সমস্যা ও অপরাধ। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ভিক্ষা নিষিদ্ধ।
সামাজিক জীবনে আমরা দেখতে পাই যারা ভিক্ষা করে, তারা অসম্মানজনক, অবহেলিত ও তুচ্ছ জীবনযাপন করে। কোনো মুসলমান অপর কারো কাছে হাত প্রসারিত করলে তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিলীন হয়ে যাবে এবং স্বীয় মনুষ্যত্বের মান-মর্যাদা অকারণে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে কঠোর বাণী উচ্চরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষা চায়, সে নিজ হস্তে অঙ্গার একত্রিত করার মতো ভয়াবহ কাজ করে। ’ -বায়হাকি
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘যে লোক ধনী হওয়ার উদ্দেশ্যে লোকদের কাছে ভিক্ষা চাইবে, সে নিজের চেহারাকে কেয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য ক্ষতযুক্ত করে দিল। এখানে যার ইচ্ছা নিজের জন্য এসব জিনিস বেশি পরিমাণে সংগ্রহ করুক আর যার ইচ্ছা কম করুক। ’
আল্লাহর নবী ও রাসূলরা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও নিজ হাতে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করতেন, সেখানে কেন আমরা অপরের গলগ্রহ বা অকর্মা, নিষ্কর্মা পরজীবী হয়ে জীবনযাপন করব? কোনো বিবেকবান মানুষ অকর্মা হয়ে বসে থাকতে পারে না। পরগাছা, পরজীবীরা সমাজে অসম্মানিত, লাঞ্ছিত, ধিক্কৃত, অবহেলিত। সুস্থ, সবল শিক্ষিত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কোনো লোক পরজীবী বা পরগাছা হয়ে জীবনযাপন করতে পারে না।
জনৈক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ভিক্ষা চাইতে এলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে ভিক্ষা না দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের উপায় বাতলে দেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ছিলেন আত্মনিভর্রশীল। সবাই নিজ হাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। কেউ কারো গলগ্রহ হয়ে থাকেননি।
এর পরও কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তি থেমে নেই, উল্টো এটা এখন পরিণত হয়েছে লাভজনক বাণিজ্যে। ভিক্ষাবৃত্তি বা ভিক্ষুকদের নিয়ে মুখরোচক অনেক আলোচনা ও খবর গণমাধ্যমে প্রায়ই প্রকাশ পায়। সে সব খবরের প্রেক্ষিতে বলা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষুকদের নিয়ন্ত্রণ করে বেশ কিছু শক্তিশালী চক্র।
তারা অবুঝ শিশু ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এমনকি সুস্থ মানুষকে কৃত্রিম উপায়ে প্রতিবন্ধিত্বের কবলে ফেলে এ বাণিজ্য করছে।
নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে চলৎশক্তিহীন বৃদ্ধদেরও ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করছে তারা। শুধু বেঁচে থাকা বা পেটের দায়ে নয়, ভিক্ষা করে বা ভিক্ষুকদের সিন্ডিকেট করে বাড়ি-গাড়ি করার অবাক করা খবরও সম্প্রতি প্রকাশ পাচ্ছে। এ টাকায় তাদের নিরাপত্তা ও ভিক্ষা করার জায়গার নিশ্চয়তা মেলে। ক্ষেত্রবিশেষ ভিক্ষার পয়েন্ট সুরক্ষিত রাখতে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে কাউকে স্থানীয় সন্ত্রাসীদেরও কিছু টাকা দিতে হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ভিক্ষুক সিন্ডিকেটের লোকেরা শিশুদের অপহরণ করে অঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটিয়ে তাদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করিয়ে থাকে। তাদের সৃষ্ট অসংখ্য লোমহর্ষক ঘটনা রয়েছে। যার বর্ণনায় গা শিউরে ওঠে। ভিক্ষুকদের উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। তাদের ভিক্ষুকদের হাত থেকে বাঁচাতে সম্প্রতি ঢাকার কিছু এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা বলে ঘোষণাও করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে সমাজ বিশ্লেষকদের অভিমত হলো, মনুষ্য সত্ত্বার মর্যাদাবোধের জাগ্রতকরণই পারে এমন অপমানজনক কাজ থেকে মানুষকে বাঁচাতে।
প্রসঙ্গত এক্ষেত্রে একটি অনুচ্চারিত ও রূঢ় সত্য হলো, আসলে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্তার করা সর্বগ্রাসী এ দুর্নীতি রোধে রাষ্ট্রযন্ত্র অনেকটাই অসহায়। কারণ, যন্ত্র দিয়ে যান্ত্রিকভাবে কাজ করা যায়; কিন্তু যন্ত্র দিয়ে মনের ওপর প্রভাব ফেলা যায় না।
আমরা জানি, দুর্নীতি জন্ম নেয় মানুষের মনের ভেতর থেকে। সেক্ষেত্রে মনের শুদ্ধতা ও উৎকর্ষতা অর্জিত না হলে দুর্নীতি নির্মূল কখনও সম্ভব নয়। একথা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের আবশ্যিকভাবে স্বীকার করতে হবে। সেই সঙ্গে তাদেরকে অনিবার্যভাবে এও উপলব্ধি করতে হবে যে, শতকরা ৯০ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এদেশের মানুষের মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে হলে ইসলামী আদর্শ ও ভাবধারার প্রচার-প্রসার ও প্রতিফলনের ব্যবস্থা করতে হবে।
যেহেতু ভিক্ষুকরা ভিক্ষাবৃত্তির মুহূর্তে ধর্মকে ব্যবহার করে, সেখানে ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূলে ধর্মের বাণী ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, ধর্ম অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেছে, ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ। মানবিক কারণে বিপদগ্রস্থদের সাহায্য-সহযোগিতা অবশ্যই সওয়াবের কাজ, কিন্তু কারও যদি এটাই হয়ে যায় বেঁচে থাকার অবলম্বন সেক্ষেত্রে তা অবশ্যই নিন্দনীয়। ইসলাম এমন কাজের অনুমতি দেয় না। ইসলামের এই কথাগুলোর ব্যাপক প্রচার-প্রসার হলে আশা করা যায় সমাজ থেকে ভিক্ষাবৃত্তির অভিশাপ কিছুটা কমে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘন্টা, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫