সিরাত শাস্ত্রের ওপর রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে সর্বাধিক প্রাচীন, প্রামাণ্য ও গ্রহণযোগ্য সীরাতগ্রন্থ-‘আস সীরাতুন-নাবাবিয়্যাহ লি ইবনে ইসহাক। ’ বাংলা ভাষায় যা ‘সীরাতে ইবনে ইসহাক’ নামে খ্যাত।
মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রহ.) ৮৫ হিজরি সনে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। মদিনাতেই তিনি যৌবন কাটান। এরপর তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে বের হন। মিসরিয় একদল হাদিসবেত্তার নিকট থেকে হাদিস সংগ্রহ ও বর্ণনা করেন। তাদের অন্যতম হলেন- উবায়দুল্লাহ বিন মুগিরা, উবায়দুল্লাহ বিন আবি জাফর ও ইয়াজিদ ইবনে হাবিব (রহ.) প্রমুখ।
মিসর থেকে তিনি আল জাজিরা, কুফা, বুহায়রা এবং সর্বশেষে বাগদাদ সফর করেন। এখানেই তার সঙ্গে আব্বাসীয় খলিফা মানসুরের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি তাকে ছেলে মাহদির জন্য একটি ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করতে বলেন। খলিফা নির্দেশ দেন, তিনি যেনো এমন একটি গ্রন্থ রচনা করেন যেখানে হজরত আদম (আ.) থেকে ওই সময় সময় পর্যন্ত ঘটে যাওয়া যাবতীয় বিষয়ের উল্লেখ থাকে। খলিফার নির্দেশ মতেই ইবনে ইসহাক (রহ.) তার অমর গ্রন্থখানি রচনা করেন।
তার সীরাত গ্রন্থ সম্পর্কে ইবনে আদি বলেন, ‘সমসাময়িক শাসকদেরকে অর্থহীন পুস্তকাদি প্রণয়ণ থেকে বিমুখ করে রাসূল (সা.)-এর সশস্ত্র সংগ্রাম, তার নবুওয়তপ্রাপ্তি ও বিশ্ব সৃষ্টির ইতিহাস রচনার কাজে আত্মনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করা যদি ইবনে ইসহাকের একমাত্র কৃতিত্বও হতো, তবুও এ কৃতিত্বে তিনিই অগ্রণী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বলে পরিগণিত হতেন। ’ -আর রাওদুল আনিফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১২
ইমাম ইবনে ইসহাক (রহ.) তার জীবনের শেষ সময়টুকু বাগদাদেই অতিবাহিত করেন এবং এখানেই ১৫২ হিজরি সনে তার ইন্তেকাল হয়।
হজরত ইবনে ইসহাক (রহ.)-এর খ্যাতি, পাণ্ডিত্য ও জ্ঞান-প্রতিভার জন্যই গ্রন্থটি রচনাকাল থেকেই প্রামাণ্য গ্রন্থের মর্যাদা লাভ করে। এ গ্রন্থে তিনি হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে সব নবী ও রাসূলদের জীবন ও ইতিহাস একত্রিত করেছেন। তা করেছেন, কালের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তাকারে। পারতপক্ষে তিনি ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেননি। ইবনে হিশাম (রহ.)-এর বিন্যাস ও সম্পাদনায় গ্রন্থটি আরো অনবদ্য হয়ে ওঠে।
ইবনে হিশাম ও ইবনে জারির তাবারি (রহ.) প্রমুখের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ইবনে ইসহাক (রহ.) তার গ্রন্থকে তিনভাগে ভাগ করেছিলেন- ক. সৃষ্টির সূচনা থেকে মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত, খ. মুহাম্মদ (সা.)-এর মক্কি ও মাদানি জীবন ও গ. মুহাম্মদ (সা.)-এর যুদ্ধ ও সংগ্রাম।
তবে বর্তমানে সীরাতে ইবনে ইসহাকের যে কপি পাওয়া যায় তাতে সম্পূর্ণ বর্ণনা পাওয়া যায় না।
এই মূল্যবান গ্রন্থটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৯৮৭ সালে প্রথম দুই খণ্ড এবং ১৯৯২ সালে তৃতীয় খণ্ডের বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করেছে। বহুদিন যাবত কোনো পুনর্মুদ্রণ না হওয়ায় বর্তমানে তা আর বাজারে পাওয়া যায় না।
সিরাত গবেষকগণের প্রত্যাশা ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই অমূল্য প্রামাণ্য গ্রন্থটির পুনর্মুদ্রণ করবে। ইতিহাসের প্রথম সিরাত গ্রন্থ হিসেবে সিরাতে ইবনে ইসহাক অবশ্যই বিশেষ মর্যাদার দাবীদার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
এমএ
** মুসলমানদের স্বমহিমায় জেগে ওঠার দিন
** নবীর অনুসরণই তার প্রতি ভালোবাসার শ্রেষ্ঠতম প্রতিফলন
** শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেযা
** পূর্ণাঙ্গ সিরাতের চর্চা না থাকায় তরুণসমাজ সহজে বিভ্রান্ত হচ্ছে
** সিরাত কাকে বলে?
** নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন
** ফেসবুকে মহানবীর মর্যাদা ও পরিচয় বিষয়ক ক্যাম্পেইন
** নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ
** আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে
** পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা
** স্বাগতম রবিউল আউয়াল মাস