ঢাকা, শনিবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

জান্নাতি মানুষের পরিচয়

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৬
জান্নাতি মানুষের পরিচয়

ভালো কাজ মানুষকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায় আর খারাপ কাজ মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। যারা ঈমানদার তারা সবসময় ভালো কাজ করে এবং অন্যদেরকেও ভালো কাজের দিকে ডাকে ও উৎসাহ দেয়।

যাদের ঈমান নেই তারা সবসময় খারাপ কাজে লিপ্ত থাকে এবং অন্যদেরকেও এ কাজে উৎসাহ দেয়।

যারা নেক আমল করবে, নেক আমল করাই যাদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য, তারা জান্নাতি। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কথাগুলো এভাবে বলেছেন, ‘...যারাই আল্লাহতায়ালার ওপর ঈমান আনবে এবং নেককাজ করবে, তারা বেহেশতবাসী হবে, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে। ’ -সূরা বাকারা: ৮২

সেই সঙ্গে যারা নিজেদের গুনাহের জন্য তওবা করে তারাও জান্নাতি। যারা প্রকৃত মুমিন তারা ভুলক্রমে কোনো খারাপ কাজ করে ফেললে তার জন্য তারা অনুতপ্ত হয়, তারা এজন্য তওবা করে। আল্লাহতায়ালা তাদের এ অনিচ্ছাকৃত গুনাহ ক্ষমা করে দেন।

এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা) যারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা (এর দ্বারা) নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে (সঙ্গে সঙ্গেই) তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং গুনাহের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা আল্লাহতায়ালা ছাড়া আর কে আছে যে (তাদের) গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (তদুপরি) এরা জেনে বুঝে নিজেদের গুনাহের ওপর কখনও অটল হয়ে বসে থাকে না। এই মানুষগুলোর প্রতিদান হবে, আল্লাহতায়ালা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। আর (তাদের) এমন এক জান্নাত (দিবেন) যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে, সেখানে (নেককার) লোকেরা অনন্তকাল অবস্থান করবে। সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কত সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। -সূরা আল ইমরান: ১৩৫-১৩৬

যারা ঈমান আনার পর নেক আমল করে তাদের জন্যও জান্নাত। যারা আল্লাহর ওপর পূর্ণ ঈমান আনবে এবং সে অনুযায়ী নেক আমল করবে, আল্লাহতাদেরকে জান্নাত দিবেন।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘হে মানুষ! তোমরা এ পার্থিব জীবনের ধোঁকায় পড়ে আছ, অথচ আল্লাহতায়ালা তোমাদের চিরস্থায়ী এক শান্তির নিবাসের দিকে ডাকছেন; তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সহজ সরল পথে পরিচালিত করেন। যারা ভালো কাজ করেছে (যাবতীয়) কল্যাণ তো থাকবে তাদের জন্যে এবং (থাকবে তার চাইতেও) বেশি, সেদিন তাদের চেহারা কোনো কালিমা ও হীনতা দ্বারা আচ্ছন্ন থাকবে না; তারাই হবে জান্নাতের অধিবাসী, তারা সেখানে থাকবে চিরকাল। পক্ষান্তরে যারা মন্দ কাজ করেছে, তাদের মন্দের প্রতিফল মন্দের মতোই হবে, অপমান তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলবে; সেদিন আল্লাহর আজাব থেকে তাদের রক্ষাকারী কেউ থাকবে না, তাদের চেহারা এমন কালো হবে, যেন রাতের অন্ধকার ছিঁড়ে একটি টুকরো তাদের মুখের ওপর ছেয়ে দেওয়া হয়েছে, এরা হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। ’ -সূরা ইউনুস: ২৬-২৭

জান্নাত পেতে হলে দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করতে হবে। দেখুন, দুনিয়াকে আল্লাহতায়ালা অত্যন্ত সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন। প্রতিটি বস্তুকে মানুষের জন্য আকর্ষণীয় করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহতায়ালা মানুষের জন্য নারী জাতি, সন্তান-সন্ততি, কৃষি জমি, পার্থিব সম্পদ ইত্যাদি লোভনীয় করে সৃষ্টি করেছেন। যারা এসবের মোহ ত্যাগ করবে এবং এগুলোর ভালোবাসার চেয়ে আল্লাহর ভালোবাসাকে অগ্রাধিকার দিবে, তারাই জান্নাত লাভ করবে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নারী জাতির প্রতি ভালোবাসা, সন্তান-সন্ততি, কাঁড়ি কাঁড়ি সোনা-রূপা, পছন্দসই ঘোড়া, গৃহপালিত জন্তু ও জমিনের ফসল (সব সময়ই) মানব সন্তানের জন্যে লোভনীয় করে রাখা হয়েছে (আসলে) এ সব হচ্ছে পার্থিব জীবনের কিছু ভোগের সামগ্রী মাত্র। (স্থায়ী জীবনের) উৎকৃষ্ট আশ্রয় তো একমাত্র আল্লাহতায়ালার কাছেই রয়েছে। হে নবী! আপনি (তাদের) বলুন, আমি কি তোমদের এগুলোর চাইতে উৎকৃষ্ট কোনো বস্তুর কথা বলবো? (হ্যাঁ, সে উৎকৃষ্ট বস্তু হচ্ছে তাদের জন্যে) যারা আল্লাহকে ভয় করে, এমন সব লোকদের জন্যে তাদের মালিকের কাছে রয়েছে (মনোরম) জান্নাত, যার পাদদেশ দিয়ে প্রবাহমান থাকবে (অগণিত) ঝর্ণাধারা এবং তারা সেখানে অনাদিকাল থাকবে, আরো থাকবে (তাদের) পুত-পবিত্র সঙ্গী ও সঙ্গীনীরা। সর্বোপরি থাকবে আল্লাহতায়ালার (অনাবিল) সন্তুষ্টি; আল্লাহতায়ালা নিজ বান্দাদের (কার্যকলাপের) ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। ’ -সূরা আল ইমরান: ১৪-১৫

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৯ ঘন্টা, মে ০২, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।