ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

নেপালের প্রথম মুসলিম নারী আইনজীবীর সাফল্য

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৬
নেপালের প্রথম মুসলিম নারী আইনজীবীর সাফল্য নেপালের প্রথম মুসলিম আইনজীবী মোহনা আনসারি

নেপালকে বলা হয় হিমালয়ের কন্যা। কেবলমাত্র হিমালয়ের কল্যাণেই নেপালের মত ক্ষুদ্র রাষ্ট্রও হয়ে উঠেছে সমস্ত বিশ্বের পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান।

মূলত হিমালয়কে ঘিরেই গড়ে উঠেছে নেপালের সমস্ত নিসর্গ। বেশ ছোট আয়তনের দক্ষিণ এশীয় দেশ নেপালের ভূমিরূপ অত্যন্ত বিচিত্র। নেপাল এবং চীনের সীমান্ত জুড়ে যে অঞ্চল সেখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১০টি পর্বতের ৮টিই অবস্থিত। এখানেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট অবস্থিত।

নেপাল নামটির সঠিক উৎপত্তি সম্বন্ধে জানা যায়নি, তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় মত অনুসারে নেপাল নামটি দু’টি শব্দ নে এবং পাল থেকে এসেছে যাদের অর্থ যথাক্রমে পবিত্র এবং গুহা। ফলে নেপাল শব্দের অর্থ দাঁড়াচ্ছে পবিত্র গুহা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নেপালের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলেও জনসংখ্যার দিক দিয়ে মুসলমানদের অবস্থান তৃতীয়। নেপালের মোট জনসংখ্যার ৪.২ ভাগ মুসলমান। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়ই তাদের বসবাস রয়েছে।

নেপালের ইতিহাস থেকে জানা যায়, হিজরি পঞ্চম শতকে আরব দেশ থেকে বাণিজ্য কাফেলার আগমনের মধ্য দিয়ে হিমালয় কন্যা নেপালে মুসলমানদের আগমন ঘটে। বর্তমানে নেপালে ৩৪৩টি মসজিদ রয়েছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি মাদরাসা।

নেপালী ভাষায় ইসলাম ধর্মের তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো বই নেই। নেই পবিত্র কোরআনের তাফসির ও হাদিস গ্রন্থ। ফলে ইসলাম শিক্ষা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত নেপালের মুসলিমরা। সম্প্রতি মুসলমানদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন নেপালী ভাষায় ভারত থেকে কোরআনের অনুবাদ প্রকাশ করেছে। নেপালের মুসলমানদের মাঝে শিক্ষার হার প্রায় মাত্র শতাংশের মতো‍। এমনকি নেপালের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো মুসলিম শিক্ষক।

নেপালের মুসলমানদের এ সব সমস্যা সত্ত্বেও একটি উজ্জল ভবিষ্যতের আশা রয়েছে। আর সেই আশায় পাল তুলেছে মোহনা আনসারি। মোহনা আনসারি এক মুসলিম নারী। তিনি নেপালের প্রথম মুসলিম আইনজীবী। সম্প্রতি তিনি নিয়োগ পেয়েছেন নেপালের মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হিসেবে।

মোহনাই প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে এই প্রথম নেপাল সরকারের এত উচ্চ পদে নিয়োগ পেলেন। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে তাকে প্রধানমন্ত্রীর অফিস নেপালের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে।

দক্ষিণের শহর নেপালগুঞ্জের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা এই আইনজীবী বলেন, এ পদে নিয়োগের প্রস্তাব শুনে আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। ৩৯ বছর বয়সী এই নারী কাঠমান্ডু শহরের এক হোটেলের লবিতে বসে মৃদু স্বরে বললেন, ‘এসবই কঠোর পরিশ্রমের ফল। ’

দশক জুড়ে চলা মাওবাদিদের বিদ্রোহের ফলে ২০০৬ সালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও মোহনার উত্থান নেপালে পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী। ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিশনের একমাত্র নারী সদস্য ও প্রধান হিসেবে তার দায়িত্ব হচ্ছে- নিরাপত্তা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ। আনসারি বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা খুবই কঠিন কাজ। ’

সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় আনসারি জানান, তাকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখানো হয়। তবে এতে দমে যাওয়ার পাত্রী নন তিনি। মুসলমানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ব্যাপারে ইতিবাচক স্বপ্নই দেখে নেপালের এই মানবাধিকার কর্মী।

আনসারি নেপালে নারীদের জন্য সরকারি চাকুরিতে কোটা সংরক্ষণের নতুন আইনকে সমর্থন করেন এবং আশা করেন এতে মুসলিম নারীরাও উপকৃত হবে। নেপাল আগে সাংবিধানকিভাবে হিন্দু রাষ্ট্র থাকলেও এখন এটি ধর্মনিরপেক্ষ।

নেপালের নতুন সংবিধানে প্রথমবারের মতো মুসলমানদের কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দেশটির সরকারি চাকরির এক শতাংশ মুসলমানদের জন্য বরাদ্দ থাকবে।

-আল জাজিরা অবলম্বনে

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।