নৈতিক মূল্যবোধহীনতা যাদের মাঝে বিদ্যমান, তারা নানাবিধ মন্দ কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। এ জন্য পারিবারিক শিক্ষার ঘাটতি রয়েছে বলে সমাজ সচেতনরা মনে করছেন।
একটা সময় ছিল যখন বাচ্চারা তাদের দাদা-দাদী, নানা-নানী বা চাচা-মামাদের কাছে যেত। নানা রকম গল্প শোনত, আদর্শ গঠনের নানা উপদেশ তাদের কাছ থেকে পেত। কিন্তু বর্তমানে বাচ্চারা সেই ধরনের কোনো পরিবেশ পায় না। ফলে তারা পারিবারিক মমত্ববোধ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন কী জিনিস সেটা জানতে পারে না। নৈতিক চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে হলো- ধর্মীয় মূল্যবোধ। সেটা থেকেও তারা বঞ্চিত থাকে।
আমরা যে মূল্যবোধের কথা বলছি, এর মূল উৎস কিন্তু ধর্ম। ধর্মের মধ্যেই জীবনাচারণের সব আদর্শিক বিষয়গুলো উল্লেখ আছে। আর সেই ধর্মীয় চর্চার মধ্যেই জীবনের উৎকর্ষ সাধন করা সম্ভব। ধর্মচর্চার মাধ্যমে ভুল এবং সঠিক বিষয়টি জানা যায়। ধর্মীয় বিধিবিধানে এসবের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে মানুষ বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্ম অনেক দূরে। সমাজে ধর্মচর্চার প্রবণতা কম, ফলে ন্যায়বোধ সমাজ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
যারা ন্যায়বোধকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, তাদের দ্বারা সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়; হতে পারে না। মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জন্যে ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে যে ন্যায়বোধের কথা বলা হয়েছে, সেটিই কিন্তু সবচেয়ে বড় শক্তি। অর্থাৎ ধর্মচর্চা যদি দুর্বল হয়, তাহলে সেই ন্যায়বোধও দুর্বল হয়ে পড়বে। তখন সেটা সমাজে কিংবা ব্যক্তিজীবনে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তবে হ্যাঁ, কারও কারও ক্ষেত্রে ধর্ম ছাড়াও হয়তো ন্যায়বোধ শক্তিশালী হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ধর্মই সবচেয়ে বড় বিষয়। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
অনেকে হয়তো বলবেন- তাহলে সামাজিক অবক্ষয় এবং নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় থেকে মুক্তির উপায় কি? আসলে অনেক জিনিসের সমাধান পুরোপুরি দেওয়া যায় না। এসব ক্ষেত্রে উদ্ভুত বিষয়গুলো কেবল কিছুটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা যেতে পারে। এমতাবস্থায় সামাজিক অবক্ষয় কিংবা নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয়রোধের জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগী ভূমিকা হতে হয়। এখানে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
প্রথমে পরিবার থেকে সন্তানদের ধর্মচর্চা, ধর্মীয় বিধি-বিধান ও নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। এরপর স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার মাধ্যমে এসব বিষয়কে তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। এছাড়া সমাজে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে- সৎ কাজের জন্য প্রশংসা আর মন্দ কাজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে।
সমাজে যদি অন্যায় করে কেউ পার পেয়ে যায়, তাহলে অন্যরাও তাতে উদ্বুদ্ধ হয়। বর্তমান সমাজে দেখা যাচ্ছে, অন্যায় করে অনেকেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। ক্ষেত্রবিশেষ অন্যায়কারীরা সমাজের বড় বড় স্তরে বসে আছেন। এখন ওই সব পদে বসে অন্যায়কারীরাই যখন নীতির কথা বলে; তখন তার কথা তো আর কার্যকর হতে পারে না।
অবস্থা এমন হয়েছে যে, সমাজে অন্যায়কারীরা তিরস্কারের পরিবর্তে পুরস্কৃত হচ্ছে। আর যারা ন্যায়ের পথে চলছে তারা সমস্যায় পড়ছে। কাজেই পলিসিগতভাবে সমাজ বলি, রাষ্ট্র বলি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বলি- সর্বত্র একটা বিষয়ে স্পষ্টভাবে দেখতে হবে যে- অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্যদিকে যারা ভালো কাজ করবে, তাদের ভালো কাজের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। ছোটদের সামনে এ বিষয়টি খুব ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে। তা না হলে তো শিশুরা ভালো মন্দের ব্যবধানটা বুঝতে পারবে না। আর সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের মূল কথা কিন্তু ভালো এবং মন্দের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে শেখা এবং ভালো কাজ করতে শেখা।
যখন সমাজের মানুষ দেখবে ভালো কাজ করলে পুরস্কৃত হওয়া যায়, তখন তারা ভালো কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। আর মন্দ কাজ করলে তিরস্কৃত হতে হয়, শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়; তখন তারা মন্দ কাজ ছেড়ে দেবে।
এক কথায়, পারিবারিক বন্ধকে দৃঢ় করার পাশাপাশি ধর্মচর্চার মাধ্যমে সামাজিক অবকাঠামোকে নৈতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৭
এমএইউ/