পৃথিবীতে সুশৃঙ্খল ও আরামদায়কভাবে জীবন যাপনের জন্য আমাদেরকে দিয়েছেন অজস্র নেয়ামত সম্ভার। আর তারই ছোট্ট একটি দৃষ্টান্ত হলো- আজকের আধুনিক যানবাহন ব্যবস্থাপনা।
বর্তমান সময়ে যানবাহন আমাদের জীবনের অপরিহার্য একটি অংশ। এটি সমাজ ও জীবনে এমনভাবে মিশে গেছে, যার কোনো বিকল্প নেই। জীবন ধারণের অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আধুনিক মানব সভ্যতার একটি অপরিহার্য অংশ যানবাহন ব্যবস্থাপনা, এটা ঐতিহ্যেরও অংশ বটে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে এর ব্যাপক প্রভাব আজ প্রমাণিত সত্য।
যানবাহন যোগাযোগ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক করণের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে অনেকাংশে সহজ করে দিয়েছে। দিন দিন বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন। তবে এ কথাও ঠিক যে, যতই প্রযুক্তির ব্যবহার ও এর পরিধি বাড়ছে ততোই এর সঙ্গে মানুষের জীবনের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে পরিবার হারাচ্ছে তার বেঁচে থাকার অবলম্বন, আমরা হারাচ্ছি প্রিয় মানুষ, দেশ হারাচ্ছে মেধা ও সম্পদকে।
এক জরিপে প্রকাশ, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৫৫ জন মানুষ মারা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন মতে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে মারা যায় ২০ হাজার ২৩ জনের মতো।
এভাবেই বেড়ে চলেছে প্রতিদিন সড়ক কিংবা মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল। বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনা ও এতদসংক্রান্ত নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ।
তাই পৃথিবীর দেশে দেশে গড়ে ওঠেছে যানবাহন ও এতদসংক্রান্ত বিভাগ ও বিধিবিধান। গড়ে উঠেছে যানবাহন চালক বা ড্রাইভারের শিক্ষা, যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও পেশাদারিত্ব বিবেচনায় সহায়ক, শক্তিশালী, উত্তম ও কার্যকর বিধানাবলী। আর এর একটিই উদ্দেশ্য তাহলো, গণমানুষের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা।
আমাদের বাংলাদেশেও সড়ক জনপদ, যানবাহন ও ট্রাফিক আইন রয়েছে। যদিও তা বাস্তবতার বিবেচনায় যথেষ্ট স্বচ্ছ ও পর্যাপ্ত নয়। বলা চলে, আইনে যা আছে অনেকাংশেই বাস্তবিকভাবে তার কোনো কার্যকর বাস্তবায়ন নেই। যা দুঃখজনক বিষয়।
পবিত্র ধর্ম ইসলামে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সব স্তরের মানুষের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তার বিধান নিশ্চিত করা হয়েছে। এ জন্য ইসলাম প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও বিধিবিধানও প্রণয়ন করেছে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন অজ্ঞ ও জাহেলরা তাদেরকে ( অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করে তখন তারা বলে সালাম। ’ –সূরা আল ফোরকান: ৬৩
কোরআনে কারিমের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনই ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না বরং উচ্চতায় কখনই পর্বতসম হতে পারবে না; এগুলোর মধ্যে যা মন্দ তা তোমার পালনকর্তার নিকট ঘৃণ্য। ’ –সূরা বনি ইসরাঈল: ৩৭-৩৮
হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘... তোমরা রাস্তার হক আদায় করো। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, রাস্তার হক কী ইয়া রাসূলাল্লাহ? তিনি বললেন, দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা, সালামের উত্তর প্রদান, সৎকর্মের আদেশ ও অসৎকর্মের নিষেধ করা। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যি এক হাদিসে বলেন, ‘মুসলমানদের কোনো পথে বা কোনো বাজারে যদি কেউ কোনো জন্তু দাঁড় করিয়ে রাখে এরপর জন্তুটি যদি সামনের বা পেছনের পা দিয়ে কোনো কিছু মাড়ায় তাহলে মালিক ক্ষতিপূরণ দেবে। ’ -আদদারু কুতনি
তবে হাদিসটি দুর্বল। তথাপিও হাদিসটি এ সংক্রান্ত ইসলামের নীতিমালাকে সমর্থন করে।
লেখক: এমফিল গবেষক, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭
এমএইউ/